Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দ্বিতীয়া থেকে ঠাকুর দেখা, ভিড় ফিকে সপ্তমীতেই

পুজোটা ঠিক কবে ছিল? কবেই বা শুরু? আর কখনই বা তার ‘ক্লাইম্যাক্স’?

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪৮
Share: Save:

পুজোটা ঠিক কবে ছিল? কবেই বা শুরু? আর কখনই বা তার ‘ক্লাইম্যাক্স’?

একাদশী থেকে দ্বাদশীতে পা রেখেও সেই ঘোর কাটছে না দর্শনার্থীদের! দ্বিতীয়া থেকে পুজোর ময়দান চষে ফেলা দর্শকেরা সপ্তমী থেকে কেমন যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। অষ্টমী আর নবমীতে ভিড় আছে, তবে সর্বত্র তা যেন চোখে পড়ার মতো নয়। কেউ কেউ বলছেন, ‘‘পুজোয় এ বার দাপটে খেলেছে পঞ্চমী আর ষষ্ঠী। মিডল অর্ডারে সপ্তমী, অষ্টমী বা নবমীর ব্যাটে কিন্তু তত রান নেই!’’

ভিড়ও যেন এ বার অনেকটা একমুখী। গন্তব্য, চেতলা। বৃহস্পতিবার, নবমীর সন্ধ্যায় এক দর্শনার্থী বলছিলেন, ‘‘এ বার চেতলা অগ্রণীর মতো ভিড় কোথাও দেখিনি। কালীঘাট মেট্রো থেকে বেরিয়ে সকলেই চেতলা সেন্ট্রাল রোড, প্যারীমোহন রায় রোড হয়ে চেতলা অগ্রণীর পথে গিয়েছেন!’’ যার জেরে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে একডালিয়া এভারগ্রিন, হিন্দুস্থান পার্ক, ত্রিধারা ও দেশপ্রিয় পার্ক। দর্শনার্থীরা বলছেন, সুরুচি সঙ্ঘের পুজো প্রতিবারই ভিড়ের রেকর্ড গড়ে। তবে এ বার চেতলা অগ্রণীও তাদের টক্কর দিয়েছে। সন্ধ্যায় ভিড় নামার পরে রাসবিহারী মোড় থেকে চেতলামুখী রাস্তা ব‌্যারিকেড করে বন্ধ করে দিতে হয়। চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সব্যসাচী রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘গত ২৫ বছরে চেতলা অগ্রণীতে এ রকম ভিড় হয়নি। ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা শুরু থেকেই তৈরি ছিলাম।’’

দক্ষিণী বা়ড়বাড়ন্তকে কিছুটা লড়াই দিল মধ্য কলকাতার সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার আর উত্তরের কুমোরটুলি পার্ক। এক বিধায়কের পুজোর জন্য ভিআইপি রোডের দমবন্ধ করা ভিড় উল্টোডাঙা মেন রোড, গ্রে স্ট্রিট হয়ে তখন সোজা চলে যাচ্ছে কুমোরটুলি, বাগবাজার, গঙ্গা লাগোয়া পুজো ময়দানে। তা-ও সপ্তমীকে মধ্যান্তর ধরলে দ্বিতীয়ার্ধে বাকি দু’দিন সেই দমবন্ধ ভিড় উধাও!

দ্বিতীয়া থেকে পথে নামা দর্শনার্থীরা অষ্টমীতেই হাল ছেড়ে দেবেন কেন? উদ্যোক্তারা দু’টি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। প্রথমত, অন্য বছরে পঞ্চমী থেকে দর্শনার্থীরা রাস্তায় নামলেও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় এ বার তা শুরু হয়েছে অনেক আগেই। দ্বিতীয়ত, পুজোর ক্যালেন্ডার এ বার দীর্ঘায়িত হয়েছে। মহালয়ার আগেই বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্বোধন হয়ে গিয়েছিল। ফলে রবিবারের ছুটির সঙ্গে পঞ্চমীর ঠাকুর দেখা মিলিয়ে নিতে পেরেছেন অনেকেই।

রাজনৈতিক মহলে অবশ্য আরও একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে। তাঁদের দাবি, চতুর্থীর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাস্তায় দেখা যায় না। পুজোর উদ্বোধন-সহ সমস্ত কাজ তিনি চতুর্থীর মধ্যেই সেরে ফেলেন। কারণ, তাঁর মতে, তিনি পথে ঘুরলে পুলিশ যে ধরনের তৎপরতা দেখায়, ভিড়ের মধ্যে সেটা হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। অন্য ‘হেভিওয়েট’ নেতারাও নিজের নিজের পুজোয় ব্যস্ত থাকেন। ফলে পথে নেমে তাঁদেরও ভিড় বাড়াতে দেখা যায় না। তবে এর মধ্যেও চাপ বাড়ে কোনও কোনও ভিভিআইপি লাটসাহেব উত্তর থেকে দক্ষিণের মণ্ডপে মণ্ডপে ছুটে বেড়ালে। এ বারও লাটসাহেবির সেই চিত্র দেখা গিয়েছে।

প্রবল বিরক্ত এক দর্শনার্থী বলছিলেন, ‘‘প্রতিমা দেখতে এসেও তাঁরা ভিভিআইপি? ঝাড়া এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে মণ্ডপের দরজায় যেতে পেরেছি। তখনই আবার দড়ি পড়ে গেল! কী না, ভিভিআইপি ঢুকছেন। ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার সময়ে এ সব লাটসাহেবি বন্ধ হওয়া দরকার।’’

পুজোকর্তারাও জানাচ্ছেন, পুজোর পরিকল্পনা করতে গিয়ে তাঁরা কিছুটা বেকুব বনে গিয়েছেন এ বার। অনেকেই মণ্ডপে ষষ্ঠী থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছিলেন। তাঁরা অবাক হয়ে দেখেছেন, দ্বিতীয়া থেকেই মানুষের ঢল। বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসবের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য দীপককুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের উদ্বোধন মহালয়ায় হয়েছিল। তার পর থেকেই ভিড় হয়েছে। এখন আর অষ্টমী-নবমীর জন্য কেউ অপেক্ষা করেন না।’’ পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, দ্বিতীয়া থেকেই তারা কোমর বেঁধে তৈরি ছিল। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা-প্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলছিলেন, ‘‘এ বার তো অনেক আগে থেকে মানুষ ঠাকুর দেখা শুরু করে দিয়েছেন। আমাদেরও আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিতে হয়েছে।’’

তবে কি আগামী বছরে দ্বিতীয়া থেকেই ভিড়ের পরিকল্পনা করতে হবে? পুলিশ ও পুজো উদ্যোক্তারা একযোগে বলছেন, ‘‘দুর্গোৎসব আর চার দিনের নেই। আমরা তৈরি। দর্শনার্থীরা মাঝপথে হাঁফিয়ে না পড়লেই হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahalaya Crime Durga Puja 2018 Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE