Advertisement
E-Paper

শিক্ষা-অধিকর্তার কলেজ-দর্শন, প্রশ্নে অনলাইনের স্বচ্ছতা

ঝুলি থেকে অবশেষে বেড়াল বেরিয়েই পড়ল! অনলাইনে ফর্ম পূরণ ও কলেজের তালিকা প্রকাশ করতে এখনও বাকি প্রায় এক মাস। অথচ, ভর্তির ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শনিবার সকালেই কলেজে পৌঁছে গেলেন শিক্ষা-অধিকর্তা! ভর্তি নিয়ে অধিকর্তার এখনই কলেজ পরিদর্শনের কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। কারণ, রাজ্য সরকারের চালু করা অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া অনুযায়ী কোনও ছাত্রছাত্রীকে প্রথমে কলেজে যেতে হবে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৫ ০১:১১
ভর্তির প্রক্রিয়া দেখতে কলেজ পরিদর্শন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ভর্তির প্রক্রিয়া দেখতে কলেজ পরিদর্শন। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঝুলি থেকে অবশেষে বেড়াল বেরিয়েই পড়ল!

অনলাইনে ফর্ম পূরণ ও কলেজের তালিকা প্রকাশ করতে এখনও বাকি প্রায় এক মাস। অথচ, ভর্তির ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে শনিবার সকালেই কলেজে পৌঁছে গেলেন শিক্ষা-অধিকর্তা! ভর্তি নিয়ে অধিকর্তার এখনই কলেজ পরিদর্শনের কোনও অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না অনেকেই। কারণ, রাজ্য সরকারের চালু করা অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া অনুযায়ী কোনও ছাত্রছাত্রীকে প্রথমে কলেজে যেতে হবে না। তাই বিরোধী ছাত্র ইউনিয়নগুলি প্রশ্ন তুলেছে, তবে কি সরকারি ভাবে চালু হওয়া অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোথায় অস্বচ্ছতা রয়েছে, তা দেখতেই তড়িঘড়ি কলেজে যেতে হল শিক্ষা-অধিকর্তাকে? সরকার কি তা হলে মেনে নিচ্ছে প্রকারান্তরে কলেজের বাইরে ভর্তির একটা সমান্তরাল প্রক্রিয়া চলছে?

শনিবার হঠাৎই শিক্ষা-অধিকর্তা নিমাই সাহার (ডিপিআই) নেতৃত্বে একটি দল সংস্কৃত কলেজ, মৌলানা আজাদ ও আশুতোষ-সহ বেশ কয়েকটি কলেজে পরিদর্শনে আসেন। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিমাইবাবুর উত্তর, ‘‘কলেজের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না জানতে এসেছি। ছাত্রদের যেন কোনও অসুবিধা না হয়, তা-ও সব কলেজকে বলেছি।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সাফাই, ‘‘অনলাইন প্রক্রিয়াটি নতুন। তাই কলেজের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না তা দেখতেই যাওয়া হচ্ছে।’’

অথচ, ভর্তি-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও নির্ঝঞ্ঝাট করতে শিক্ষামন্ত্রীই অনলাইনে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেন। তিনিই আবার বৃহস্পতিবার টাউন হলে বলেন, ‘‘অনলাইন ব্যবস্থা ‘টোটাল ফেলিওর’।’’ অনলাইন ব্যবস্থাকে পিছন থেকে ছুরি মারা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। পাশাপাশি, কলেজগুলিকে হুঁশিয়ারও করে বলেন, ‘‘কিছু কলেজ অনলাইন ব্যবস্থা করতে চাইছে না।’’

মন্ত্রীর ওই অভিযোগের পরেই আনন্দবাজার সরেজমিন তদন্ত শুরু করে। সেখানেই দেখা যায়, এক শ্রেণির ছাত্র ইউনিয়নের নেতাদের দহরম-মহরম এতটুকুও কমেনি। শনিবারই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ, আশুতোষ কলেজে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করা ও আসন ‘বুক’ করে রাখা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের থেকে মোটা টাকা দাবি করছেন কলেজের ‘দাদা’রা। বেশ কিছু কলেজ চত্বরে হেল্প ডেস্ক খুলে বসেছেন ছাত্র ইউনিয়নের কলেজ নেতারা। ফলে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হলেও ‘ভোগান্তি’ কমেনি।

সূত্রের খবর, অনলাইন প্রক্রিয়ায় ভর্তি হওয়ার সঙ্গে কার্যত কোনও যোগ নেই কলেজের। নিয়মানুযায়ী, অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে সেই রসিদ দেখিয়ে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিতে হয়। এর পরে কলেজ তালিকা প্রকাশ করলে ব্যাঙ্কের রসিদ নিয়ে কলেজে যোগাযোগ করতে হয়। তার পরে ভর্তি। তাই পুরো প্রক্রিয়াটিই থেকে যায় কলেজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

কলেজের বাইরে হেল্প ডেস্ক ও ছাত্র ইউনিয়নের দাদাগিরি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নিমাইবাবুর উত্তর, ‘‘আমরা এসেছি কলেজের বিষয়গুলি দেখতে। বাকি কিছু জানি না। এখন কয়েক দিন কলেজে মনিটর করা হবে।’’ কিন্তু সাইবার কাফে বা হেল্প ডেস্ক তো ছাত্র-ভর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত? তাঁর জবাব, ‘‘কোনও কলেজ আমাদের হেল্প ডেস্ক নিয়ে কিছু বলেনি।’’

তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষ বলেন, ‘‘অনলাইন ব্যবস্থা চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ। আমরা প্রথম থেকেই একে সমর্থন করেছি। তাই প্রশাসনিক ভাবে যা-ই পদক্ষেপ করা হোক না কেন, তাকেও সমর্থন করছি।’’

বিরোধী ছাত্র ইউনিয়নগুলি অবশ্য এই পরিদর্শনের কোনও অর্থই খুঁজে পাচ্ছে না। এসএফআই-এর রাজ্য সভাপতি মধুজা সেনরায় বলেন, ‘‘কলেজের সঙ্গে এখন ভর্তির কোনও সম্পর্কই নেই। সেখানে কলেজ পরিদর্শনের মানেটা কী? হেল্প ডেস্কের নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা টাকা তুলছেন। সাইবার কাফেতেও তো একই অবস্থা।’’

ছাত্র পরিষদের সম্পাদক কৌস্তুভ বাগচী বলেন, ‘‘শিক্ষা-অধিকর্তা এখন কেন কলেজে গিয়েছিলেন, বুঝতে পারলাম না। হতে পারে সরকারের উচ্চ স্তর থেকে এমন কোনও নির্দেশ রয়েছে যে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের টাকা তোলার ব্যবসা থেকে মিডিয়ার মুখ ঘোরাতে হবে। তাই কলেজ পরিদর্শন প্রয়োজন।’’

শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য শনিবার বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে সমস্ত কিছু করতে হবে। অস্বচ্ছতা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। কেউ অন্যায় ভাবে টাকা নিলে ধরা পড়বে।’’

online admission DPI college student union student education minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy