অভিজিৎ পাণ্ডে
স্বপ্ন ছিল তাঁকে ঘিরে। বন্ধুদের কথায়, ‘‘থাকবে না-ই বা কেন?’’
হাজরা রোডের এক ধারে সার দেওয়া এক চিলতে ঘরের বস্তির মধ্যে অভিজিৎ পাণ্ডে ছিলেন ব্যতিক্রম। পাঁচ বছর আগে কারখানায় কাজ করতে করতে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় বাবা রামপ্রবেশ পাণ্ডের। তার পরেও দাঁতে দাঁত চিপে পড়াশোনাটা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বড়দাদা রাহুল কারখানায় কাজ করেন। মেজো দাদা রোহিত গাড়ি চালান। অভিজিৎ সেজো। ছোট মণীশ খালসা মডেল স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
একটিই মাত্র ঘর, সেখানেই বড় চৌকি পাতা। মায়ের সঙ্গে চার ছেলের দিনযাপন ছিল ওই একটি ঘরেই। সেই ঘরে বসেই পড়াশোনা করতেন অভিজিৎ। পড়াশোনা করার জন্য বস্তির অন্য ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতেন। শ্যামাপ্রসাদ কলেজে বি কম তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। ছিলেন, কারণ, শনিবার রাত আড়াইটা নাগাদ হাজরা রোডের উপরে একটি গাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছেন অভিজিৎ। সঙ্গে ছিলেন দুই বন্ধু মিথিলেশ রায় ও রামভরত যাদব। হাসপাতালে ভর্তি তাঁরা।
অত রাতে তাঁরা কী করছিলেন হাজরা রোডে?
ঘটনার খবর পেয়ে প্রথমে যেটা মনে হয়, অভিজিৎদের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হয়নি — ‘নিশ্চই মদ খেয়ে, নেশা করে, মোচ্ছব শেষে টলতে টলতে বাড়ি ফিরছিল আর গাড়ি চাপা পড়েছে।’ অভিজিতের মা মঞ্জুদেবী জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যেই তো রাত করে বাড়ি ফিরত। যেত বেকবাগানে বন্ধুর মেসে পড়তে। টাকা ছিল না বই কেনার। তাই, অন্য তিন জনের সঙ্গে বসে পড়ত। তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের দেহে কোনও মাদকের চিহ্ন মেলেনি।
প্রতিবেশী নেহা ঠাকুরের কথায়, ‘‘নেশা! কখনও শুনিনি ও নেশা করত। পরীক্ষার আগে মাঝেমধ্যেই দেখতাম রাত করে বাড়ি ফিরত।’’
মিথিলেশের স্কুটি রয়েছে। শনিবার বন্ধুর মেস থেকে বেরিয়ে তাঁরা স্কুটি চেপে এসএসকেএমে যান চা খেতে। তার পরেই হাজরা রোড ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। তখনই ঘটে দুর্ঘটনাটি। পিছন থেকে আসা একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় তাঁদের। স্কুটি থেকে ছিটকে পড়েন তিন জনেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy