Advertisement
E-Paper

ক্ষমতা জাহিরই সমস্যার মূলে, ক্ষোভ ডাক্তারদের

স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের ক্ষোভ প্রশমনেই সম্ভবত এই অনুমতি। যে পাঁচ জন বন্ড চিকিৎসককে উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:২০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

স্বাস্থ্য আধিকারিককে ঘুষি মেরে গ্রেফতার হন চিকিৎসক। কিন্তু যে হাত রোগীর সেবায় নিয়োজিত, সেই হাতই কেন হিংসার আশ্রয় নিল তা-ও খতিয়ে দেখা উচিত। স্বাস্থ্য ভবনে ‘অস্বাস্থ্যকর’ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এমনই মত ‘ভুক্তভোগী’ সরকারি চিকিৎসকদের একাংশের। স্বাস্থ্যের সদর দফতরে চিকিৎসকদের সঙ্গে আধিকারিকদের একাংশ কী ধরনের ব্যবহার করেন, তা নিয়েও সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তাঁদের কেউ কেউ।

তার পরেই ঘুষি-কাণ্ডে অভিযুক্ত চিকিৎসককে এ দিন উচ্চশিক্ষার অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরের খবর, ভুক্তভোগী চিকিৎসকদের ক্ষোভ প্রশমনেই সম্ভবত এই অনুমতি। যে পাঁচ জন বন্ড চিকিৎসককে উচ্চশিক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম।

আক্রান্ত আধিকারিক নীলাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবারই দাবি করেছিলেন, তাঁর দিক থেকে কোনও প্ররোচনা ছিল না। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে সার্জারিতে স্নাতকোত্তর ওই চিকিৎসক আচমকাই তাঁকে ঘুষি মারেন। যদিও সেই যুক্তি মানতে নারাজ অভিযুক্ত চিকিৎসকের শিক্ষকেরা। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক শুক্রবার বলেন, ‘‘বিনম্র, শান্ত ছেলেটি এমন করতে পারে বিশ্বাস হচ্ছে না। যা করেছে, তা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। তবে এনওসি না পেলে ইউরোলজি পড়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাবে। সে জন্য হয়তো মেজাজ হারিয়েছে।’’ অন্য দিকে অভিযুক্ত চিকিৎসকের ঘনিষ্ঠদের দাবি, তিনি কী ভাবে অনুমতি পান, তা দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন ওই আধিকারিক। এই পরিপ্রেক্ষিতে এক শিক্ষক-চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্য প্রশাসনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ক্ষমতা দেখানোর প্রবণতা সমস্যা তৈরি করছে।’’

বস্তুত, চিকিৎসক সংগঠন এবং ব্যক্তিগত স্তরে একাধিক সরকারি চিকিৎসকের মাধ্যমে এই অসন্তোষ পৌঁছেছে স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তাদের কানেও। চিকিৎসকদের একাংশ জানান, স্বাস্থ্য ভবনের দু’টি ঘরে বদলি, পদোন্নতি, পোস্টিং, বন্ড চিকিৎসকদের এনওসি, উচ্চশিক্ষার অনুমতির জন্য সবচেয়ে বেশি যেতে হয়। সেই দু’টি ঘর নিয়েই চিকিৎসকদের একাংশের অসন্তোষ সবচেয়ে বেশি। যদিও বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘দফতরের নিয়ম মেনে যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে কাজ হয়। অনেকের পছন্দ মতো কাজ না হওয়ায় এ সব ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে।’’

এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘হাসপাতালে যেমন রোগীর পরিজনেরা বাক্সে নিজেদের ক্ষোভের কথা জানাতে পারেন, স্বাস্থ্য ভবনেও তেমন ব্যবস্থা থাকা উচিত। তা হলে বোঝা যাবে দুর্ব্যবহারের অসুখ কত গভীরে।’’

অসুখ অবশ্য নতুন নয়। বছর চারেক আগে নিজের খরচে বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। যাত্রার দু’দিন আগে সেই অনুমতি আসে। এ দিন সুবীরবাবু বলেন, ‘‘যখন অনুমতি পেলাম, তখন আর যাওয়ার সুযোগ নেই। পরিকল্পনা করে এটা করা হয়েছিল। পরে জেনেছিলাম, অনেকের সঙ্গে এমন হয়েছে।’’ প্রবীণ ওই চিকিৎসকের মতে, স্বাস্থ্য ভবনের অন্দরে হয়রানির দেওয়াল না ভাঙলে রোগের নিরাময় অসম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দফতরের আধিকারিকদের‌ও কাজের চাপ রয়েছে। সকলকে সন্তুষ্ট করা কখন‌ও সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসক, আধিকারিক এক‌ই পরিবারের সদস্য। সংযত আচরণে সমস্যার‌ সমাধান সম্ভব, তা দু’পক্ষকেই বুঝতে হবে।”

Violence Health Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy