Advertisement
E-Paper

ধর্মের ‘জুজু’, পুণ্যার্থীদের শিবির এ বারও সেই ময়দানে

শেষ কয়েক বছর ধরে আবার মেলার শিবির যেন বহরে বেড়েছে। ফলে মাঠের বাইরেও বেরিয়ে এসেছেন পুণ্যার্থীরা।

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪৫
দূষণ: যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা। রবিবার, বাবুঘাটে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

দূষণ: যত্রতত্র পড়ে আবর্জনা। রবিবার, বাবুঘাটে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

প্রতি বছরই হয়। এ বারেও ঘটছে।

পৌষ সংক্রান্তি আসছে। ডাকছে গঙ্গাসাগরের মেলাও। প্রতি বছরের মতোই দূর-দূরান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা এসে শিবির করতে শুরু করেছেন বাবুঘাট এবং তার সংলগ্ন বঙ্গবাসী ময়দানে। তার জেরে ওই দুই জায়গায় খোলা মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়েছে দূষণের চিত্র। কোথাও আবর্জনার স্তূপ ডাঁই হয়ে রয়েছে। কোথাও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্লাস্টিকের প্যাকেট এবং থার্মোকলের থালাবাটি। কোথাও আবার জড়ো হয়ে রয়েছে রান্নাবান্না কিংবা ঠান্ডায় আগুন পোহাতে কাঠ জ্বালানোর ছাই। দূষণের ছাপ সর্বত্রই। সমস্যার কথা স্বীকার করলেও ধর্মীয় ভাবাবেগের কারণে গঙ্গাসাগরের ওই পুণ্যার্থীদের অন্য কোথাও সরানো সম্ভব নয় বলেও স্পষ্ট করে দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।

শেষ কয়েক বছর ধরে আবার মেলার শিবির যেন বহরে বেড়েছে। ফলে মাঠের বাইরেও বেরিয়ে এসেছেন পুণ্যার্থীরা। তার জেরে অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে বাবুঘাট সংলগ্ন স্ট্র্যান্ড রোড এবং কুইনস রোডের একাংশ। এমনকি, রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশের গার্ডরেলেও জামাকাপড় শুকোচ্ছেন পুণ্যার্থীদের অনেকেই। এই বছর ৮ জানুয়ারি থেকে শিবির শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।

দূষণের জেরে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে ইদানীং সর্বত্র কথা চলছে। পরিবেশকর্মীরা বারবার সরব হচ্ছেন প্রকৃতির নিরাপত্তার স্বার্থে। তা সত্ত্বেও প্রশাসনিক স্তরে কেন এখনও এ নিয়ে হেলদোল দেখা যাচ্ছে না, তা নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে।

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শহরে বা শহরের আশপাশে এই ধরনের শিবিরের জন্য জায়গা এবং প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। গঙ্গায় স্নান করে অনেকে সাগর যাত্রা করেন। ধর্মীয় ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখেই শিবিরের জায়গা পরিবর্তন করা যাচ্ছে না। কোনও পরিকল্পনাও নেই।’’ যদিও মেয়রের দাবি, উট্রাম ঘাট থেকে গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধনের সময়েই মুখ্যমন্ত্রী পুণ্যার্থীদের আগুন জ্বালানোর প্রসঙ্গে সতর্ক করেছিলেন।

তবে তাতে যে খুব বেশি কাজ হয়নি তা বোঝা গেল পুণ্যার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পরেই। বিহারের চম্পারণের পুণ্যার্থী রামেশ্বর পণ্ডিত বলেন, ‘‘খোলা মাঠে আগুন জ্বেলে রান্না করেই খাওয়া-দাওয়া করি। রাতে ঠান্ডা কাটাতে আগুনও জ্বালাতেই হয়।’’

বাবুঘাটে সেনাবাহিনীর জমিতে তাদের অনুমতি নিয়েই রাজ্য সরকার প্রতি বছর ওই শিবিরের ব্যবস্থা করে। কলকাতা পুরসভা ছাড়াও রাজ্য সরকারের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর পুর পরিষেবা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকাঠামো তৈরি করে। পুরসভার আধিকারিকেরা জনিয়েছেন, সব মিলিয়ে এই বছর প্রায় ৭০টি শিবির রয়েছে।

বাবুঘাট ও তার সংলগ্ন এলাকায় কাঠ জ্বালানো নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন পরিবেশবিদদের একাংশ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, ভিক্টোরিয়ার মামলার সময়েই আদালতের কাছে গঙ্গাসাগর যাত্রীদের শিবির অন্যত্র সরানোর বিষয়টি বলা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের তিন কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোথাও আগুন জ্বালানো চলবে না। তবে গঙ্গাসাগরের যাত্রীদের মামলাটির এখনও শুনানি হয়নি।’’

রাজ্যের পরিবেশ তথা জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘এই এলাকা থেকে শিবির সরানোর ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা নেই। এলাকার পরিবেশ দূষণ নিয়েও নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে সামগ্রিক ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপ করার ভাবনা রয়েছে।’’

কলকাতা পুরসভার হিসেবে ওই জায়গায় প্রতিদিন ৪০ মেট্রিক টন বর্জ্য জমা হয়। জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘পরিবেশবান্ধব শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকে। শিবির প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখতে বাড়তি কর্মী জঞ্জাল পরিষ্কার করেন। প্রতি বছরেই আসা-যাওয়া মিলিয়ে প্রায় ১০ লক্ষ পুণ্যার্থী বাবুঘাটে আসেন।’’

Gangasagar Mela Pollution Pilgrims Firhad Hakim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy