Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নোটের আকালে লাগাম এখন রেসের ঘোড়াতেও

টাকা এখানে ওড়ে। নগদে। কার্ড, চেকের কোনও জায়গা নেই। টাকা ওড়ান রিকশাচালক, চা বিক্রেতা, টাকা ওড়ান কোটিপতি ব্যবসায়ীও। কেউ আসেন লোভে, কেউ শখে, কেউ আবার নেশায়। কলকাতার রেসের মাঠ— যার টানে ‘রেসুড়ে’দের সব হারানোর গল্প এ শহরে মিথ।

দীক্ষা ভুঁইয়া
জগং শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৫৫
Share: Save:

টাকা এখানে ওড়ে। নগদে। কার্ড, চেকের কোনও জায়গা নেই।

টাকা ওড়ান রিকশাচালক, চা বিক্রেতা, টাকা ওড়ান কোটিপতি ব্যবসায়ীও। কেউ আসেন লোভে, কেউ শখে, কেউ আবার নেশায়। কলকাতার রেসের মাঠ— যার টানে ‘রেসুড়ে’দের সব হারানোর গল্প এ শহরে মিথ।

কিন্তু পুরনো ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বাতিল ঘোষণার পরে ‘রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব’-এ কার্যত ‘খেল্ বন্ধ’। দেখা নেই রেসের মাঠের লাইসেন্সপ্রাপ্ত ‘বুকমেকার’ বা ‘বুকি’-দের। কমে গিয়েছে ক্লাবের কাউন্টারে বাজি ধরার টাকার অঙ্কও। এই ক্লাবের কাউন্টারে বসা কর্মচারীদের একাংশ স্বীকার করে নিয়েছেন, গত কয়েক দিনে কমেছে রেসে টাকা লাগানোর পরিমাণ। কমেছে লোকের মাঠে আসা।

গরমের জন্য এপ্রিল-মে মাস বাদ দিলে এখানকার ‘রেসকোর্সে’ সারা বছরই সপ্তাহে দু’দিন করে ‘কলকাতা’ শহরের রেস হয়। বাকি দিনগুলিতেও অনলাইনে অন্য শহরের রেসের বাজি ধরা যায় মাঠের কাউন্টার থেকে। ভিড় হয় রোজই। বুকিরাই রোজের সেই খেলায় রং আনেন। তাঁদের হাতেই টাকা বাড়ে। ওড়ে। পুরোটাই নগদে। এ খেলা যতই আইনসম্মত হোক না কেন, রেসের মাঠে কার্ড বা চেক নিয়ে আসার কথা কেউই ভাবেননি কখনও। ফলে ৮ নভেম্বর পুরনো টাকা বাতিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রেসের মাঠে ভাটার টান। মাথায় হাত বুকিদেরও।

শীত শুরুর শহরে এই খেলার মেজাজটা আরও জাঁকিয়ে বসার কথা। কিন্তু, শীতের শুরুতেই কোপ। শনিবারে কলকাতার রেসের মাঠ জানিয়ে দিল, মাঠ ফাঁকাই। দেখা নেই রেস-প্রেমীদের। এ দিন বেঙ্গালুরুর খেলা ছিল। ছিল কলকাতার রেসও। তবু কোথাও যেন ছন্দপতন। রেসের মাঠে হাজির ক্লাবেরই এক কর্মচারী জানান, এই মাঠে বসেই বাজি ধরা যায় হায়দরাবাদ, মুম্বই, মহীশূর, দিল্লি ও চেন্নাইয়ের মতো অন্য শহরের খেলার জন্যও। আবার কোনও দিন শুধু কলকাতার রেসই চলে। বুকি-র মাধ্যমে উৎসাহী কেউ কেউ প্রতিটি রেসেই বাজি ধরেন। কেউ আবার একটি রেসেই একাধিক ঘোড়ার উপরে বাজি ধরেন।

বুকি-র মাধ্যমে খেলা হলে এক-একটি রেসে একটি ঘোড়ার উপরেই বাজি ওঠে লক্ষ লক্ষ টাকা। এই টাকা নগদে ওড়ে। যাঁরা নিয়মিত রেসের মাঠে যাতায়াত করেন, ঘোড়ায় ঘোড়ায় বড় অঙ্কের বাজি ধরেন, তাঁদের পছন্দ তাই বুকি-রাই। কারণ, বড় অঙ্কের বাজি ধরতে গেলে বুকি-রাই তো ভরসা। জানা গিয়েছে, বুকি-দের মারফতে বাজি ধরলে, সেখানে লাভও বেশি। কিন্তু নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্তের পরেই বুকি-দের মারফত সেই বাজি ধরাই বন্ধ।

তবুও, নেশাড়ুরা মাঠে আসছেন। নেশায় নেশায় কম টাকা দিয়ে কাউন্টার থেকে বাজি ধরছেন। যেমন, শনিবারই মহম্মদ আলম নামে খিদিরপুরের এক বাসিন্দা জানান রেসের মাঠে তাঁর রোজই আনাগোনা। অন্যদিন বুকি মারফত বাজি ধরেন। এ দিন সরাসরি কাউন্টারে। কলকাতার সাতটি রেসেই বাজি ধরলেন ১০০-২০০ করে টাকা। পাঁচটি রেসের তিনটেতে হারার পরও তিনি খুশি। কারণ লাভ হয়েছে ১৩০০ টাকা। তাঁর কথায়, ‘‘জুয়া খেলাটাই তো আসল।’’

ক্লাবের এক কর্তা জানান, আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে আবার বুকি-দের মাধ্যমে খেলা শুরু হতে চলেছে! বুকিদের আশা, সে দিন থেকে উড়তে শুরু করবে নতুন নোট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetization Race course
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE