Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
পরিবারের আঙুল বন্ধুদের দিকে

রাতের শহরে আক্রান্ত, মারা গেলেন ইঞ্জিনিয়ার

সকাল থেকে কারও ফোন ধরছিলেন না। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি করে যখন বিরিয়ানি খেতে বেরোলেন, তখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ০৭:৩৮
Share: Save:

সকাল থেকে কারও ফোন ধরছিলেন না।

রাতে বন্ধুদের সঙ্গে গাড়ি করে যখন বিরিয়ানি খেতে বেরোলেন, তখনও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ, স্বাভাবিক।

মাঝে এক দল যুবকের সঙ্গে বচসা, হাতাহাতি। তার পরেই গাড়িতে পাওয়া গেল তাঁকে। মাথা ফেটে গলগলিয়ে রক্ত পড়ছে। অথচ বন্ধুরা বলছেন, গাড়িতে ওঠার সময়েও ঠিকই ছিলেন তিনি। এর দু’দিন পরে হাসপাতালেই মারা গেলেন ২৯ বছরের রমিত মণ্ডল।

রমিতের বাবা মনোরঞ্জন মণ্ডলের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে ডেকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে। অভিযোগের তির বন্ধুদের দিকে। বর্ধমান থেকে বি-টেক পাশ করে পুণেতে চাকরি করছিলেন ওই যুবক। বাবা মনোরঞ্জনবাবু এবং মা রত্নাদেবীর ধারণা, বন্ধুদের পাল্লায় পড়েই কয়েক মাস আগে সেই চাকরি ছেড়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। ছেলের মৃত্যুর পরে মঙ্গলবার বিকেলে বালিগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেন মনোরঞ্জনবাবু। এ দিন পুলিশ জানায়, খুনের মামলা রুজু হয়েছে। আর সেই তদন্তে নেমেই অনেকগুলো প্রশ্ন ভাবাচ্ছে তাদের।

ওই রাতে সোনারপুরের বিদ্যাসাগর সরণির বাসিন্দা রমিতের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের দাবি, পার্ক সার্কাসের এক রেস্তোরাঁ থেকে বিরিয়ানি কিনে সে রাতে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। রাত দেড়টা নাগাদ বালিগঞ্জ থানার ম্যাডক্স স্কোয়ারের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার সময়ে স্থানীয় কয়েক জন ছেলে এসে বাধা দেয়। গালিগালাজ, ধাক্কাধাক্কিও করে। গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। বন্ধুদের দাবি, তাঁরা যখন গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিলেন, পিছনের আসনে বসা রমিতের মাথাভর্তি রক্ত। কী করে তাঁর মাথা ফাটল, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন। পরে নাকি গাড়ির ভিতর থেকে নাকি একটি টালি পাওয়া যায়, যা দেখে তাঁরা অনুমান করেন, বাইরে থেকে কেউ সেটি ছুড়েছিল। এবং তাতেই রমিতের মাথা ফাটে।

পুলিশকে ওই বন্ধুদের দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, রাতেই প্রথমে শরৎ বসু রোডের বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রমিতকে। সোমবার রাতে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে শনিবার বন্ধুরা গিয়ে বালিগঞ্জ থানায় পাঁচ-ছ’জন অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

রহস্য দানা বেঁধেছে এর পরেই।

পুলিশকে মনোরঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, শুক্রবার সকাল থেকে তাঁর ছেলের ফোনে প্রায় ২০-২৫ বার ফোন করেন রমিতের দীর্ঘদিনের বন্ধু সোনারপুরেরই বাসিন্দা চিরঞ্জিত নন্দী ও দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য। বাবার বয়ান অনুযায়ী, কোনও ফোনই ধরছিলেন না রমিত। নিজের ঘরেই শুয়ে ছিলেন। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ দেবজ্যোতি এসে রমিতকে ডাকেন। তখন দেবজ্যোতি, চিরঞ্জিত এবং সুরজিৎ নস্কর ও শুভজিৎ নস্কর নামে স্থানীয় বাসিন্দা আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে চিরঞ্জিতের গাড়িতে করে বেরিয়ে যান তিনি। এর পরে রাত দুটো নাগাদ দেবজ্যোতি এবং চিরঞ্জিত রমিতের জামাইবাবু তপন মণ্ডলকে ফোন করে তাঁর আহত হওয়ার খবর দেন।

তদন্তকারীদের প্রশ্ন— প্রথমত, এত বার কেন ফোন করা হয়েছিল রমিতকে? দ্বিতীয়ত, অত রাতে শুধু বিরিয়ানি খেতে কেন তাঁরা সোনারপুর থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত এলেন? চিরঞ্জিতের দাবি, ওই রাতে তাঁরা কেউ মদ্যপান করেননি। পুলিশের কাছে সেটাও বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রমিতের আহত হওয়া ঘিরেই। বাইপাসের হাসপাতালটির তরফে এ দিন জানানো হয়, রমিতের চোটের ধরন থেকে স্পষ্ট, তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্রের কোপ দেওয়া হয়েছে। শুধু টালির আঘাতে মাথা দু’ভাগ হওয়া বেশ রহস্যজনক বলেই তাদের দাবি।

আবার, শনিবার থানায় দায়ের করা অভিযোগে চিরঞ্জিত জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে তাঁরা যখন গাড়িতে উঠছিলেন, তখন রমিত সুস্থই ছিলেন। আচমকা দেখা যায়, তাঁর মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। বয়ান অনুযায়ী, চিরঞ্জিতই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন, ঠিক তাঁর পিছনের আসনে ছিলেন রমিত। অথচ মঙ্গলবার দেখা যায়, গাড়ির পিছনের ডান দিকের জানলার কাচ অক্ষত। শুধু সামনের কাচ ভাঙা। হতে পারে, রমিতের জানলার কাচ নামানো ছিল। তদন্তকারীদের প্রশ্ন, তা হলেও কি বাইরে থেকে কেউ এত জোরে ফুটপাথের টালি ছুড়তে পারে? যার জেরে মৃত্যু হয় এক যুবকের? সে ক্ষেত্রে গাড়িতে বসা অন্য যুবকেরা তৎক্ষণাৎ ঘটনাটি টের পেলেন না কেন? কারণ, যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠার কথা রমিতের।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে কোনও সিসিটিভি নেই। ফলে সে রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা বোঝার উপায় নেই। এ দিন ম্যাডক্স স্কোয়ারে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার রাতে এলাকায় এমন কোনও ঘটনার কথা মনে করতে পারছেন না তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Engineer night-out
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE