Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Drinking Water Crisis

লোহাযুক্ত জল পান থেকে আদৌ কি মিলবে মুক্তি

পুর এলাকায় তিনটি জল প্রকল্প রয়েছে। তবুও জোগানে ‘তাপ্পি’ দিতে অবাধে তোলা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ জল। দক্ষিণ দমদমে পুরভোটের পরে কি মিটবে এই সমস্যা?

অপচয়: দক্ষিণ দমদমের লক্ষ্মীনারায়ণ রোডে কল থেকে অনবরত পড়ে যাচ্ছে জল।

অপচয়: দক্ষিণ দমদমের লক্ষ্মীনারায়ণ রোডে কল থেকে অনবরত পড়ে যাচ্ছে জল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:০৯
Share: Save:

পানীয় জল মেলে ঠিকই। সঙ্গে ‘উপরি পাওনা’ জলে দ্রবীভূত লোহা! ফলে জামাকাপড় তো বটেই, শৌচাগারের মেঝেও হলুদ হয়ে যায়। এমনই দাবি দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, মাটির নীচের জল তুলে সরবরাহ করার ফলেই এই ‘লোহা পান’ করতে হচ্ছে। দক্ষিণ দমদমে পুর নির্বাচনের প্রাক্কালে পরিষেবা সংক্রান্ত খোঁজ করতেই শোনা গেল বাসিন্দাদের প্রশ্ন, লোহা মেশানো জল থেকে মুক্তি কি মিলবে?

প্রশ্ন উঠেছে, পলতা, বরাহনগর-কামারহাটি এবং নিউ টাউন জল প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও কেন মাটির নীচের জল তোলা হচ্ছে? পুরসভা সূত্রের খবর, জল প্রকল্প থেকে প্রয়োজনীয় জলের সবটা মেলে না। কিছু ক্ষণ সরবরাহ করার পরেই জলের পরিমাণ কমে যায়। তখন মাটির নীচের জলেই ভরসা করতে হয়। সেই জলেই উঠছে লোহা। পুর এলাকার তৃণমূল প্রার্থীদের আবার দাবি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতেই বাধ্য হয়ে এই ব্যবস্থা নিতে হয়।

কারণ, প্রায় সাত লক্ষ জনসংখ্যার ওই পুর এলাকায় দৈনিক ৩০ মিলিয়ন গ্যালনেরও বেশি জলের চাহিদা রয়েছে। সেখানে পলতা থেকে আট এবং বরাহনগর-কামারহাটি থেকে ১২ মিলিয়ন গ্যালন জল দৈনিক আসছে। নিউ টাউন জল প্রকল্প থেকেও দৈনিক দু’মিলিয়ন গ্যালন জল পাওয়ার কথা। বাকি চাহিদা মেটে পুরসভার ওই ১১০টি গভীর নলকূপের সাহায্যে তোলা মাটির নীচের জলে।

পানীয় জলের সমস্যার কথা মেনে নিয়ে পুরসভার দাবি, এ জন্য চতুর্থ একটি জল প্রকল্পে হাত দেওয়া হয়েছে। পরিস্রুত জলের ওই প্রকল্পটি বাঙুরে হচ্ছে। এ বছরের শেষে সেখানে উৎপাদন শুরু করার চেষ্টা হচ্ছে। দৈনিক ১০ মিলিয়ন গ্যালন জল মিলবে বলে আশ্বাস কর্তৃপক্ষের। মাটির নীচ থেকে জল তোলা বন্ধ করে পরিস্রুত জলের সরবরাহ বাড়াতে নতুন ওই প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। প্রাক্তন মেয়র পারিষদ অভিজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ করতে আপাতত এক ঘণ্টা বরাদ্দ আছে। সেটা যথেষ্ট নয় জানি। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

বামেদের অভিযোগ, তাদের আমলে টালা-পলতা থেকে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পরবর্তী কালে পরিকাঠামোর আধুনিকীকরণ বা পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প তৈরি করতে ব্যর্থ পুরসভা। কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারেরও দাবি, ‘‘পানীয় জল পরিকাঠামোর উন্নতি করা প্রয়োজন।’’

এই পুর এলাকায় ক্রমশ বাড়ছে জনসংখ্যা। আবার নিত্যদিন হাজার হাজার মানুষ কাজের সূত্রে এখানে আসেন। ফলে পানীয় জলের বর্তমান পরিকাঠামো সেই চাহিদার চাপ সামলাতে ব্যর্থ, বলছেন এলাকাবাসী। কয়েকটি ওয়ার্ডে জলসঙ্কটের কথা জানাচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, ‘‘দীর্ঘ দিনের পুরনো পাইপলাইন সংস্কারের অভাবে মাঝেমধ্যেই ফেটে গিয়ে সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।’’ অসুবিধার কথা মেনে পুরসভা জানাচ্ছে, ঢালের কারণে অনেক প্রান্তিক এলাকায় জল রবরাহ বিঘ্নিত হয়। দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যানের দাবি, এই সব সমস্যা বাম আমল থেকেই আছে। তবে এখন পরিকাঠামোগত ভাবে জল সরবরাহের অনেক উন্নতি ঘটেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Drinking Water Crisis dumdum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE