Advertisement
E-Paper

মজুত করা রেমডেসিভিয়ার ফাঁকা করতে মরিয়া

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রাজ্যে হানা দিতেই এপ্রিল থেকে রেমডেসিভিয়ারের চূড়ান্ত আকাল এবং আকাশছোঁয়া চাহিদা দেখা দেয়।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৫:১২

প্রতীকী চিত্র।

গত এক সপ্তাহে হ্রাস পেয়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। স্বস্তির এই খবর যদিও ঘুম কেড়েছে করোনায় ব্যবহৃত ওষুধ রেমডেসিভিয়ারের স্টকিস্ট ও ডিস্ট্রিবিউটরদের! কারণ, তাঁদের ঘরে পড়ে থাকা এই জরুরি ওষুধ আর বিক্রি হচ্ছে না। ইচ্ছেমতো দর হাঁকতে না-পারায় সময় খারাপ যাচ্ছে ওষুধের কালোবাজারিদেরও।

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রাজ্যে হানা দিতেই এপ্রিল থেকে রেমডেসিভিয়ারের চূড়ান্ত আকাল এবং আকাশছোঁয়া চাহিদা দেখা দেয়। শুরু হয় এর কালোবাজারি। বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ড্রাগ কন্ট্রোলে ধর্না দিয়েও ওষুধ জোগাড়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল অনেককে। লক্ষ লক্ষ টাকায় পিছনের দরজা দিয়ে ওই ওষুধ বিক্রি হতে থাকে। সুযোগ বুঝে স্টকিস্ট, ডিস্ট্রিবিউটর ও বিক্রেতারা রেমডেসিভিয়ার সঞ্চয় করতে শুরু করেন। কিন্তু জুনে এর চাহিদা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের সহকারী অধিকর্তা সুকুমার দাসও বলছেন, “অবশেষে আকাল কেটে গিয়ে রেমডেসিভিয়ারের এখন পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে।’’

মাসখানেক আগের চিত্র উল্টে গিয়ে ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটর ও ব্যবসায়ীরা বরং রেমডেসিভিয়ার বিক্রি করতে এখন হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরছেন। এক সময়ে কালোবাজারিরা প্রতিটি ওষুধ ১৫-১৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন তা তিন হাজার টাকায় অর্থাৎ, নির্দিষ্ট দামেই বিক্রি করতে সাধ্যসাধনা করছেন তাঁরা। অনেক স্টকিস্ট আবার ক্রেতার বাড়ি বয়ে রেমডেসিভিয়ার পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাবও দিচ্ছেন।

স্বাস্থ্য দফতর ও রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলের বিধিনিষেধ ভেঙে ইন্টারনেটে ক্লিক করলেই রেমডেসিভিয়ারের ব্যবসায়ী, স্টকিস্ট এবং ডিস্ট্রিবিউটরদের ফোন নম্বর দেখা যাচ্ছে। অথচ, সরকারি নির্দেশ, ড্রাগ কন্ট্রোলের অনুমোদন ছাড়া এই ওষুধ বিক্রি করা যায় না। এবং বিক্রি করতে হয় শুধু হাসপাতালকেই।

ক্রেতা সেজে কয়েকটি নম্বরে ফোন করতেই নিয়ম ভাঙার অসংখ্য প্রমাণ মিলল শুক্রবার। যেমন, পূর্ব মেদিনীপুরের এক স্টকিস্ট জানালেন, তাঁদের রেমডেসিভিয়ারের স্টক পয়েন্ট তমলুকের কাছে বুড়াড়িতে প্রেসক্রিপশন ও আধার কার্ড নিয়ে আসতে হবে। প্রতিটির দাম নেবেন ৩৪৫০ টাকা। পশ্চিম পুঁটিয়ারির এক স্টকিস্ট জানালেন, তাঁরা ছ’টি রেমডেসিভিয়ার ২৫ হাজার টাকা নেবেন। বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিয়ে যাবেন। শহরের নামী এক স্টকিস্ট বলেন, ‘‘এক-একটি ১৫০০ টাকায় ছেড়ে দেব। অথচ এপ্রিল-মে নাগাদ অনেক হাসপাতাল আমাদের থেকে ২৭০০ টাকায় একটি রেমডেসিভিয়ার কিনে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে।”

এ সব শুনে কিছু প্রশ্ন উঠছেই। স্টকিস্ট, ডিস্ট্রিবিউটর ও ওষুধের দোকান সরাসরি ক্রেতাদের যে এই ওষুধ বিক্রি করছে, সেটা কি ড্রাগ কন্ট্রোল জানে না? না জানলে কেন জানে না?

যদিও সব শুনে বিস্মিত ড্রাগ কন্ট্রোলের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, “কিছুই জানি না তো। আপনারা জানলে বরং আমাদের বলুন।”

নজরদারির এমন ফাঁক গলে যত দিন না রেমডেসিভিয়ার বিক্রি বন্ধ হবে, তত দিন এক শ্রেণির অসাধু চিকিৎসক এবং হাসপাতাল প্রয়োজন ছাড়াও যথেচ্ছ ভাবে এই ওষুধ রোগীদের কিনতে বাধ্য করবেন বলে দাবি। যেমন অভিযোগ, দিন কয়েক আগেই পূর্ব মেদিনীপুরের একটি হাসপাতালের এক চিকিৎসক ড্রাগ কন্ট্রোলের নির্দেশ ছাড়াই কলকাতার এক স্টকিস্টের থেকে প্রতিটি ২২৫০ টাকা দামে ১০০ রেমডেসিভিয়ার কিনে নিয়ে গিয়েছেন। কিসের জন্য এত পরিমাণ রেমডেসিভিয়ার কেনার প্রয়োজন হল? কে যাচাই করবে সেটা?

এই দুর্বল নজরদারি নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে অন্য দিকেও। করোনার অন্য ওষুধ টোসিলিজুমাবের আকাল কিন্তু এখনও। বেসরকারি হাসপাতাল দিনে ১০০টি টোসিলিজুমাব চাইলে ড্রাগ কন্ট্রোল ৯-১০টির বেশি অনুমোদন দিতে পারছে না। এই ইঞ্জেকশনের বাজার মূল্যও চড়া। ফলে কালোবাজারিদের হাত থেকে একে বাঁচাতে আদৌ পারবে কি ড্রাগ কন্ট্রোল?

coronavirus Black Marketing Remdesivir
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy