Advertisement
০১ এপ্রিল ২০২৩

কোথাও সবুজায়ন, কোথাও সৃষ্টি-স্থিতি-লয়

ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের অমল ও দইওয়ালা নাটকের দৃশ্য। শুধু প্রেক্ষাপটটাই যা আলাদা। পুজোর এক সন্ধ্যায় বড়ই মন খারাপ তিতলির। পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে বেরোতে পারবে না সে। কয়েকদিন আগে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পা ভেঙেছে ওর। ডাক্তারবাবু বলেছেন, দু’মাস থাকতে হবে বিছানায়। বাড়ির পাশেই পুজোর মণ্ডপ।

বিদীপ্তা বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৫
Share: Save:

ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের অমল ও দইওয়ালা নাটকের দৃশ্য। শুধু প্রেক্ষাপটটাই যা আলাদা।

Advertisement

পুজোর এক সন্ধ্যায় বড়ই মন খারাপ তিতলির। পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে বেরোতে পারবে না সে। কয়েকদিন আগে রাস্তা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পা ভেঙেছে ওর। ডাক্তারবাবু বলেছেন, দু’মাস থাকতে হবে বিছানায়। বাড়ির পাশেই পুজোর মণ্ডপ। কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আর সেখানেই তার পাড়ার বন্ধুরা সকাল-বিকেল হুল্লোড় করে বেড়াচ্ছে। আর তিতলি? পুজোর জামা গায়ে বিছানায় শুয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখছে এক চিলতে শহুরে আকাশ।

আর চিত্রনাট্যের দইওয়ালার ভূমিকায় তিতলির বন্ধু রুমকি। আজ সকালেই সে পুজোর প্ল্যান জানিয়েছে।

রুমকির তালিকার শুরুতে আলিপুর সর্বজনীনের পুজো। তাদের থিম প্রাচীন হিন্দু ধ্রুপদী নৃত্য। মণ্ডপের চারপাশে থাকছে চার বেদের কথা। অন্দরসজ্জায় ৯টি বড় ও ২৫টি ছোট নৃত্যরত নারীমূর্তি। মূল গর্ভগৃহে মা দুর্গাকে দেখতে হবে ঘূর্ণায়মান মঞ্চে উঠে।

Advertisement

আলিপুর থেকে সোজা ভবানীপুরের অবসর সর্বজনীনে। রোজকার প্রয়োজনীয় নানা উপকরণে সাজানো হচ্ছে মণ্ডপ। ব্যবহার করা হয়েছে সিলিং ফ্যান। মণ্ডপে ঢুকলে যা দেখে মনে হবে দু’পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে এক ঝাঁক পাখি।

ভবানীপুর থেকে সোজা কালীঘাট। হরিশ মুখার্জি রোড ও কালীঘাট রোডের মোড়ে মুক্তদল-এর এ বার ৬৬তম বর্ষ। মণ্ডপ এখানে কুঁড়েঘরের আদলে। মাটির সরা, কাঠের বারকোশ, পটচিত্র এখানে ব্যবহৃত হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। সঙ্গে লন্ঠনের আলোকসজ্জা। দুর্গা প্রতিমা এখানে সাঁওতালি বেশে।

ভবানীপুর থেকে এ বার সোজা মেট্রোয় চেপে নাকতলা। গন্তব্য নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। এ বার তাদের থিম ‘সৃষ্টি-স্থিতি-লয়, জীবন স্রোতে বয়’। নৌকা যেমন স্রোত ঠেলে এগিয়ে চলে, তেমন ভাবেই নানা বাধা-বিপত্তিকে জয় করে মানবজীবন চলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে। শিল্পী ভবতোষ সুতার এই পুজোয় তুলে ধরেছেন ইনস্টলেশন আর্টের কাজ। নৌকার আকারে মণ্ডপ। রং-বেরঙের নানা কাপড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঢেউ। নৌকার মধ্যে দিয়ে প্রায় ১০০ ফুট গিয়ে প্রতিমার অধিষ্ঠান। দেবী দুর্গা এখানে ফাইবার গ্লাসের। ঠাকুরের চারপাশে তৈরি হয়েছে জলের ঘূর্ণি।

কাছেই নাকতলা পল্লিমঙ্গল সমিতির পুজো। এখানে শিল্পী সব্যসাচী পাল তাঁর ভাবনায় একঘেয়েমির জীবন ছেড়ে এক কল্পনার জগতকে তুলে ধরেছেন। মণ্ডপের ভিতরে হনুমান যাচ্ছে নৌকো চালিয়ে, মাছেরা হাঁটছে ডাঙায়। এখানে গাছের পাতার রং লাল আবার আকাশের রং সবুজ। এমন এক অদ্ভুত কল্পনার জগত্‌ না দেখলেই নয়।

নাকতলা থেকেই ফের মেট্রোয় পার্ক স্ট্রিট। সেখানে ৬১ পল্লি সর্বজনীনে এ বার সবুজায়নের বার্তা। তাদের থিম ‘মা ও আমরা’। প্রতিমা এখানে কৃষ্ণনগরের। আর উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এখানে আলোর কাজ চন্দননগরের।

ফেরার পথে ঘুরে আসতে হবে বৈষ্ণবঘাটা বালক সমিতিতে। মণ্ডপের প্রবেশপথ পাল তোলা বজরার অনুকরণে। সেটি তৈরি হয়েছে চাঁদ সদাগরের সপ্তডিঙার আদলে। বজরার ভিতরে নানা পৌরাণিক কাহিনি। দেবীমূর্তি এখানে পল্লিবধূ রূপে।

দক্ষিণে তো হল কয়েকটি। শেষ হল সপ্তমীর জমজমাট সন্ধ্যা। কিন্তু উত্তর?

রুমকি জানাল, নর্থ ক্যালকাটা সর্বজনীন দুর্গোত্‌সব কমিটির এ বারের থিম ‘সবুজের আঁচল’। চটের উপর মাটি লাগিয়ে ইতিমধ্যে সেখানে ধানের বীজ রোপণ করা হয়েছে। দু’তিন দিনের মধ্যেই তা থেকে ধান গাছ বার হবে। গোটা মণ্ডপটাই ঢাকা পড়বে সবুজে। সেখান থেকে সোজা চলে যাওয়া যাবে টালা পার্কের কাছেই পাইকপাড়া ১৫ পল্লি অধিবাসীবৃন্দ দুর্গোত্‌সব কমিটির পুজোয়। সেখানে এ বার নারায়ণ দেবনাথ রচিত সমস্ত কার্টুন চরিত্র দিয়ে সাজছে মণ্ডপ। মূল আকর্ষণ ‘বাঁটুল দি গ্রেট’। থাকছে হাঁদা-ভোঁদাও।

এর পর নাগেরবাজার। দমদম নাগেরবাজার বারোয়ারিতলার পুজো এ বার ৯৬ বছরে পা দিচ্ছে। এখানে প্রতিমা গড়েছেন সনাতন রুদ্র পাল। মণ্ডপ বৌদ্ধ মন্দিরের আদলে।

কথা হল। কিন্তু হাঁটার তো শক্তি নেই। যদি গাড়িও অমিল হয়? আবার সেই অমলের মুখ। তার সীমাবদ্ধতা। চোখ ছাপিয়ে এ বার জল এল তিতলির। তিন দিনের পুজোর দু’টো দিনই কেটে গিয়েছে। শেষ দিন। তা হলে আর চিন্তা কী? বাড়ির কাছেই হাতছানি দেয় পণ্ডিতিয়া সন্ধ্যা সঙ্ঘের সাবেক প্রতিমার মায়াময় রূপ। হঠাত্‌ করে ঘুমটা ভেঙে গেল তিতলির। কেউ নেই। রুমকী নেই। অমল নেই। শরীরে এতটুকু কোথাও কোনও অসুস্থতার চিহ্ন নেই।

একবার চিমটি কেটে দেখল সে নিজের হাতে। বেশ ব্যাথা লাগল। এ বার আনন্দে সে মা-কে ডেকে উঠল। আর তিনি আসতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরে বলল পুজোর আর ক’দিন বাকি গো?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.