E-Paper

হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও কাজে যোগ দিতে পারেননি, মামলার পথে অনিকেত

নির্দেশের পরে ১২ দিন কাটতে চললেও আর জি করে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি অনিকেতকে। কবে তিনি সেখানে যোগ দিতে পারবেন, সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৬:২৪
অনিকেত মাহাতো।

অনিকেত মাহাতো। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কলকাতা হাই কোর্টে হেরে গিয়েও আদালতের নির্দেশের পরোয়া করছে না রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর!

রায়গঞ্জে নয়, চিকিৎসক অনিকেত মাহাতোকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই পোস্টিং দিতে হবে বলে রায় দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। গত ৬ নভেম্বরের শুনানিতে সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রেখেছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ।

কিন্তু সেই নির্দেশের পরে ১২ দিন কাটতে চললেও আর জি করে কাজে যোগ দিতে দেওয়া হয়নি অনিকেতকে। কবে তিনি সেখানে যোগ দিতে পারবেন, সে ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। উল্লেখ্য, আর জি করে তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন-ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে শুরু হওয়া গণ-আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন অনিকেত।

কোর্টের নির্দেশের প্রতিলিপি জমা দিতে অনিকেত গত ১০ নভেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য-অধিকর্তা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করতে যান। কবে থেকে তিনি কাজে যোগ দেবেন, সেটা জানাও জরুরি ছিল। কারণ, আইনি টানাপড়েনের জেরে প্রায় আট মাস ধরে তিনি বেতন পাচ্ছেন না। অভিযোগ, স্বাস্থ্য ভবনে উপস্থিত থাকলেও তিন কর্তার কেউ অনিকেতের সঙ্গে দেখা করে নির্দেশের প্রতিলিপি গ্রহণ করেননি। তাঁকে আইন বিভাগে ওই নথি জমা দিয়ে চলে যেতে বলা হয় বলে দাবিঅনিকেতের। এর পরে এখনও তাঁকে আর জি করে কাজে যোগ দিতে বলা হয়নি।

এর পরে স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে অনিকেত আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করবেন বলে স্থির করেছেন। আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর স্বাস্থ্য ভবনে সে কথা জানিয়েও এসেছেন। অনিকেতের কথায়, ‘‘চার বার আদালতে হারার পরেও হাই কোর্টের নির্দেশকে অমান্য করার এই ঔদ্ধত্য দেখানো একমাত্র এ রাজ্যের সরকারের পক্ষেই সম্ভব। আমিও লড়াই চালিয়ে যাব। আদালত অবমাননার মামলা করতে চলেছি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।’’

অনিকেতের মতে, ‘‘ভবিষ্যতে কোনও সরকারি চিকিৎসক যাতে কড়া শাস্তি ও হেনস্থার ভয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার বা মুখ খোলার সাহস না পান, তা নিশ্চিত করতে আর জি করের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে মরিয়া রাজ্য সরকার। তাই কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করতেও তারা দ্বিধা করছে না। আমাকে শিক্ষা দিতেই আমার কাজে যোগ দেওয়া যত দিন সম্ভব আটকে রাখতে চাইছে।’’

কেন হাই কোর্টের নির্দেশের পরেও অনিকেতকে আর জি করে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছে না? স্বাস্থ্য-অধিকর্তা স্বপন সোরেন বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’ স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ইন্দ্রজিৎ সাহার মন্তব্য, ‘‘বিষয়টি ‘প্রসেসিং’-এ আছে। আমাদের আইন বিভাগ খতিয়ে দেখছে।’’

স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোর্টের রায়ের পরে অনিকেত আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন বলে আমার জানা নেই। তা ছাড়া, দেখা করা তো নিষ্প্রয়োজন। আইন বিভাগে আদালতের নির্দেশের প্রতিলিপি দিয়ে গেলে তারাই খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।’’

কিন্তু হাই কোর্টের নির্দেশ খতিয়ে দেখার কী আছে? তা তো তৎক্ষণাৎ পালন করার কথা।স্বাস্থ্যসচিবের অবশ্য দাবি, ‘‘বিষয়টি প্রসেসিং-এ কিছুটা সময় লাগবে।’’ কী ধরনের প্রসেসিং, তার ব্যাখ্যা তিনি দেননি।

প্রসঙ্গত, আর জি কর আন্দোলনে জড়িত তিন চিকিৎসক অনিকেত, দেবাশিস হালদার এবং আসফাকুল্লা নাইয়াকেও যথাক্রমে রায়গঞ্জ, মালদহের গাজোল এবং হুগলির আরামবাগে পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। তাতেই শুরু হয় বিতর্ক। মেধা তালিকা থেকে বেছে বেছে শুধুমাত্র ওই তিন জনকেই উত্তরবঙ্গ এবং হুগলিতে পোস্টিং দেওয়ার বিষয়টি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ বলেও ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Aniket Mahato RG Kar Medical College and Hospital Incident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy