E-Paper

জলবন্দি গাড়ি সরিয়ে ফাঁপরে পুলিশ

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত থেকে চলতে থাকা বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার দিনভর পুলিশকে সব মিলিয়ে এমন ৬৫০টি গাড়ি সরাতে হয়েছে। তার মধ্যে জলে আটকে বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২৫০।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৫
কাগজের নৌকার মতো ভাসছে গাড়ি।

কাগজের নৌকার মতো ভাসছে গাড়ি। —ফাইল চিত্র।

বাসের চাকার ধাক্কায় ধেয়ে আসা জলে কাগজের নৌকার মতো ভাসছে গাড়ি। বার কয়েক চালু করার চেষ্টা করেও লাভ না হওয়ায় চালক নেমে গাড়ির দরজা টেনে ধরে প্রাণপণে স্থির রাখার চেষ্টা করে চলেছেন। সেখানেই এর পরে হাজির হল পুলিশের ডেকে আনা রেকার ভ্যান। গাড়ির সঙ্গে রেকার ভ্যানের হুক লাগিয়ে টেনে সরানো হল গাড়ি। রেকার ভ্যানটি চলে যেতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশকর্মী ওয়াকিটকিতে বললেন, ‘‘১৬ নম্বরটা গেল স্যর। ১৬ নম্বর!’’

প্রিটোরিয়া স্ট্রিট এবং ক্যামাক স্ট্রিটের মাঝের একটি রাস্তায় জমা জলে আটকে থাকা নাগরিক জীবনের এই চিত্রই মঙ্গলবার দিনভর দেখা গিয়েছিল শহরের অন্য জায়গাতেও। পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাত থেকে চলতে থাকা বৃষ্টির জেরে মঙ্গলবার দিনভর পুলিশকে সব মিলিয়ে এমন ৬৫০টি গাড়ি সরাতে হয়েছে। তার মধ্যে জলে আটকে বিকল হয়ে যাওয়া গাড়ির সংখ্যা প্রায় ২৫০। বুধবারও একই ভাবে বৃষ্টি হওয়ায় আরও বেশ কিছু গাড়ি সরাতে হয়েছে পুলিশকে। কিন্তু গাড়িগুলি রাখা হবে কোথায়, তা নিয়েই এখন নাজেহাল পুলিশ। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এই বিকল হয়ে থাকা গাড়িগুলি চালুই করা যাচ্ছে না। বুধবার রাত পর্যন্ত খবর, প্রায় ১৫০টি গাড়ির মালিক গাড়ি নিতে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগই করেননি। যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁরা আবার দাবি করেছেন, বৃষ্টির কারণে ‘রোড সাইড অ্যাসিস্ট্যান্স’ (পথে গাড়ি বিকল হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাহায্য দেওয়ার জন্য করানো গাড়ি সংস্থার বিমা) পাওয়া যাচ্ছে না। সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করলে সেখানেও জলে আটকে বিকল হওয়া গাড়ির লম্বা লাইন পড়ে রয়েছে বলে জানানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ বুঝেই উঠতে পারছে না যে তাদের কী করণীয়!

কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের এক উদ্বিগ্ন আধিকারিক বলেন, ‘‘এ ভাবে চললে আরও ক্রেন কিনতে হবে। এত গাড়ি রাখার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নাজেহাল অবস্থা।’’ বিকল হওয়া একটি গাড়ির মালিক বললেন, ‘‘জলে ইঞ্জিন বন্ধ হলে তো ছেড়েই দিন, জলে কিছু দূর চললেই গাড়ির সার্ভিসিংয়ের খরচ ১৫০০-২০০০ টাকা বেড়ে যায়। তবে কবে গাড়ি সার্ভিস করানো যাবে, তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। গাড়ি সারানোর কোনও জায়গাতেই গাড়ি নেওয়া হচ্ছে না।’’ জলে আটকে যাওয়া একটি বাসের মালিক আবার বললেন, ‘‘ইঞ্জিন পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশে জল ঢুকে গিয়েছে। ধূলাগড়ে পাঠাতে হবে। দেড় লক্ষ টাকার বেশি লাগতেপারে। বিমা করানো আছে। তবু কতটা পাওয়া যাবে, জানি না। কবে বাস পাঠানো যাবে, তারও কোনও ঠিক নেই।’’

একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তমাল ঘোষ জানালেন, জলের কারণে যে কোনও গাড়ির এ, বি এবং সি— তিনটি স্তরে ক্ষতি হতে পারে। গাড়ির বাম্পার ছুঁই ছুঁই জলে ক্ষতি হয় ‘এ’ পর্যায়ের। সেই মেরামতির খরচ কম। গাড়ির ইঞ্জিন ডুবে ক্ষতি ‘বি’ পর্যায়ভুক্ত। গাড়িটি সম্পূর্ণ ডুবে গেলে ক্ষতি ‘সি’পর্যায়ের এবং তার খরচ সব থেকে বেশি। তমাল বলেন, ‘‘ইঞ্জিন বিগড়োলে খরচ অন্তত ৭০-৮০ হাজার। বড় গাড়িতে এই খরচ আরও বেশি। সব ক্ষেত্রে বিমা সংস্থা সেই টাকাও দেয় না। কিন্তু এই মুহূর্তে এমন গাড়ির লাইন পড়েছে সার্ভিস সেন্টারে। তবে কলকাতায় মুম্বইয়ের মতো অবস্থা হয় না বলে অনেকেই জলে গাড়ির ক্ষতি হতে পারে ভেবে বিমাও করে রাখেন না।’’ তবে কি জমা জলের বিপদ থেকে বাঁচতে আগাম বিমার পথ ভাবতে হবে? কলকাতা পুলিশের কর্তারা বলছেন, ‘‘তাতে অন্তত যদি পুলিশের উপর থেকে এমন গাড়ির বোঝা সরে!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kolkata Police drainage system

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy