শহরের পরিবহণ মানচিত্রে ট্রামের যাত্রাপথ কোণঠাসা হচ্ছিলই। এ বার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল ট্রামের ইতিহাস গুঁড়িয়ে দেওয়ার। এর প্রতিবাদে এবং শহরের গণপরিবহণের ইতিহাস নিয়ে জাদুঘর তৈরির দাবিতে রবিবার কালীঘাট ট্রাম ডিপোর সামনে বিক্ষোভ দেখালেন ট্রামপ্রেমীরা। তাতে শামিল হয়েছিল স্কুল পড়ুয়ারাও।
সারা দেশের মধ্যে যে শহরে ট্রামের প্রথম আত্মপ্রকাশ, সেখানেই তাকে নিয়ে এখন টানাপড়েনের অন্ত নেই। শহরের রাস্তায় যানবাহনের গতি বাড়ানোর নামে কয়েক দশক ধরে ট্রামের পথ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়েছে। সম্প্রতি একাধিক উড়ালপুলের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছড়াতেই আরও কোণঠাসা হয়েছে ট্রাম। সেতুতে ওঠার পথ রুদ্ধ হতেই পরিবহণ মানচিত্র থেকে একের পর এক ডিপো বিচ্ছিন্ন হতে বসেছে। ট্রামপ্রেমীদের অভিযোগ, ডিপোয় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে অসংখ্য অব্যবহৃত ট্রাম। এমনকি, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার আগে তৈরি কাঠের ট্রামগুলি ভেঙে বাতিল সামগ্রী হিসেবে বিক্রি করার অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। সত্তর-আশি বছরের পুরনো ওই সব কাঠের ট্রাম সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন ‘কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এবং ‘কলকাতা বাস-ও-পিডিয়া’ নামে দু’টি সংগঠনের সদস্যেরা। এ দিন প্রতিবাদে পথে নামেন তাঁরা।
কলকাতায় ট্রামের ইতিহাস প্রায় ১৪৭ বছরের। ১৮৭৩ সালে এ শহরে প্রথম ঘোড়ায় টানা ট্রাম ছুটেছিল শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাটের মধ্যে। ওই সময় থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে এই শহরে চলছে ট্রাম। যুদ্ধ, দাঙ্গা, মন্বন্তর পেরিয়ে আসা ট্রামের বিবর্তনের ইতিহাস বর্ণময়। শুরুর দিন থেকে বিভিন্ন সময়ে কলকাতায় যে সব ট্রাম চলেছে, ইংরেজি বর্ণমালার ‘এ’ থেকে ‘এল’ পর্যন্ত তার বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। এখন এই শহরের ডিপোগুলিতে ব্রিটিশ আমলের ‘কে’ এবং স্বাধীনতার পর পর তৈরি হওয়া ‘এল’ শ্রেণির ট্রাম রয়েছে। যার অধিকাংশই অব্যবহৃত।
ট্রামপ্রেমী সংগঠনের অভিযোগ, কাঠের তৈরি ওই দু’টি শ্রেণির বিরল ট্রাম সংরক্ষণ না করে সেগুলিকে বাতিল হিসেবে জলের দরে কাটাই করা হচ্ছে। এ দিন ট্রামপ্রেমী সংগঠনের অন্যতম সংগঠক দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “ট্রামকে কোণঠাসা আগেই করা হয়েছিল। এ বার নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হচ্ছে।”
শহরের পরিবহণ ইতিহাসের অন্যতম সংগ্রাহক শৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাই, কলকাতার গণপরিবহণের ইতিহাস তুলে ধরার জন্য মিউজ়িয়াম গড়ে তোলা হোক। সেখানে এই সব কাঠের ট্রাম সংরক্ষণ করা হোক।” কলকাতা বাস--ও-পিডিয়ার সংগঠক অনিকেত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাম ঔপনিবেশিক সময়ের পরিবহণ। এই ইতিহাসের স্মারককে রক্ষা করা জরুরি।” এ দিন ঘণ্টা দুয়েক কালীঘাট ট্রাম ডিপোর সামনে বিক্ষোভের শেষে তাঁরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তবে, পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা এই বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। এক আধিকারিক বলেন, “ট্রাম সংরক্ষণের জন্য সরকার যথেষ্ট তৎপর। কিন্তু ট্রাম ব্যাপক হারে রাস্তায় চালানোর অসুবিধাও রয়েছে। সেটা মানুষকে বুঝতে হবে।”