Advertisement
E-Paper

সুরের উদ্‌যাপনে মাতল রাতজাগানিয়া জলসা

সোমবারের সন্ধ্যা ধীরে ধীরে গড়াচ্ছে রাতের দিকে। ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলনের মঞ্চ প্রস্তুত রসিক জনের মন জয় করতে। ঘটনাচক্রে দিনটা আবার সরস্বতী পুজোর তিথিও।

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৫
মুগ্ধ: ৬৬তম ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলনের উদ্বোধনী রাত। তখন চলছে অনুষ্ঠান। সোমবার, নজরুল মঞ্চে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

মুগ্ধ: ৬৬তম ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলনের উদ্বোধনী রাত। তখন চলছে অনুষ্ঠান। সোমবার, নজরুল মঞ্চে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

শহর কলকাতার অনেক জায়গাই রাত জাগতে ভালবাসে। জানুয়ারিতে রাত জাগে রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন এক প্রেক্ষাগৃহও। উদ্‌যাপনের হুল্লোড়ের থেকে অবশ্য তার মেজাজ আলাদা। রাতপাখির ডাক নয়, এই ক’টা দিন সুরের জোয়ারে ভাসে সরোবর চত্বর।

সোমবারের সন্ধ্যা ধীরে ধীরে গড়াচ্ছে রাতের দিকে। ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলনের মঞ্চ প্রস্তুত রসিক জনের মন জয় করতে। ঘটনাচক্রে দিনটা আবার সরস্বতী পুজোর তিথিও।

‘‘যখন এই সম্মেলন ডোভার লেনে হত, তখন থেকেই বাবার হাত ধরে আসা শুরু। তার পরে তো বিদেশে চলে গেলাম। কিন্তু ২৫ বছর ধরে আমি ঠিক এই সময়ে কলকাতায় আসি শুধু গানের টানেই’’— বাইরে ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে বলছিলেন প্রিন্সটন-নিবাসী নূপুর লাহিড়ী। পেশায় ডাক্তার হলেও নেশায় গায়িকা।
তাঁর মতে, ৬৬ বছর ধরে হয়ে চলা এই সম্মেলন শহরের শিল্পী মনেরই পরিচয়। এ বছর তাঁর সঙ্গী হয়েছেন ডাক্তার ও স্যাক্সোফোন বাদক অ্যান্ডর ক্যারিয়াস। দ্বিতীয় বার ভারতে এসে তাঁর ‘টু ডু’ তালিকা জুড়ে শুধুই সঙ্গীত।

গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে প্রেক্ষাগৃহের দিকে এগোচ্ছিল চার তরুণ-তরুণীর একটি দল। কর্মসূত্রে ছিটকে যাওয়ায় যোগাযোগ কমেছে। তবু এ বছর দিঠি, দেবপ্রিয়া, অনুপম ও মল্লার ফের একসঙ্গে। ডোভার লেন সম্মেলন ছাড়া আর কোথায়ই বা দেখা হত! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে গানের টানেই বন্ধুত্ব হয়েছিল যে।

সন্ধ্যার প্রথম শিল্পী, সরোদিয়া দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য যখন বাগেশ্রী কানাড়া বাজিয়ে শেষ করছেন, তখন প্রেক্ষাগৃহে ঝরে পড়ছিল স্বতঃস্ফূর্ত, অকৃপণ প্রশংসা। কিশোরী মেয়েকে পাশে নিয়ে উজ্জ্বল মুখে হাততালি দিচ্ছিলেন শ্রাবণী মিত্র। শেওড়াফুলির বাসিন্দা। শত কাজ সত্ত্বেও তাঁর স্বামী এই গানের আসরে প্রতি বছরই আসেন। ‘‘উনি তো বারবারই আসতে বলেন। সত্যি, কী ভাল লাগছে! কেন যে আগে আসিনি।’’— আক্ষেপ শ্রাবণীর। পাশেই এক প্রৌঢ় শ্রোতা বলে উঠলেন, ‘‘আহা! তবলিয়াও বড় ভাল বাজালেন।’’ অভিজ্ঞতায় তফাত অনেক, শুধু ভাল লাগা মিলিয়ে দিল দুই অসমবয়সী শ্রোতাকে। পরের শিল্পী শুরু করার আগে গরম পানীয়ে রাত জাগার রসদ সংগ্রহ করছিলেন অনেকেই। কেউ আবার ব্যস্ত রাতের খাওয়া সেরে নিতে। অফিস সেরে আসতে গিয়ে বাদ পড়েছিল সেটাই।

চায়ে চুমুকের ফাঁকেই স্ত্রীর গায়ে আলতো করে কাশ্মীরি শালটা জড়িয়ে দিলেন শহরের বাসিন্দা সুবীর চৌধুরী। হেসে বললেন, ‘‘বয়স হয়েছে। রাত জাগতে কষ্ট হয়। তবু না এসে থাকতে পারি না।’’ চা শেষ হতেই ফের হলমুখী দু’জনে। একই ফ্রেমে ধরা পড়ে ভালবাসার আলাদা আলাদা রং।

কত বছর ধরে ভারতীয় রাগসঙ্গীত শুনছেন? প্রশ্ন শুনে মিটিমিটি হাসেন অ্যালান ট্যুটিল। উত্তর আসে, ‘‘তোমার যা বয়স, তার থেকে বেশিই হবে।’’ প্রবীণ এই ইংরেজের সামনে পণ্ডিত রবিশঙ্কর খুলে দিয়েছিলেন এক অন্য জগতের দরজা। এখন শুধু সেতার নয়, অ্যালানের ভাললাগার তালিকা জুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের নানা ধারা। এ শহরে আসার আগে গিয়েছিলেন অমদাবাদে, সপ্তক সঙ্গীত সম্মেলনে। প্রতি বছর মাস দুয়েকের জন্য ভারতে আসেন এ জন্যই। ‘‘সপ্তক চলে ১৩ দিন ধরে, অনেক শিল্পী আসেন। তবে ডোভার লেনের মতো এতটা সময় ওখানে শিল্পীরা পান না। এই ব্যাপারটা কলকাতার নিজস্ব।’’

শিল্পী ছন্নুলাল মিশ্র ঠুংরি গাইবেন ঘোষণা করায় যারপরনাই আনন্দিত শিক্ষিকা বীথিকা হালদার। ‘‘এই ধরনের আসরে তো সচরাচর ঠুংরি গান না কেউ। পরের সব ফিকে লাগে,’’ বললেন তিনি। ২৩ তারিখ স্কুল ছুটি থাকার সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে বন্ধুদের সঙ্গে হাজির ধ্রুপদী সঙ্গীতের এই ছাত্রী।

মধ্যরাতেও এসে পৌঁছচ্ছিলেন অনেক সঙ্গীতপ্রেমী। প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে চৈতি-কাজরীর সুরে তখন শুধু সঙ্গীতের জন্যই রাত জাগার শপথ নিচ্ছে কলকাতা।

Kolkata শহর Gorabazar fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy