ক্যানসারের যন্ত্রণা থেকে শুরু করে হাড় কিংবা স্নায়ু সংক্রান্ত কোনও ব্যথা। পেন ম্যানেজমেন্টের ভূমিকা এখন সমস্ত ক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসকের অভাবে এ রাজ্যে এখনও এই পরিষেবা সে ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়নি। গোটা রাজ্যে মাত্র একটি প্রতিষ্ঠানে এক বছরের একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। বছরে মাত্র ১০ জন সেখান থেকে পাশ করে বেরোন। চাহিদার তুলনায় যা একেবারেই নগণ্য। অথচ স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, এখনই এই প্রশিক্ষণ আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁদের নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই। সব মিলিয়ে ব্যথা উপশমের ছবিটা এখনও অন্ধকারেই।
আরজিকর, ইএসআই-সহ রাজ্যের একাধিক সরকারি হাসপাতালে পেন ম্যানেজমেন্টের আলাদা বিভাগ রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রশিক্ষিত চিকিৎসক না থাকায় বেশিরভাগ জায়গাতেই বিভাগ সামলাচ্ছেন অ্যানাস্থেশিওলজিস্টরা। চিকিৎসকের অভাবেই সপ্তাহে সাত দিন কোনও আউটডোরে পেন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ খোলা রাখা যায় না। আরজিকরে সপ্তাহে মাত্র এক দিন পেন ম্যানেজমেন্টের আউটডোর রাখা হয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন প্রায় তিনশোর বেশি রোগী থাকেন আর পেন ম্যানেজমেন্টের চিকিৎসক থাকেন মাত্র দু’ জন। তাঁদের সাহায্য করেন অ্যানাস্থেশিওলজির এমডি পড়ুয়ারা। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে শুধুই রোগীর ব্যথা নির্ণয় নয়, প্রয়োজন মতো চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া এবং চিকিৎসার কেমন প্রভাব রোগীর দেহে পড়ছে নিয়মিত তা পর্যবেক্ষণ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই চিকিৎসকের ঘাটতি রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’
সাবেক চিকিৎসা পদ্ধতিতে অ্যানাস্থেশিওলজিস্টরা ব্যথা কমার ওষুধের সাহায্যে রোগীর চিকিৎসা করতেন। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নায়ুর সমস্যা থেকে শুরু করে ক্যানসারের যন্ত্রণা— সব সমাধানের চেষ্টা হয় আধুনিক পদ্ধতিতেই। অস্ত্রোপচার ছাড়া কী ভাবে ব্যথা কমানো যায়, সেই চেষ্টাই চলে পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতিতে। যেমন, কোমরে স্লিপ ডিস্কের সমস্যা। কোমরের হাড়ের ভিতরের জেলি বেরিয়ে এলে স্লিপ ডিস্কের সমস্যা হয়। যার জেরে হাঁটতে না পারা-সহ একাধিক শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হাড় থেকে বেরিয়ে আসা জেলি বাদ দিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাটাছেঁড়া না করেই বিভিন্ন ধরনের নিড্লের সাহায্যে ওই জেলির মতো অংশ সরিয়ে দেওয়া হয়। ওষুধের পাশাপাশি নার্ভ ব্লকস, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন, ইনফিউশন পাম্প ইমপ্লান্ট-সহ একাধিক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয় ব্যথা নিরাময়ে।
চিকিৎসকদের একাংশের মতে, পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যথা নিরাময়ের পাশাপাশি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কমাতে সাহায্য করে। যেমন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের শেষ পর্যায়ে ব্যথা উপশমের জন্য মরফিন দেওয়া হয়। কিন্তু মুখ দিয়ে মরফিন খেলে তার মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। পেন ম্যানেজমেন্ট চিকিৎসায় রোগীর মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে একটি ছোট পাম্প বসিয়ে সেখানে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মরফিন রোগীর দেহে পৌঁছে যায়। এই পদ্ধতিতে আগের তুলনায় মরফিনের ব্যবহার তিনশো ভাগের এক ভাগ হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কম।
কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে অনেক ভুক্তভোগী এই চিকিৎসার সুফল পাচ্ছেন না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, পেন ম্যানেজমেন্ট একটি পৃথক বিষয় হলেও আদতে এর সঙ্গে অ্যানাস্থেশিয়া, মনোবিজ্ঞান, স্নায়ুতত্ত্ব-সহ একাধিক বিষয় মিশে রয়েছে। তাই এমডি পাশ করার পরে পেন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে আলাদা ভাবে তিন বছরের ডিএম পড়ার পরিকাঠামো দরকার। কিন্তু সেই সুযোগ এ রাজ্যে নেই। একমাত্র ইএসআই হাসপাতালে এক বছরের প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা রয়েছে। পেন ম্যানেজমেন্টের এক চিকিৎসক গৌতম দাস বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের গবেষণার জন্য উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’’ আর জি করের অ্যানাস্থেশিয়া বিভাগের প্রধান দীপশ্রী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘খুব শীঘ্র এখানে এক বছরের প্রশিক্ষণ চালু করার কথা ভাবা হয়েছে। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে অন্যত্রও এমন চালু করার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতর উদ্যোগী হবে।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য এখনই তেমন কোনও পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেননি। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা অন্যত্র ছড়িয়ে দিতে নানা ধরনের পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে হয়। আমরা সব কিছুই করব। কিন্তু অগ্রাধিকার অনুযায়ী। কিছুটা সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy