একটি দোতলা বাড়িতে পোষ্য কুকুর রাখার (ডগ ক্রেশ) সব ব্যবস্থাই করা হয়েছিল বছর দশেক আগে। কিন্তু আইনি জটিলতায় সেই ‘ডগ ক্রেশ’ এখনও চালু করা হল না। সম্প্রতি বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেল, দোতলা ভবনটির গেটে তালা ঝোলানো। ভিতরে সার দিয়ে রাখা রয়েছে ভ্যানরিকশা। গোটা ভবন আগাছায় ভর্তি।
শহরে পোষ্যপ্রেমীর সংখ্যা বাড়ছে। ছোট পরিবারে আদরের পোষ্য কুকুরকে ছেড়ে অনেকেই দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন না। নিউ টাউন কলকাতা উন্নয়ন পর্ষদ (এনকেডিএ) বছরখানেক আগে ডগ ক্রেশ চালু করলেও কলকাতায় সরকারি উদ্যোগে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু চালু হয়নি। সে কথা মাথায় রেখেই ২০১৪ সালে প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পোষ্য কুকুরদের ন্যায্য মূল্যে রাখার বন্দোবস্ত করতে ‘ডগ ক্রেশ’ চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। পূর্ণেন্দু বেশ কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ডগ ক্রেশ উদ্বোধনের বিষয়টি আটকে রয়েছে লাল ফিতের ফাঁসেই।
৪০টি কুকুর রাখার দোতলা ভবন তৈরি হলেও তা চালু করা যাচ্ছে না কেন?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ওই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়াদের ছাত্রাবাসের জন্য ২০০৭ সালে তৈরি করা শুরু হয়েছিল। ২০১৪ সালে বেলগাছিয়া থেকে পশুবিজ্ঞানের স্নাতক স্তরের পাঠক্রম নদিয়ার মোহনপুরে স্থানান্তরিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘স্নাতকস্তরের পাঠক্রম মোহনপুরে সরে যাওয়ায় বেলগাছিয়ায় ছাত্র সংখ্যা অনেক কমে যায়। কেবল স্নাতকোত্তরের পড়ুয়াদের জন্য তখন আর নতুন করে হস্টেল তৈরির প্রয়োজন পড়েনি। তত দিনে দোতলা ভবনটির অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস বলেন, ‘‘দোতলা ভবনটি পড়ে থেকে নষ্ট হত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বাড়ানোর কথাও মাথায় রেখে কলকাতায় পোষ্য কুকুরদের রাখার জন্য ক্রেশ তৈরির পরিকল্পনা মাথায় আসে। প্রথমে কেন্দ্রের (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড রিসার্চ) বরাদ্দ টাকায় হস্টেল তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। পরে রাজ্যের দেওয়া টাকায় দোতলা ভবনটির পুরো কাজ শেষ হয়। সেখানে কুকুরের থাকতে পারার মতো ছোট ছোট ঘর তৈরিও করা হয়েছিল।’’
কিন্তু এত কিছুর পরেও ক্রেশটি চালু করা গেল না কেন?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে দোতলা ওই ভবনটি ছাত্রাবাস হিসেবে চিহ্নিত করা
ছিল। কিন্তু তদানীন্তন উপাচার্য সেটিকে ডগ ক্রেশে পরিণত করলেও প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর থেকে তার জন্য অনুমতি নেননি। সূত্রের খবর, সেই সময়ে দফতরের অতিরিক্ত সচিব রচনা ভগত ভবনটি পরিদর্শনে এসে প্রশ্ন করেন, ভবনটি ছাত্রাবাস থেকে ডগ ক্রেশে রূপান্তরিত করা হলেও কেন অনুমোদন নেওয়া হয়নি? এর জন্য তিনি তৎকালীন উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাসকে কারণ দর্শানোর নির্দেশও দেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এর পরে পূর্ণেন্দু চাকরি থেকে অবসর নেওয়ায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। দোতলা ভবনটি ক্রমে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য শ্যামসুন্দর দানা বলেন, ‘‘দোতলা ভবনটিতে পোষ্য কুকুরদের রাখার কথা ভাবা হলেও আইনি জটিলতায় চালু করা যাচ্ছে না। লোকসভা ভোট মিটে গেলেই দফতরের মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসব।’’ প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের বর্তমান সচিব বিবেক কুমার পুরো বিষয়টি শুনে বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্প খাতায়-কলমে এক বার এক নামে তৈরি হলে, সেটিকে অন্য প্রকল্পে পরিবর্তন করা কঠিন। তবে পোষ্যপ্রেমীদের স্বার্থে ওই ভবনটিকে কী ভাবে ডগ ক্রেশে পরিণত করা যায়, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)