Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Cyber Crime

লগ্নি বা ভ্রমণের সাইবার-টোপ নিয়ে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞেরা

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে আরও বেশি সক্রিয় থাকে জালিয়াতেরা। বিশেষত, ঘুরতে যাওয়ার ভুয়ো ওয়েবসাইটে বা পুজোয় অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের টোপ দিয়ে পাতা হয় ফাঁদ।

representational image

—প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৬:৫৫
Share: Save:

গত বছর পুজোর বোনাস পাওয়ার পর পরই শীতের ছুটিতে গ্যাংটকের একটি হোটেলে অনলাইনে বুকিং সেরে রেখেছিলেন গড়িয়াহাটের অনির্বাণ রায়। ইন্টারনেটে হোটেলের ওয়েবসাইট দেখে ঘর বুক করেন তিনি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাঁর নামে ঘরের বুকিংই হয়নি! এমনকি, যে ওয়েবসাইট থেকে তিনি বুক করেন, সেটি নাকি ভুয়ো! তত ক্ষণে ওই ব্যক্তির পকেট থেকে খসে গিয়েছে কয়েক হাজার টাকা।

পুজোয় বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাবেন বলে অনলাইনে হেলিকপ্টারের টিকিট কাটতে গিয়ে কয়েক হাজার টাকা খোয়ান মানিকতলার প্রসেনজিৎ রায়। বৈষ্ণোদেবী মন্দিরে যাওয়ার জন্য যেখান থেকে হেলিকপ্টার ছাড়ে, সেখানে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে টিকিট কেটেছেন, সেটি আদৌ ওই ভ্রমণ সংস্থার নয়।

সাইবার বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, পুজোর সময়ে যে হেতু মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন হয়, তাই আরও বেশি সক্রিয় থাকে জালিয়াতেরা। বিশেষত, ঘুরতে যাওয়ার ভুয়ো ওয়েবসাইটে বা পুজোয় অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের টোপ দিয়ে পাতা হয় ফাঁদ। তাই সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ভাল ভাবে খতিয়ে দেখে তবেই বুকিং করা উচিত। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, প্রয়োজনে চেনা পর্যটন সংস্থার মাধ্যমে বা কোনও হোটেলের ওয়েবসাইট ভাল ভাবে যাচাই করে, দরকারে সেখানে ফোনে খোঁজ নিয়ে বুক করা ভাল। হোটেল বুক করার সময়ে অচেনা লিঙ্কে ক্লিক না করার কথাও বলছেন তাঁরা। প্রসঙ্গত, বর্তমানে বেড়াতে গেলে বিভিন্ন হোটেল কর্তৃপক্ষ অতিথিদের পরিচয়পত্র দেখতে চান। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এমন ক্ষেত্রে আধার কার্ডের বদলে অন্য সচিত্র পরিচয়পত্র যেমন ভোটার কার্ড বা ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া ভাল।

সাইবার বিশেষজ্ঞ অভিষেক মিত্রের মতে, সমাজমাধ্যমে নানা ধরনের ব্যবসার প্রস্তাব থাকে। সেগুলির মধ্যে অনেকগুলি ভুয়ো, এমন কিছু অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন। ওই ব্যবসায় লগ্নি করার কিছু দিন পরেই দেখা যায়, ভুয়ো সংস্থাটির তরফে বলা হচ্ছে, লগ্নির সময়ে কোনও নিয়ম মানা হয়নি। তার জন্য অনলাইনে জরিমানা দিতে হবে। অভিষেক বলছেন, ‘‘সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে জালিয়াতেরা।’’

সাইবার বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানান, পুজোয় ঘরে বসে অতিরিক্ত আয়ের প্রলোভন দিয়ে অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিচ্ছে প্রতারকেরা। তিনি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে হয়তো কেউ দেখলেন, তিনি কিছু উপার্জন করেছেন। এর পরে অতিরিক্ত আয়ের জন্য বিভিন্ন কৌশলে তাঁকে ফাঁদে পা দিতে বাধ্য করা হবে। সেখান থেকে কিছু টাকা এলে তা বিনিয়োগ করার কথা বলা হবে। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লগ্নি করার কথাও বলতে পারে। এ ভাবে বহু টাকা যখন বিনিয়োগ হয়ে যাবে, তখন হয়তো দেখা যাবে, সেই সংস্থাটির কোনও অস্তিত্বই নেই।’’ বিভাস জানাচ্ছেন, এ ভাবে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন।

পুজোয় অনেকেই চাঁদা দেন অনলাইনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিউআর কোড স্ক্যান করে চাঁদা দেওয়ায় অসুবিধা নেই। তবে, অনেক পুজো কমিটিই জানাচ্ছে, তারা অফলাইনে চাঁদা নিতে বেশি আগ্রহী। সে ক্ষেত্রে বাড়ি গিয়ে চাঁদা চাওয়া ও যিনি চাঁদা দিচ্ছেন, তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। দূরে যাঁরা থাকেন, তাঁদের ক্ষেত্রে অনলাইনে চাঁদা নিচ্ছে পুজো কমিটিগুলি। সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অনলাইনে চাঁদা দিতে গেলে পুজো কমিটির চেনা কারও সঙ্গে কথা বলা উচিত। অচেনা লিঙ্কে ক্লিক করে না দেওয়াই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Kolkata Police Durga Puja 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE