Advertisement
E-Paper

বাড়ি থেকে উদ্ধার মহিলার নলিকাটা দেহ, প্রশ্নে নিরাপত্তা

গলার নলি কাটা। মুখে কোপানোর দাগ। দেহের অর্ধেকটা খাট থেকে ঝুলছে। বাড়ির মালকিনের ঘরে ঢুকে এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে শিউরে ওঠেন ভাড়াটে। রবিবার ছুটির দিনে দমদম রোডের এই খুনের খবর জানাজানি হতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও তার কিনারা নিয়ে সংশয়ে এলাকার বাসিন্দারা। খুব সম্প্রতি না ঘটলেও দমদম ক্যান্টনমেন্ট, নাগেরবাজার, গোরুহাটা মোড়-সহ-একাধিক এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৬
রিনা বসু। —নিজস্ব চিত্র।

রিনা বসু। —নিজস্ব চিত্র।

গলার নলি কাটা। মুখে কোপানোর দাগ। দেহের অর্ধেকটা খাট থেকে ঝুলছে। বাড়ির মালকিনের ঘরে ঢুকে এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে শিউরে ওঠেন ভাড়াটে। রবিবার ছুটির দিনে দমদম রোডের এই খুনের খবর জানাজানি হতে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।

পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও তার কিনারা নিয়ে সংশয়ে এলাকার বাসিন্দারা। খুব সম্প্রতি না ঘটলেও দমদম ক্যান্টনমেন্ট, নাগেরবাজার, গোরুহাটা মোড়-সহ-একাধিক এলাকায় চুরি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু অভিযোগ, কিনারা দূর অস্ত্, যত দিন যাচ্ছে দমদম এবং সংলগ্ন এলাকাগুলি দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশের পক্ষে সব জায়গায় টহলদারি সম্ভব নয় বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওয়ার্ড-ভিত্তিক পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তা-ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

পুলিশকর্তারা অবশ্য পুলিশি নজরদারি না থাকার অভিযোগ মানতে চাননি। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তার দাবি, দমদম ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে এমন কিছু অলি-গলি রয়েছে যেখানে গাড়ি নিয়ে টহলদারি সম্ভব নয়। পুলিশ সেখানে মোটরবাইক নিয়ে টহল দেয়। যে সব জায়গায় তা-ও সম্ভব নয়, চেষ্টা করা হচ্ছে সাইকেল নিয়ে পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর। নিরাপত্তার এই ফাঁকই দমদম রোডের ৪৪ নম্বর দাগা কলোনির খুনের ঘটনায় সাহায্য করেছে বলে রিনাদেবীর প্রতিবেশীদের অভিযোগ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর কুড়ি-বাইশের একমাত্র ছেলে জয়কে নিয়ে রিনাদেবীর সংসার। কয়েক বছর আগে স্বামী অসীম বসু মারা গিয়েছেন। তিনি বিএসএনএলের কর্মী ছিলেন বলে পুলিশ জেনেছে। পুলিশ জানায়, দমদম রোডের উপর দাগা কলোনির পৌনে ৩ কাঠা জমির উপর রিনাদেবীর বাড়ি হলেও, জায়গাটিতে আরও দু-এক জনের ভাগ রয়েছে। ওই জমির উপরে রিনাদেবীর বাড়ি এলাকার অন্য বাড়িগুলির মতো নয়। বরং ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যে তাঁরই বাড়ির আশপাশে খালি জায়গা রয়েছে। আর তারই মধ্যে ছড়ানো ভাবে চারটে ছোট ছোট ঘর, যার একটিতে রিনাদেবী, একটিতে তাঁর ছেলে জয় থাকেন। আর বাকি দু’টি ঘর ভাড়া দেওয়া রয়েছে। এমনই এক ভাড়াটে প্রবোধ সাহানি, যিনি প্রথম দেহটি দেখতে পান। তিনি ওই ভাড়া নেওয়া ঘরে প্রিন্টিং-এর প্রেস চালান বলে পুলিশ জানিয়েছে। মূলত ভাড়ার টাকা আর স্বামীর পেনশনের টাকায় রিনাদেবী ও তাঁর ছেলের সংসার চলত।

এ দিন পুলিশকে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, রিনাদেবীর সংসারে খুব অভাব অথবা খুব স্বচ্ছলতা কোনওটাই ছিল না। তিনি প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে কাজ সেরে পুজোয় বসতেন। রবিবার সকাল সাড়ে আটটা বেজে গেলেও প্রতিবেশী মহিলা মঞ্জু সাহা রিনাদেবীর কোনও সাড়াশব্দ পাননি। তিনি প্রবোধ সাহানিকে রিনাদেবীর ঘরে গিয়ে দেখতে বলেন। আর এই প্রবোধই রিনাদেবীর ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখেন বারান্দার গ্রিলের তালা খোলা এবং ঘরের দরজাও খোলা। এর পর ঘরে ঢুকে তিনি দেখেন গলার নলি কাটা অবস্থায় রক্তাক্ত রিনাদেবীর দেহ বিছানায় পড়ে। খবর শুনে ঘুম থেকে উঠে আসেন ছেলে জয় ও অন্য ভাড়াটে এবং প্রতিবেশীরা। খবর দেওয়া হয় থানায়।

পুলিশ এলে দেখা যায়, আলমারি খোলা এবং তিন ভরির মতো গয়না আর অল্প যেটুকু টাকা ছিল তা উধাও। রিনাদেবীর এক আত্মীয়া মধুমিতা চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, সামান্য গয়না আর টাকার জন্য তাঁর মামিমা খুন হয়েছেন বলে তিনি মনে করেন না। জয় পুলিশকে জানান, শনিবার রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তিনি মায়ের ঘরে ছিলেন। রাতের খাওয়া সেরে তিনি নিজের ঘরে ফিরে যান। প্রবোধও জানান, তাঁর প্রেসে রাত দেড়টা পর্যন্ত কাজ চলেছে। তখনও পর্যন্ত তিনি কোনও কোনও শব্দ শোনেননি বা কাউকে দেখেনওনি। দু’জনেরই বক্তব্য, রিনাদেবী রাতে বারান্দার গ্রিলের গেট তালা দিয়ে রাখতেন। চেনা পরিচিত কেউ ডাকলে আগে দেখে তিনি গ্রিলের গেট খুলতেন। ফলে চেনা কেউ এসেছিল কি না সে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। তবে রিনাদেবীর ঘরের সঙ্গে কোনও শৌচাগার না থাকায় রাতে শৌচাগারে যেতে হলে গ্রিলের তালা খুলে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে তিনি রাতে শৌচাগারে গেলে কেউ ঘরে ঢুকেছিল কি না, তা-ও মাথায় রাখছে পুলিশ। ঘিঞ্জি এলাকায় ঘরে ঢুকে কেউ খুন করে গেল অথচ ভাড়াটে বা প্রতিবেশীরা কোনও শব্দ শুনতে পেলেন না কেন, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর জানান, খুনের তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

Dum Dum murder Rina Basu kolkata news online kolkata news woman murder police investigation Elderly woman neighbour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy