প্রতীকী ছবি।
বিনা দরপত্রে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচ করে ব্লাড ব্যাঙ্ক তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এক বেসরকারি সংস্থাকে। পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদিতও হয়। কিন্তু কাজ শুরুর আগে তা আটকে গেল অফিসারদের আপত্তিতে। ব্লাড ব্যাঙ্ক করতে হলে টেন্ডার পদ্ধতি মেনেই করা উচিত বলে মনে করছেন পুর প্রশাসনের কেউ কেউ। প্রশ্ন উঠেছে, আইন মেনে কাজ হয়নি, তা জেনেও মেয়র পরিষদের বৈঠকে তা অনুমোদিত হল কী ভাবে? মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘এটা পাইলট প্রকল্প। তাই ওই সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’’
সম্প্রতি পুরসভার মালিকানাধীন রক্সি বিল্ডিংয়ের একাংশ লিজ দেওয়া নিয়ে এক বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুর প্রশাসন। সে ক্ষেত্রেও কাজটা ‘বেআইনি’ হচ্ছে বলে অফিসারেরা আপত্তি তোলেন। বাতিল হয় সেই চুক্তি তৈরির কাজ। ব্লাড ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও আপত্তি উঠেছে পুরসভার অন্দরেই।
বছরখানেক আগে পুরসভা শহরে ব্লাড ব্যাঙ্ক করার সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, রক্তের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী জোগান নেই। এর প্রধান কারণ, ব্লাড ব্যাঙ্কের সংখ্যা কম। প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়, লেক মলের ছ’তলায় পুরসভার নিজস্ব ফ্লোরে তা হবে। সেই মতো ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর পুরসভার অফিসারেরা এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ওই জায়গা ঘুরে জানিয়ে দেন, প্রস্তাবিত ব্লাড ব্যাঙ্কের পক্ষে তা উপযুক্ত। পরে কোনও ‘অজ্ঞাত’ কারণে লেক মলের জায়গা বদলে দেওয়া হয়। পুর নথি থেকে জানা গিয়েছে, পরের দিন, অর্থাৎ ৩ ডিসেম্বর মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এক নোটে জানান, কালীঘাটে পুরসভার ভবনে তা স্থানান্তরিত করা হোক। তখন প্রশ্ন ওঠে, লেক মলে তা হচ্ছে না কেন? সেখানে তো পরিকাঠামো তৈরিই ছিল। ব্লাড ব্যাঙ্ক নির্মাণে খরচও কম হত। কিন্তু মেয়রের মুখের উপরে কেউ কিছু বলার সাহস পাননি।
এর পরেই পুর প্রশাসন দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতাল সংস্থার হাতে তা তৈরির ভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর মেয়র পরিষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি ওঠে। তাতে বলা হয়, ওই বেসরকারি হাসপাতাল সংস্থা একটি প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে পুরসভাকে দিয়েছে। যন্ত্রপাতি-সহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতে প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হচ্ছে। পরে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ-সহ অন্য পদে লোক রাখার কথাও বলা হয়। পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা খরচের হিসেব দেয় সংস্থা।
স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, মেয়র পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হলেও কাজ শুরু নিয়ে নানা মহলে কথা ওঠে। দরপত্র ছাড়া এত টাকার কাজ এক সংস্থাকে কেন দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রায় সাত কোটি টাকা খরচের যে হিসেব সংস্থাটি দিয়েছিল, তা-ও অনেক বেশি বলেই জানান অফিসারেরা। আপাতত ওই প্রকল্পের জন্য নতুন করে টেন্ডার ডাকতে চায় পুর প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy