শিয়ালদহ আদালতে দাঁড়িয়ে আবার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের দিকে আঙুল তুললেন আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার মা। তিনি বলেন, ‘‘ওরা নির্লজ্জ।’’ সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমিও মা।’’ আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং হত্যা মামলায় শুক্রবার শিয়ালদহ আদালতে সপ্তম ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ জমা দিয়েছে সিবিআই। আরজি করের চিকিৎসক-পড়ুয়ার মা গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন আদালতে। এই মামলার পরের শুনানি ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি। ওই দিন কেস ডায়েরি নিয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে সিবিআইকে।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে আরজি করে চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। শুক্রবার আদালতে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়ে সিবিআই জানায়, ১১ জনকে জেরা করা হয়েছে। সিসিটিভি, সিডিআর ক্ষতিয়ে দেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের দিকে এর আগেও আঙুল তুলেছেন নির্যাতিতার মা। শুক্রবার আবার তিনি আদালতকক্ষে দাঁড়িয়ে সিবিআইকে ‘নির্লজ্জ’ বললেন। এর আগেও এই মামলার শুনানিতে আদালতকক্ষের বাইরে দাঁড়িয়ে তদন্তকারী অফিসারকে কটাক্ষ করেছিলেন নির্যাতিতার মা।
নির্যাতিতার বাবা বিচারকের উদ্দেশে বলেন, ‘‘একটাই আবেদন। সিবিআই অপরাধীকে বাঁচানোর জন্য যা করার, তাই করছে। ওরা বড় তদন্তকারী সংস্থা।’’ তিনি আরও জানান, হস্টেল থেকে কী পাওয়া গিয়েছে সেটা তদন্তকারী অফিসার বলুন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘এত দিন ধরে তিনি আমার ফোন ধরেন না। দিল্লিতে গিয়েছিলাম। ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি বলেন, তা হলে আমরা মামলা ছেড়ে দিছি। আমরা বলি এটা কোর্টে বলুন। তার পর তাঁরা আমাদের ডেকে বলেন, অতিরিক্ত চার্জশিট দেব।’’ বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘হস্টেলে কি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পাওয়া গিয়েছিল?’’ তার পরেই নির্যাতিতার বাবা বলেন, ‘‘মিলেছিল। এটা আমরা গোপন জবানবন্দি দিয়ে জানাব।’’
আরও পড়ুন:
নির্যাতিতার বাবা আদালতে আরও বলেন, ‘‘তদন্তকারী অফিসার (আইও) বাড়িতে এসে বলেছিলেন, মেয়েটার কপাল খারাপ! সঞ্জয় গিয়ে এই কাজ করে হত্যা করেছে।’’ নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘আমি মেয়ে হারিয়েছি। কেন আমাকে বলতে দেওয়া হবে না?’’ নির্যাতিতার মায়ের অভিযোগ, তদন্ত চলাকালীন এক সময়ে কী বলতে হবে, তা বাবাকে শিখিয়ে এনেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। তিনি আদালতে বলেন, ‘‘আমার মেয়ে সেমিনার রুমে থাকত না। কোথায় ছিল? এটা জানতে চাওয়া কি খুব বেশি কিছু? আমার মেয়ে চলে গিয়েছে। কেন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নিজের মেয়ের মুখ দেখতে হল?’’ অভিভাবকের অভিযোগ, আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার হলে চিকিৎসক-ছাত্রীর দেহ প্রথমে তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তাঁরা সেমিনার হলের ভিতরে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন।
এর পরেই কোর্টে সিবিআইয়ের দিকে আঙুল তুলে নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘এরা একেবারে নির্লজ্জ।’’ বিচারক নির্যাতিতার বাবা-মাকে শান্ত ভাবে আদালতকক্ষের বাইরে যেতে বলেন। বাইরে গিয়ে কিছু করতেও নিষেধ করেন। কিছু ক্ষণ পরে তদন্তকারী অফিসার আদালতকক্ষের বাইরে এসে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমিও মা।’’