Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-যুদ্ধে এলাকায় প্রচার আক্রান্তের স্ত্রীর

ভর্তি হওয়ার চার দিন পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সঞ্জয়ের বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা না হলে ডান চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত নভেম্বরে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করে নকল চোখ বসানো হয়।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৪২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ডেঙ্গি সংক্রমণে গত বছর বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন স্বামী। তাই ডেঙ্গি রুখতে বদ্ধপরিকর তাঁর স্ত্রী। এ বছর তাই এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচারের কাজ করছেন দক্ষিণ দমদমের গড়ুইয়ের বাসিন্দা সঞ্জয় করের স্ত্রী গীতা কর।

গত বছর ১১ অক্টোবর পেশায় গাড়িচালক সঞ্জয়ের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। এর পরে চিকিৎসার জন্য আরজি কর হাসপাতালে গেলেও তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ সঞ্জয়ের। কারণ, প্লেটলেট ছিল এক লক্ষ ৬২ হাজার। বাড়ি ফিরে জ্বর একটু কমেছিল। কিন্তু ১৫ অক্টোবর সকালে টিভি দেখার সময় আচমকাই বাঁ চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন সঞ্জয়। সঙ্গে তীব্র মাথার যন্ত্রণা, বমি। ফের সঞ্জয়কে নিয়ে আরজি করে ছোটেন পরিজনেরা।

কিন্তু তত ক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ভর্তি হওয়ার চার দিন পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, সঞ্জয়ের বাঁ চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার করা না হলে ডান চোখও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত নভেম্বরে বাঁ চোখে অস্ত্রোপচার করে নকল চোখ বসানো হয়। ডেঙ্গি সংক্রমণের জেরে রেটিনায় রক্তক্ষরণের কথা আরজি করের ‘ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে’ লেখাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন গীতা।

স্বামীকে নিয়ে হাসপাতালের দৌড়ঝাঁপ শেষে গত জানুয়ারি থেকে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষক দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন গীতা। পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাঁঠালতলা, সবুজ সরণি এলাকায় তিনি কাজ করেন। কোনও বাড়িতে পাত্রে জল জমিয়ে রাখলে গৃহস্থকে সতর্ক করছেন, আবার কোথাও বাড়ির আশপাশে আগাছার জঙ্গল থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কারের পরামর্শ দিচ্ছেন। সমীক্ষক দলের কর্মী হিসাবে গীতা কেন এই কাজ করছেন, তা-ও জানতে চান অনেকেই। তখন ডেঙ্গি সংক্রমণে সঞ্জয় কী ভাবে বাঁ চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, সেই কথা প্রশ্নকর্তাকে জানান গীতার সহকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে গীতা বলেন, ‘‘সমীক্ষক দলে কাজ করার পিছনে অর্থের টানাটানি একটা কারণ। কিন্তু ডেঙ্গি সংক্রমণ কতখানি মারাত্মক, তা আমার চেয়ে ভাল কে বুঝবে! তাই পরিচিত এক জন এই কাজের কথা বললে রাজি হয়ে যাই। নিজের পরিবারের উদাহরণ দিয়ে অন্যদের বোঝাই, সচেতন না হলে তার পরিণাম কী হতে পারে।’’

সঞ্জয়ের চোখের চিকিৎসার খরচের জোগান দিতে গিয়ে ধারদেনা হয়েছে প্রচুর। সঞ্জয় বলেন, ‘‘গাড়ি তো আর চালাতে পারব না। সাউথ সিঁথি রোডে একটা ছোট ভাতের হোটেল খুলেছি। কিন্তু সংসার, মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। ধারদেনাও শোধ করতে হবে। স্ত্রী ডেঙ্গি সচেতনতা প্রচারে কাজ পেয়েছে শুনে ভাল লাগে। এতে কারও উপকার হলে ক্ষতি কী!’’

স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর জগন্নাথ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গির বাড়ি বাড়ি সমীক্ষক দলে একজন কর্মীর দরকার ছিল। খবর পেয়ে সঞ্জয়বাবুর স্ত্রী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কাজটা ওঁকে দিতে পেরে আমি খুশি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy