Advertisement
E-Paper

জল টেনে নিচ্ছে বহুতল, তাই সঙ্কট

বাড়িতে ফেরুল আছে নির্দিষ্ট মাপের। জলের জোগানও স্বাভাবিক। তবু কেন জল পাচ্ছেন না গৃহস্থ? এক সময়ে পুরসভার পাইপলাইন থেকে জল চুরি হতো। টালা থেকে কলকাতায় আসার পথে পাইপের সংযোগস্থল কিংবা পাইপের মধ্যে নল ঢুকিয়ে জল চুরি করার চল ছিল। এখন বদলেছে চুরির চরিত্র। আর এ বার এই চুরির জন্য পুরসভা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বেশ কিছু বহুতলকে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৫ ০০:০৩

বাড়িতে ফেরুল আছে নির্দিষ্ট মাপের। জলের জোগানও স্বাভাবিক। তবু কেন জল পাচ্ছেন না গৃহস্থ?
এক সময়ে পুরসভার পাইপলাইন থেকে জল চুরি হতো। টালা থেকে কলকাতায় আসার পথে পাইপের সংযোগস্থল কিংবা পাইপের মধ্যে নল ঢুকিয়ে জল চুরি করার চল ছিল। এখন বদলেছে চুরির চরিত্র। আর এ বার এই চুরির জন্য পুরসভা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বেশ কিছু বহুতলকে।
খোদ মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘ফেরুল খুলে পাম্প ঢুকিয়ে পুরসভার জল টেনে নিচ্ছে শহরের বেশ কিছু বহুতল। তদন্তে আমরা এটাই জেনেছি। এমন বহুতলগুলিকে চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’’
কী ভাবে এই জল চুরির কথা জানতে পারল পুরসভা?
পুরসভার জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, দৈনিক পলতা-টালা থেকে জল উৎপন্ন হয় প্রায় ৩০ কোটি, গার্ডেনরিচে ৬ কোটি, ধাপায় ৩ কোটি এবং জোড়াবাগানের কাছে ৮০ লক্ষ গ্যালন। প্রায় ১৮১ কোটি লিটার। এ ছাড়াও শহরে প্রায় ৩৭০টি গভীর নলকূপ চলে। এক-একটি নলকূপ থেকে ঘণ্টায় ২৫ হাজার লিটার জল ওঠে। দিনে অন্তত ৪ ঘণ্টা চলে ওই সব নলকূপ। সেই হিসেব ধরলে ৩৭০টি নলকূপে আরও ৩ কোটি ৭০ লক্ষ লিটার জল ওঠে। সব মিলিয়ে ১৮৪ কোটি লিটারেরও বেশি জল উৎপন্ন হয় শহরে।

পুরসভা সূত্রে বলা হয়, শহরের জনসংখ্যা এখন প্রায় ৪৫ লক্ষ। অর্থাৎ, যে পরিমাণ জলের জোগান রয়েছে, তাতে লোক পিছু জলের পরিমাণ প্রায় ৪০০ লিটার। কেন্দ্রের সেন্ট্রাল পাবলিক হেল্থ এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের হিসেব বলছে, মানুষ পিছু দৈনিক জলের প্রয়োজন ১৩৫ লিটার। এই হিসেবের দ্বিগুণেরও বেশি জল সরবরাহ করছে পুরসভা। তা হলে গরম পড়লেই শহরে জলের হাহাকার হয় কেন? উৎপাদন হলেও কেনই বা শহর জুড়ে জলের জোগান দিতে পারছে না পুর-প্রশাসন? আর কেনই বা বরো চেয়ারম্যানকে ঘেরাও হতে হয় এলাকাবাসীর হাতে?

জল দফতরের এক ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাখ্যা, ‘‘স্রোতের মতো টাকা ঢাললেও শহরে জলসঙ্কট কমবে না। কারণ, অসৎ উপায়ে কিছু লোক যে ভাবে জল টেনে নিচ্ছেন, তার জেরে ভুগছেন বহু মানুষ। এই চুরি বন্ধ না হলে আমরা যতই জল সরবরাহ করি না কেন, অভাব মিটবে না।’’

কী ভাবে এই জল অন্যত্র বেআইনি ভাবে চলে যাচ্ছে, তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে পুরসভা দেখেছে— মূলত বহুতলগুলিতে জলের সমস্যা কম। বস্তি-সহ একতলা, দোতলা, বা কিছু ক্ষেত্রে তিনতলার বাড়িতে জলের সমস্যা আগের থেকে বাড়ছে।

কেন? জবাব খুঁজতে গিয়েই পুরসভা মৌচাকে ঢিল পড়েছে।

জল দফতরের এক অফিসার জানান, পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল নির্মাণের সংখ্যা বাড়ছে। তার জন্য বাড়তি এফএআর (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) পেয়ে যাচ্ছে তারা। যার জন্য বিল্ডিংয়ের পাশে বা পিছনে জল মজুত করে রাখতে বড় বড় রিজার্ভার করা হচ্ছে। সেখানে বসানো হচ্ছে দুটো করে শক্তিশালী পাম্প— একটা জল টানার জন্য, অন্যটা ছাদে জল তোলার। প্রতিটি বিল্ডিংয়ের জন্য পুরসভা একটা জলের লাইন দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এক-একটি বহুতলে ১০ থেকে ১৬টি বা তার বেশিও ফ্ল্যাট হচ্ছে। পুরসভার একটা লাইন থেকে সবাইকে জল দেওয়া সম্ভব নয় জেনে একটি পাম্প পুরসভার কলের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছে। যে মুহূর্তে পুরসভার কলে জল আসছে, অনেক পরিমাণ জল টেনে নিচ্ছে সেই পাম্প।

পুর-তদন্তে দেখা যায়, পুরসভার কল থেকে এক ঘণ্টায় যত জল বেরোয়, পাম্পে সাকশন করে তার থেকে ১০ গুণ বেশি জল টানা যায়। স্বভাবতই আশপাশের বাড়িতে এর ফলে জলের চাপ কমে যায়। কোথাও বা জল পৌঁছয়ই না। শুরু হয় জলের জন্য হইচই। সম্প্রতি ১০ নম্বর বরো-সহ দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকায় ওই সমস্যা প্রকট হয়েছে।

মেয়র বলেন, ‘‘যাঁরা পাম্প চালিয়ে সাকশন করে জল টেনে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ওই সব বহুতলের জলের লাইন কেটে দেওয়া হবে।’’

যদিও একাধিক কাউন্সিলর বলেন, এটা তো আজ নতুন হয়নি। অনেক দিন ধরেই চলছে। মেয়র নিজে জল সরবরাহ দফতরের দায়িত্বে। অনেক আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। একই সঙ্গে ১০ নম্বর বরোর তরফে অভিযোগ জানানো হয়েছে, শহরে পরিস্রুত জলের জোগান থাকা সত্ত্বেও কেবল তাদের বরোতেই ১২৬টি গভীর নলকূপ চলছে। অথচ তাদের এলাকায় বেশ কয়েকটি জায়গায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় আর্সেনিকও মিলেছে। এই পরিস্থিতিতে পুরসভার জল সরবরাহ দফতর যে অসহায় তা ঠাহর হয়েছে ওই এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরদের কথাতেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘এ বারও বোধ হয় পরিস্রুত জলের প্রতিশ্রুতি মেটাতে পারব না।’’

Anup Chattapadhyay Drinking water KMC sovan chattopadhyay KMDA water supply
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy