এই বিপদে রোগের দাওয়াই-ই এখন ওঁদেরও দাওয়াই!
এত দিন রোগীদের ওষুধ বাতলে দিতেন তাঁরা। সেই ওষুধেই আপাতত নোটের চোট সারাচ্ছেন এ শহরের চিকিৎসকদের একটা অংশ।
কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে আগামী ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাতিল হওয়া ৫০০, ১০০০ টাকার নোট নিতে হবে ওষুধের দোকানে। অভিযোগ, সেই নির্দেশেরই সুযোগ নিচ্ছেন একদল চিকিৎসক। দিল্লি, মুম্বইয়ের মতোই কলকাতাতেও স্ত্রীরোগ, অস্থি এবং মেডিসিনের ডাক্তারেরা অচল ৫০০, ১০০০ টাকার নোট দিয়ে ওষুধ কিনে মজুত রাখছেন নিজেদের কাছে।
মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশ জানাচ্ছেন, ৮ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল ঘোষণা করার পর থেকেই ওযুধের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, চিকিৎসকদের মধ্যেই ওষুধ কেনার যা হিড়িক, তাতে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ওষুধ অনেক চিকিৎসকের ক্লিনিকেই পাঠাতে হবে না। এমনকী ডিসেম্বর পর্যন্ত ওষুধ পাঠানোর দরকার হবে না কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতালেও। মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের এই অভিযোগের স্বপক্ষে মুখ খুলছেন চিকিৎসকদের একাংশও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চিকিৎসক জানান, যাঁরা প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করেন, সেই ডাক্তারদের একাংশ এই বাজারে বাতিল নোট চালাতে ওষুধ কিনে জমিয়ে রাখছেন।
এক ডিস্ট্রিবিউটর যেমন জানালেন, শহরের এক নামকরা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ১ কোটি টাকার ওষুধ কিনেছেন। ওই চিকিৎসকের নিজের ইনফার্টিলিটি ক্লিনিক রয়েছে। ফলে এই সময়ে কেনা ওষুধ পরে ব্যবহার করতে তাঁর কোনও অসুবিধা হবে না। ওই চিকিৎসক একা নন। এ ভাবে ওষুধ কিনেছেন আরও অনেকেই। এ শহরের অনেক অস্থিবিশেষজ্ঞের নিজের ক্লিনিক রয়েছে এবং তাঁরা ‘কনজিউমিং ডক্টর’। অর্থাৎ, তাঁরা রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করার পরে নিজেই প্রয়োজন মতো ওষুধ রোগীকে দেন। রোগীও ওষুধ কেনেন তাঁর কাছেই। মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের মতে, হাত-পা বা দেহের যে কোনও অংশের হাড় ভাঙলে অনেকেই হাসপাতালে না গিয়ে কোনও অস্থিবিশেষজ্ঞের নিজস্ব ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য যান। ফলে কয়েক লক্ষ টাকার ওষুধ নগদে কিনলেও সেগুলো বিক্রি করতে ওই চিকিৎসকদের কোনও অসুবিধা হবে না।
ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্ত্রীরোগ ও অস্থিবিশেষজ্ঞদের মতোই প্রচুর পরিমাণে ওষুধ কিনছেন মেডিসিনের ডাক্তারদের একাংশও। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা। তবে তাঁদের মতে, শুধুই ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রোগীকে ওষুধ বিক্রির ভরসায় নয়, ওই চিকিৎসকেরা যে সব বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখেন, সেখানেও ওই ওষুধ বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা। কলকাতার বহু চিকিৎসকের নিজস্ব হাসপাতালও রয়েছে। এই সময়ে কেনা ওষুধ খুব সহজেই আগামী কয়েক মাসে সেখানে ব্যবহার করা যাবে।
মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরদের দাবি, যেহেতু সরকারি নির্দেশ রয়েছে বাতিল ৫০০, ১০০০ টাকার নোটেও ওষুধ দিতে হবে, তাই তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন এ ভাবে ওষুধ বিক্রি করতে। কিন্তু কারা এই ওষুধ কিনছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ্য আনতে চাননি কেউই।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ না উঠলে এই সমস্যার সমাধান হবে কী করে? মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটরেরা যদি কারও নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ জানান, সে ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
শুধু চিকিৎসকেরা নন। অভিযোগ রয়েছে আইনজীবীদের নিয়েও। কেউ কেউ বলছেন, আইনজীবীদের একাংশ বাতিল ৫০০, ১০০০ টাকার নোট অন্যের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের এক নামী আইনজীবীও। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের পেশায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ তৈরি হয়। তাই হিসেবের বাইরে থাকা ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বদল করা বিশেষ কোনও সমস্যা নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy