সন্ধ্যার পরে প্যান্ডেলে কোথাওই তিলধারণের জায়গা ছিল না। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
‘খেলা’ চলছিল জোরদার! মহালয়া থেকেই যে জনস্রোত পথে নেমেছিল, তা কোনও ক্রিকেট ম্যাচের প্রথম কয়েক ওভারের ‘পাওয়ার-প্লে’ হলে নবমী অবশ্যই ‘স্লগ ওভার’। রাত ফুরোলেই দশমীর বিষাদ। তার আগে নবমীতে পা চালিয়ে আরও কিছু মণ্ডপ দেখে নেওয়ার চেষ্টা। কিন্তু তাতেই কাঁটা হয়ে দেখা দিল বৃষ্টি। তবে নবমীর শুরুটা যদি হয় বৃষ্টির, বাকিটা অবশ্যই পুজো-জনতার উদ্যমের। যা নিয়ে দিনের শেষে অনেককেই বলতে শোনা গেল, ‘‘বৃষ্টি নিয়ে ভাবলে হবে? নবমী মানেই তো শেষ। যতই বৃষ্টি আসুক, পুজোর এই দিনে ঘরে বসে থাকা যায়?’’
আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল, এ বার পুজোর শেষ দিকে বৃষ্টি হতে পারে। বাস্তবে নবমীর সকাল থেকেই শহরের আকাশের মুখ ছিল ভার। মেঘলা পরিবেশ আরও গুমোট চেহারা নেয় বেলা ১২টার পরে। এর পরে শুরু হয় বৃষ্টি। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের জেরে নিম্নচাপের বৃষ্টি হতে পারে হাওড়া, হুগলি, কলকাতা এবং পশ্চিম বর্ধমানে। উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের তার উৎপত্তিস্থল থেকে উত্তর এবং উত্তর-পূর্ব দিকে সরার কথা।
একাদশীতে বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়ার কথা রয়েছে সেটির। সেই কারণে কলকাতায় বৃষ্টি হতে পারে দশমীতেও।
সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হতেই দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে লাইনে থাকা দর্শনার্থীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। কেউ লাইন ছেড়ে ছুটছেন ছাউনির খোঁজে, কেউ ভিড়ের মধ্যেই ছাতা খুলে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেরই পুজো-উন্মাদনা এমন পর্যায়ে যে, ভিজতে ভিজতেই তাঁরা এগোচ্ছেন মণ্ডপের দিকে। বাগবাজারের মণ্ডপে তখন হোম-যজ্ঞের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। হঠাৎ বৃষ্টি এসে যাওয়ায় অনেকেই ছুটে মণ্ডপের ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁদেরই এক জন সুমেধা গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘যতটা মাথা বাঁচানো যায়। ১০৫ বছরের এই পুজো না দেখলে চলে না। বৃষ্টির ভয় নিয়েই তাই দত্তপুকুর থেকে চলে এসেছি। সেই ভিজতেই হল।’’ ওই মুহূর্তে মণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সাময়িক ভাবে বন্ধ করা এক কর্মকর্তা বললেন, ‘‘আজ জয়ের পতাকা ওড়ানো-সহ বেশ কিছু কর্মসূচি আছে আমাদের। এমনিই বিকেলের পরে, বৃষ্টির মধ্যে ভিড় আরও বাড়বে। তখন কী হবে কে জানে!’’ গত কয়েকদিন ধরেই ভিড়ের নিরিখে বহু পুজোকে টেক্কা দেওয়া সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে দেখা গেল, সকাল থেকেই লম্বা লাইন। ভিড়ের মধ্যে থেকেই কেউ বললেন, ‘‘ভাই, জোর হাওয়া দিচ্ছে তাড়াতাড়ি পা চালা। বৃষ্টির আগে রামমন্দির পৌঁছতেই হবে!’’ এর পরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হতেই দর্শনার্থীদের ঠেলাঠেলি বিপজ্জনক চেহারা নেয়। ওই পুজোর কর্তা সজল ঘোষ বললেন, ‘‘পুলিশ যখন-তখন মণ্ডপের গেট বন্ধ করে দিচ্ছে। বৃষ্টিও এসে দর্শনার্থীদের রামমন্দির দেখা বন্ধ করতে পারবে না।’’
তবে বৃষ্টিতে নাজেহাল পরিস্থিতি তৈরি হয় সুরুচি সঙ্ঘের মণ্ডপের পথে। অভিযোগ, বৃষ্টির মধ্যে দুর্গাপুর সেতুতে দাঁড়িয়ে পড়ে বহু গাড়ি। সেখানে ঘণ্টা দেড়েক আটকে থাকার পরে বহু গাড়িচালকই সেতু থেকে নেমে গড়িয়াহাটের দিকে চলে যান। সেই রাস্তাতেও তখন ছিল যানজট। কিন্তু চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপে সে সময়ে তেমন ভিড় ছিল না। সেখানে হাজির তমাল ঘোষ নামে এক যুবক বললেন, ‘‘সুরুচি দিয়ে প্রতিমা দর্শন শুরুর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেতুই পার হতে পারিনি। কিন্তু চেতলার প্রতিমা দেখতে সমস্যা হয়নি। বেশ ফাঁকা।’’
তবে সন্ধ্যার পরে কোথাওই তিলধারণের জায়গা ছিল না। অনেকেই ছাতা হাতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। গড়িয়াহাটে হিন্দুস্থান ক্লাবের কাছে এক তরুণী বললেন, ‘‘পুজোর ফ্যাশনের সঙ্গে ছাতাটা যায় না। কিন্তু মাথা বাঁচাতে এটুকু করতেই হচ্ছে। নয়তো মেকআপ ধুয়ে যাবে।’’ রাতে প্রবল ভিড় হাতিবাগান চত্বরে। সেখানে প্রসাদ নেওয়ার লাইনে দাঁড়ানো এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘বৃষ্টির ভয়ে দ্রুত ঠাকুর দেখছি। আবার নামলে খেতে ঢুকে পড়ব। কিন্তু বৃষ্টির দেখা নেই। তাই প্রসাদেই পেট ভরাচ্ছি।’’ হাতিবাগানে আবোল-তাবোলের উপরে তৈরি মণ্ডপ দেখে বেরিয়ে এক যুগলের বক্তব্য, ‘‘প্রয়োজনে বর্ষাতি পরে ঘুরব। রাতটুকুই তো বাকি!’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy