Advertisement
E-Paper

মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে সৌন্দর্যায়ন মাটি মূষিক-বাহিনীর

সাজানো বাগানেরও মূষিক প্রসব। কলকাতায় ইঁদুর বাহিনীর দাপটে এর আগে রাস্তা বসে গিয়েছিল এসপ্ল্যানেড ইস্ট, ঢাকুরিয়া এলাকায়। এ বার তাদের উপদ্রবে শহরের ঐতিহ্যশালী রাস্তার ফুটপাথে হঠাৎ ধসে যাচ্ছে সদ্য বসানো টালি, বাহারি গাছগাছালির গোড়ায় রাতারাতি গজিয়ে উঠছে গর্ত।

দেবাশিস দাস

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪০
Share
Save

সাজানো বাগানেরও মূষিক প্রসব। কলকাতায় ইঁদুর বাহিনীর দাপটে এর আগে রাস্তা বসে গিয়েছিল এসপ্ল্যানেড ইস্ট, ঢাকুরিয়া এলাকায়। এ বার তাদের উপদ্রবে শহরের ঐতিহ্যশালী রাস্তার ফুটপাথে হঠাৎ ধসে যাচ্ছে সদ্য বসানো টালি, বাহারি গাছগাছালির গোড়ায় রাতারাতি গজিয়ে উঠছে গর্ত।

ঘটনাস্থল: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংলগ্ন কুইন্স ওয়ে। পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের ঐতিহ্যশালী রাস্তাগুলির মধ্যে অন্যতম এই রাস্তা। কলকাতার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের বক্তব্য, রানি ভিক্টোরিয়ার নামেই ওই রাস্তার নামকরণ হয়েছিল।

২০১৪ সালের নভেম্বরে কুইন্স ওয়ে-র সৌন্দর্যায়নে হাত দেয় পূর্ত দফতর। বাঘা যতীন এবং অরবিন্দ ঘোষের মূর্তির পাশে নানা মরসুমি ফুলের গাছ দিয়ে তৈরি হয়েছে বাগান। চারপাশের ঘেরা জায়গায় নতুন করে ঘাসও লাগানো হয়েছে। পুরো রাস্তার দু’ধারে সারি দিয়ে লাগানো হয়েছে গাছ। ফুটপাথে বসানো হয়েছে টালি। পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, এই কাজের জন্য ব্যয় হয়েছে লাখখানেক টাকা।

কিন্তু সৌন্দর্যায়নের জেরে তাদের বাসস্থান বদল করতে নারাজ ইঁদুরেরা। তাই মাটির তলায় চলছে তাদের অবাধ ঘোরাঘুরি। মাঝেমধ্যে মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠে আসাও তাদের অভ্যাস। আর এর জেরেই কুইন্স ওয়ের ফুটপাথের মাটি বসে যাচ্ছে। টালি বসানোর তিন-চার দিন পরেই তা তুলে ফের বসাতে হচ্ছে। গাছের গোড়া আলগা হয়ে যাচ্ছে। মূষিককূলের উপদ্রবে নতুন ঘাস বসানোর জমিতেও দেখা যাচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। ফলে ওই রাস্তার সৌন্দর্যায়ন রক্ষা করতে এখন কালঘাম ছুটছে পূর্ত দফতরের। আপাতত ইঁদুরদলের বাড়বাড়ন্ত রোখার উপায়ও মিলছে না তেমন। মুচকি হেসে এক পূর্ত-আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘মনে হচ্ছে রাস্তা রক্ষায় এ বার রক্ষী নিয়োগ করতে হবে।’’

পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ২০১৩ সালের অক্টোবরে এসপ্ল্যানেড ইস্ট এলাকায় আচমকা রাস্তা বসে গিয়েছিল। কারণ খুঁজতে গিয়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা এসপ্ল্যানেড থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত মাটির নীচে ইঁদুর বাহিনীর সন্ধান পেয়েছিলেন। তাদের দাপটেই শহরের ব্যস্ত এলাকায় রাস্তার নীচে মাটি আলগা হয়ে বসে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। শুধু এসপ্ল্যানেড বা ঢাকুরিয়া নয়, সেই সময়ে বন্ডেল গেট উড়ালপুলের নীচেও তাদের দাপট দেখা গিয়েছিল।

প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কার্জন পার্ক-সহ শহরের অফিসপাড়ার একাধিক জায়গায় ধেড়ে ইঁদুরদের অসংখ্য ঘাঁটি রয়েছে। অফিসপাড়া সংলগ্ন এলাকায় অজস্র খাবারের দোকানের উচ্ছিষ্ট এবং ডাস্টবিনের কল্যাণে এদের খাদ্যভাণ্ডারে কখনওই টান পড়ে না। তাই শহরের প্রাণকেন্দ্রে তাদের এত দাপট। মাটির নীচে সুড়ঙ্গ কেটে এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে যাওয়ার ব্যাপারেও মূষিকেরা ওস্তাদ।

কলকাতা চিড়িয়াখানার প্রাক্তন মুখ্য-চিকিৎসক এবং রোডেন্ট এক্সপার্ট বা ইঁদুরজাতীয় প্রাণী বিশেষজ্ঞ স্বপন শুর বলেন, ‘‘মধ্য কলকাতার ওই অঞ্চল জুড়ে যে ধরনের ইঁদুরের দৌরাত্ম্য, তারা মূলত জার্বিল এবং ব্যান্ডিকট প্রজাতির। এরা নিজেদের ঘর-বাড়ি বানানোর জায়গাটা খুব ভাল করে চেনে। সৌন্দর্যায়নের ফলে সাময়িক ভাবে সরে গেলেও তারা ফের ভিক্টোরিয়ার আশপাশে জায়গা খুঁজে নেবে। ভিক্টোরিয়ার বাগানেও ঘর বসাতে পারে তারা। সে ক্ষেত্রে ভিক্টোরিয়ার সামনে যে সব খোলা খাবার বিক্রি হয়, তা থেকে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।’’

পূর্ত দফতরের সিটি ডিভিশনের চিফ এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কনকেন্দু সিংহ ইঁদুরের উপদ্রবে কুইন্স ওয়ে-র সৌন্দর্যায়ন ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় ইঁদুরের উপদ্রব রয়েছে। কী ভাবে তা কমানো যায়, সে বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞ দলের মতামত নেব। সার্বিক ভাবে কুইন্স ওয়ে-র সৌন্দর্যায়ন রক্ষা করার জন্য আমরা নজরদারির ব্যবস্থা করেছি।’’

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

esplanade dhakuria eviction

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}