Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Death

ভর্তি করাতে পারল না পুলিশও, ফুটপাতেই মৃত্যু

শনিবার সকালের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গড়িয়াহাটের ফুটপাতে। ঘটনাস্থল গড়িয়াহাট থানার অন্তর্গত।

 মর্মান্তিক: হুইলচেয়ারে সুনীল দাসের দেহ। শনিবার, গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মর্মান্তিক: হুইলচেয়ারে সুনীল দাসের দেহ। শনিবার, গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২০ ০১:৪৬
Share: Save:

দু’দিন ধরে চার হাসপাতাল ঘুরেও গাড়ির ধাক্কায় আহত এক ফুটপাতবাসীর জন্য পুলিশ শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেনি বলে অভিযোগ। সব হাসপাতাল থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসার পরে আহতকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। শেষে উপায় না দেখে আহতকে ফুটপাতে রাখতে একটি হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা করে দেয় পুলিশই। সেই হুইলচেয়ারে বসেই মারা গেলেন ওই ফুটপাতবাসী!

শনিবার সকালের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় গড়িয়াহাটের ফুটপাতে। ঘটনাস্থল গড়িয়াহাট থানার অন্তর্গত। ওই থানায় কর্তব্যরত এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “এ দিনও ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর একটা চেষ্টা করব ভেবেছিলাম আমরা। কিন্তু তার আগেই সকালে থানায় ফোন এল, উনি মারাই গিয়েছেন।” এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে, ফুটপাতের এক দিকে পড়ে রয়েছে হুইলচেয়ারটি। তাতেই বাঁ দিকে ঘাড় এলিয়ে পড়ে মৃতদেহ। মুখ রুমালে ঢাকা। বাঁ পায়ে প্লাস্টার। সামনের দিকে যাতে পড়ে না যান, তার জন্য হুইলচেয়ারের দুই হাতলের মধ্যে লাগানো হয়েছে দড়ি।

গড়িয়াহাট থানা সূত্রের খবর, মৃতের নাম সুনীল দাস (৬০)। তিনি গড়িয়াহাট এলাকার ফুটপাতেই থাকতেন। ভিক্ষা করে দিন চলত। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ গড়িয়াহাট মোড়ের কাছে একটি ট্যাক্সি তাঁকে ধাক্কা মেরে চম্পট দেয়। পুলিশ সুনীলবাবুকে উদ্ধার করে এলাকারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। যদিও সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান তদন্তকারীরা। ফুটপাতে তিনি যেখানে থাকতেন, সেখানেই এর পরে আহতকে রেখে দিয়ে যায় পুলিশ। ওই দিনই এই ঘটনায় একটি পথ দুর্ঘটনার মামলা রুজু করে গড়িয়াহাট থানা। যদিও ট্যাক্সিচালককে ধরা যায়নি।

শুক্রবার তাঁর অবস্থার অবনতি হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ সুনীলবাবুকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেটি করোনা হাসপাতাল হওয়ায় সেখানে অন্য রোগীদের চিকিৎসায় ঝুঁকি রয়েছে জানিয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে বলা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ সুনীলবাবুকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিএনএমসি) নিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, ওই হাসপাতাল জানিয়ে দেয়, তাদের শয্যা ফাঁকা নেই।

ওই দিন কর্তব্যরত গড়িয়াহাট থানার এক পুলিশকর্মী বললেন, “ন্যাশনাল মেডিক্যালে অনেক অনুরোধ করেও ভর্তি করানো যায়নি। তবে সেখানে সুনীলবাবুর কিছু শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকেরা ‘ট্রিটেড অ্যান্ড ডিসচার্জড’ সার্টিফিকেট লিখে ছেড়ে দেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘চিকিৎসকেরা ওই সার্টিফিকেট দিলেও কোনও দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রাথমিক ভাবে পুলিশের কিছু বলার থাকে না। এই ঘটনাতেও তা-ই হয়েছে। পরে ময়না-তদন্তে যদি প্রমাণ হয়, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করেই কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, তা হলে হাসপাতালে ওই দিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।”

এই করোনা পরিস্থিতিতে একাধিক ক্ষেত্রে জরুরি চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। গাড়ির ধাক্কায় আহত ব্যক্তিকে পুলিশের তরফেই হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পারার ঘটনা সেই অভিযোগের তালিকা আরও দীর্ঘ করল বলেই অনেকের মত। স্বাস্থ্য দফতরের কেউই অবশ্য এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অজয়কুমার রায় কথা বলেননি। ফোন ধরেননি বা মেসেজের উত্তর দেননি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই বয়সের কোনও রোগীকে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানোটা ঝুঁকির হয়ে যেত। তাই তাঁকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলা হয়। গড়িয়াহাট থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক অবশ্য বলেছেন, “লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের ফেটাল স্কোয়াড ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে। গাফিলতি প্রমাণ হলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Footpath Hospital Police Gariahat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE