Advertisement
E-Paper

কোভিড আক্রান্ত গৃহকর্তা, কাজ করতে না চাওয়ায় বেতন না দেওয়ার হুমকি, থানায় গেলেন পরিচারিকা

পাওনা টাকা পেতে শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পরিচারিকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৫৮
মঙ্গলবার সকালে কালীঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাজির হন অভিযোগকারিণী। —নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার সকালে কালীঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাজির হন অভিযোগকারিণী। —নিজস্ব চিত্র।

কোভিড আক্রান্ত পরিবারের এক সদস্য। জানতে পেরে কাজ করতে অস্বীকার করেন প্রৌঢ়া পরিচারিকা। আর তার জেরে পরিচারিকার বেতন এবং পুজোর বোনাস না দেওয়ার হুমকি দিল কোভিড আক্রান্তের পরিবার। উপায় না দেখে, পাওনা টাকা পেতে শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পরিচারিকা।

ঘটনাটি ঘটেছে কালীঘাট থানা এলাকায়। গত সাত মাসে করোনা আতঙ্কের জেরে বিভিন্ন রকমের অমানবিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা শহর। কখনও আতঙ্কের জেরে পাশের ঘরের অসুস্থ একাকী বৃদ্ধাকে চিকিৎসা পর্যন্ত করা হয়নি। বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন মানুষ। কখনও দেখা গিয়েছে, কোভিড আক্রান্ত নন, কেবল মাত্র সন্দেহের জেরে মৃতদেহ সৎকারের জন্য কেউ এগিয়ে আসেননি। পুলিশকে সৎকারের ভার নিতে হয়েছে। সেই তালিকায় সংযোজন মঙ্গলবার সকালের ওই অভিযোগ। কলকাতা পুলিশের আধিকারিকরা মনে করছেন এর আগে এ রকম অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি।

মঙ্গলবার সকালে কালীঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাজির হন ৬৫ বছরের সন্ধ্যা রায়। কালীঘাট থানা এলাকারই একটি বস্তিতে থাকেন। ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে রাজকুমার গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে তিনি পরিচারিকার কাজ করেন। গত ১০ বছর ধরে কাজ করছেন সেখানে। সন্ধ্যা পুলিশকে জানিয়েছেন, ৪-৫ দিন আগে তিনি ওই বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে জানতে পারেন রাজকুমার গঙ্গোপাধ্যায় কোভিড আক্রান্ত। তাঁর অভিযোগ, বিষয়টি আগে তাঁকে কেউ জানাননি। রাজকুমার কোভিড আক্রান্ত জানার পর তিনি ওই বাড়িতে কাজ করতে যাওয়া বন্ধ করে দেন।

আরও পড়ুন: সাতসকালে তীব্র বিস্ফোরণে বেলেঘাটায় উড়ে গেল ক্লাবঘরের ছাদ​

অভিযোগ, এর পরই তাঁকে রাজকুমারের মা অন্য একজনের মারফৎ জানিয়েছেন, কাজ বন্ধ করলে সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর যে ১ হাজার১০০ টাকা বেতন পাওনা রয়েছে সেই টাকা দেওয়া হবে না। শুধু তাই নয়, দেওয়া হবে না পুজোর বোনাসের টাকাও। ফোনে সন্ধ্যার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,‘‘আমাকে প্রথমে ওরা গোটা ব্যাপারটা লুকিয়ে গিয়েছিল। পরে জানতে পারি।” তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমি আরও ৪টি বাড়িতে কাজ করি। আমি যদি রাজকুমারের বাড়িতে কাজ করি এই অবস্থায় তা হলে তো ওই বাড়িগুলোতেই রোগ ছড়ানোর ভয় রয়েছে।” পুলিশকেও তিনি জানিয়েছেন, তিনি একা থাকেন। তিনি সংক্রামিত হলে তাঁকে দেখভাল করারও কেউ নেই।

সন্ধ্যার করা অভিযোগের ভিত্তিতে রাজকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ফোন ধরেন তাঁর মা। অভিযোগের কথা শুনেই তিনি বলেন,‘‘এ বিষয়ে আমরা কিছু বলব না। আপনাদের যা ইচ্ছে লিখুন।”

আরও পড়ুন: সৌমিত্রকে দেওয়া হতে পারে ইনভেসিভ ভেন্টিলেটরে​

পেশায় গাড়ির ব্যাবসায়ী রাজকুমারের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫। গঙ্গোপাধ্যায় দম্পতি, তাঁদের দুই সন্তান এবং রাজকুমারের মা। অভিযোগ পেয়ে কালীঘাট থানার আধিকারিকরা খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, রাজকুমার চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই নিভ়তবাসে রয়েছেন। পরিবারের সদস্যরাও নিভৃতবাসে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘এ রকমও যে ঘটনা ঘটতে পারে তা এই অভিযোগ না পেলে জানতে পারতাম না।” পুলিশের অন্য এক আধিকারিক বলেন,‘‘আমরা রাজকুমারের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচারিকা যাতে টাকা পেয়ে যান তার ব্যবস্থা করছি। সেই সঙ্গে অভিযোগকারীকেও আমরা বলেছি বাড়িতে থাকতে। কারণ ইতিমধ্যেই তিনি সরাসরি আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছেন।” পুলিশের পক্ষ থেকে মহিলাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। তবে পুলিশ আধিকারিকরা স্বীকার করেন, তাঁদের কাছেও এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।

Coronavirus COVID-19 Police Kolkata Police Kalighat Maid
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy