Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Calcutta High Court

স্বেচ্ছাবসরের আর্জি নাকচ আদালতে, হতাশা একাধিক চিকিৎসক সংগঠনে

রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক ক্যাডারের চিকিৎসক মাধব সরকার স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করেছিলেন কয়েক বছর আগে। তাঁর সেই আর্জি খারিজ করেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব।

calcutta High Court

চিকিৎসকের স্বেচ্ছাবসরের আবেদন খারিজ করে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।  প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৩ ০৭:০৪
Share: Save:

স্বেচ্ছাবসরের আবেদন করেছিলেন এক সরকারি চিকিৎসক। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর সেই আবেদন মঞ্জুর না করায় তিনি মামলা করেন রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল বা স্যাট)। সেখানে জিতেও যান। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার। সম্প্রতি ওই মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। তাতে ওই চিকিৎসকের স্বেচ্ছাবসরের আবেদন খারিজ করে তাঁকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

সূত্রের খবর, রাজ্যের জনস্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক ক্যাডারের চিকিৎসক মাধব সরকার স্বেচ্ছাবসরের জন্য আবেদন করেছিলেন কয়েক বছর আগে। তাঁর সেই আর্জি খারিজ করেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব। তখন ওই চিকিৎসক রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলা করলে সেই রায় তাঁর পক্ষে গিয়েছিল। ২০১৯ সালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। সম্প্রতি সেই মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন এবং বিচারপতি প্রসেনজিৎ বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসা ব্যবস্থা রাজ্যের অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের মতো নয়। স্বাস্থ্য দফতরের কাজের সঙ্গে জনসাধারণের স্বাস্থ্যের দিকটি জড়িত। এই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক বাড়ন্ত। অথচ, সেখানে দরিদ্র মানুষেরা চিকিৎসা পান। তাই স্বেচ্ছাবসরের সরকারি নিয়ম থাকলেও জনপরিষেবামূলক কাজের ক্ষেত্রে তা সব সময়ে প্রযোজ্য হতে পারে না। এই যুক্তি দেখিয়ে ওই চিকিৎসকের স্বেচ্ছাবসর সংক্রান্ত যে রায় স্যাট দিয়েছিল, তা খারিজ করে দেয় হাই কোর্ট।

সূত্রের খবর, ২০১৯ সালে ওই চিকিৎসকের পক্ষে রায় শোনানোর সময়ে সরকারি কর্মচারীদের স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার অধিকারের পক্ষে ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুলের ৭৫ (এএ) এবং ৭৫ (এএএ) ধারার কথা উল্লেখ করেছিল রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনাল। যদিওহাই কোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে, ২০১৪ সালে সার্ভিস রুল সংশোধন করে তাতে ৭৫ (এএএএ) ধারা যুক্ত করা হয়েছে। যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাস্তব পরিস্থিতি বিচার করে তবেই স্বেচ্ছাবসরের আর্জি মঞ্জুর করা হবে।

আদালতের এই রায়ে স্বভাবতই মুষড়ে পড়েছে বিভিন্ন সরকারি চিকিৎসক সংগঠন। ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের দাবি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এক হাজার জনতাপিছু এক জন চিকিৎসক থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি রয়েছে এই রাজ্য। এখানে ১৩৩০ জন লোকপিছু এক জন করে চিকিৎসক রয়েছেন। ফি বছর রাজ্য থেকে অন্তত সাড়ে চার হাজার চিকিৎসক পাশ করে বেরোনোয় সেই ঘাটতি আরও কমছে। সজল বলেন, “ডাক্তারিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পড়ুয়া পাশ করে বেরোনো সত্ত্বেও নিয়োগ নেই। সে কারণেই জনতা ও সরকারি চিকিৎসকের অনুপাতের অবস্থা এত করুণ। আর সার্ভিস রুলে ধারার যে পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে, তাতে শুধু চিকিৎসকেদের স্বেচ্ছাবসরের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। যা অগণতান্ত্রিক।”

সরকারি চিকিৎসকদের আর এক সংগঠন, ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “এই রায়ে আমরা হতাশ। সারা দেশেই জনতা ও চিকিৎসকের আনুপাতিক হার বাড়ছে। এ রাজ্যে সরকারি পরিকাঠামোয় অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলির সমাধান করা হচ্ছে না। অথচ, অসুস্থ এবং অনিচ্ছুক চিকিৎসকেদের কার্যত ক্রীতদাসের মতো আটকে রাখতে চাইছে সরকার। আদালতও তাতে সায় দেওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।” অন্যান্য রাজ্য যদি সরকারি চিকিৎসকেদের স্বেচ্ছাবসর দিতে পারে, তা হলে এখানে সেটা দেওয়া যাবে না কেন? ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর তরফে সেই প্রশ্ন তুলছেন চিকিৎসক অর্জুন দাশগুপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Calcutta High Court VRS Scheme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE