Advertisement
E-Paper

এ বার বাজি ফাট‌লে ফুসফুসের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী

এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও হাওড়া,— এই দুই শহরে অন্যান্য বছরের নভেম্বরে বাতাসের মান কী থাকে, সেই পরিসংখ্যানের দিকে তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২০ ০২:৪৭
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতি বছর নভেম্বরে কলকাতা ও হাওড়ার বাতাসের যে মান থাকে, তাতে বাজি ফাটলে এমনিতেই বিপদ। অথচ সেই বিপদ প্রতি বছর অগ্রাহ্য করে বাজি-তাণ্ডব চলে দুই শহরে। এ বার তার পুনরাবৃত্তি হলে করোনা সংক্রমণের কারণে জনগোষ্ঠীর বড় অংশেরই ‘শ্বাসযন্ত্র-বিপর্যয়’ হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা।

এ ক্ষেত্রে কলকাতা ও হাওড়া,— এই দুই শহরে অন্যান্য বছরের নভেম্বরে বাতাসের মান কী থাকে, সেই পরিসংখ্যানের দিকে তাঁরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সোমবার জাতীয় পরিবেশ আদালতে বাজি সংক্রান্ত এক মামলার পরে যে পরিসংখ্যান আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। ওই দিন আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৯ সালের নভেম্বরে দিল্লি-সহ দেশের যে সমস্ত শহরে বাতাসের মান ‘খারাপ’ ও তার নীচে ছিল, সেখানে বাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আর যে সমস্ত শহরে ‘মাঝারি মাপের দূষণ’ ছিল, সেখানে শর্তসাপেক্ষে দু’ঘণ্টার জন্য পরিবেশবান্ধব বাজি ফাটানো যেতে পারে।

যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানাচ্ছে, জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়ের আগেই তো কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, যে কোনও বাজিই এ বার নিষিদ্ধ। তা ছাড়া গত বছর নভেম্বরে বাতাসের গড় মান ‘খারাপ’ই ছিল। তাই সে দিক থেকেও যে কোনও রকম বাজি-ই ফাটানো যাবে না। সেই প্রসঙ্গে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আমরা আদালতের রায় মেনে চলব। ওই রায় মানা আমাদের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক।’’

আরও পডুন: আত্মঘাতীই হন প্রৌঢ়, অনুমান পুলিশের​

কারণ, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুসূচক পর পর দু’বছর― ২০১৮ ও ২০১৯-এর নভেম্বরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ‘খারাপ’ ও ‘খুব খারাপ’ ছিল। যেমন, ২০১৮ সালের নভেম্বরের ২৪ দিনই কলকাতা (খারাপ-৮, খুব খারাপ-১৬) ও হাওড়ার (খারাপ-১৫, খুব খারাপ-৯) বাতাসের মানের অবনমন হয়েছিল।

পর্ষদ সূত্রের খবর, ২০১৯-এর নভেম্বরেও কলকাতার বায়ুসূচক ‘মাঝারি মাপের দূষণ’ ও ‘খারাপ’-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করেছিল। অন্য দিকে, হাওড়ার ক্ষেত্রে বায়ুসূচকের তুলনামূলক বেশি অবনমন হয়। যেখানে মোট ২২ দিনই (খারাপ-১৫ দিন, খুব খারাপ ৭ দিন) বাতাসের মান সহনমাত্রার তুলনায় খারাপ ছিল। পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘চলতি নভেম্বরের তথ্যেই দেখা যাচ্ছে, মাসের প্রথম ১১ দিনের মধ্যে হাওড়া ও কলকাতার বায়ুসূচক যথাক্রমে ছয় ও পাঁচ দিনই খারাপ রয়েছে।’’

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া-র ‘সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথ’-এর ডেপুটি ডিরেক্টর পূর্ণিমা প্রভাকরণ জানাচ্ছেন, চলতি বছরে এমনিতেই কোভিড ১৯ অতিমারির নেপথ্যে সার্স কোভ ২-এর মতো ‘রেসপিরেটরি’ ভাইরাস রয়েছে। ফলে দূষিত বায়ু ও এই অতিমারির সম্মিলিত যোগফল যে ফুসফুসে খারাপ প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে সন্দেহই নেই। পূর্ণিমাদেবীর কথায়, ‘‘উৎস বাজি হোক বা অন্য কিছু, বাতাসের মানের অবনমন ফুসফুসের পাশাপাশি শরীরের অন্য অঙ্গেও খারাপ প্রভাব ফেলে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রভাব বাড়তেই থাকে। ফলে এ বছর বাড়তি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’’

‘ইন্ডিয়ান চেস্ট সোসাইটি’-র সদস্য পালমোনোলজিস্ট বি বি মাথুর জানাচ্ছেন, এ বছর না হয় করোনা সংক্রমণ রয়েছে। কিন্তু প্রতি শীতেই দূষিত বাতাসের কারণে ফুসফুসজনিত সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাঁর মতে, ‘‘গত কয়েক বছরের

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ধারাবাহিক ভাবে শীতে শ্বাসকষ্টের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কালীপুজো, দীপাবলির পরে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। ফলে করোনা আবহে বাজি ফাটালে বিপদ যে আরও বাড়বে, তা সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যাচ্ছে। এর জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই!’’

Firecrackers Diwali 2020 Kali Puja 2020 Lung catastrophe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy