Advertisement
E-Paper

আনন্দবাজার ডট কম-এ খবর পড়ে দুর্গাপিতুরি লেনে মেট্রোর কর্তারা, ফাটল ও কম্পন দেখে এলেন সরেজমিনে, ফের আশ্বাস!

বৌবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের নীচ দিয়ে গিয়েছে কলকাতা মেট্রোর ইস্ট-ওয়েস্ট রুটের লাইন। সম্প্রতি যে লাইনের মাধ্যমে পাতালপথে জুড়ে গিয়েছে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ। সেখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কাটেনি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২:১১
বৌবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের দুর্ভোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর প্রতিবেদন।

বৌবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনের দুর্ভোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালেই প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম-এর প্রতিবেদন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম-এ খবর প্রকাশের পর অবশেষে বৌবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনে গেলেন কলকাতা মেট্রোর আধিকারিকেরা। পরিস্থিতি দেখে এলেন সরেজমিনে। বাসিন্দাদের সমস্যাগুলি শুনে, মেট্রো-যাত্রায় কম্পন অনুভব করে এসেছেন তাঁরা। আবার দিয়ে এসেছেন আশ্বাস।

বৌবাজারের এই অংশের ঠিক নীচ দিয়ে গিয়েছে কলকাতা মেট্রোর ইস্ট-ওয়েস্ট রুটের লাইন। সম্প্রতি যে লাইনের মাধ্যমে পাতালপথে জুড়ে গিয়েছে ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহ। প্রতি দিন মেট্রো চলছে গমগমিয়ে। আর উপরে দুর্গাপিতুরি লেনের বাড়িগুলি থরথর করে কাঁপছে। দেওয়ালে চওড়া হচ্ছে ফাটল। সেখান থেকে বর্ষার জল গড়িয়ে পড়ছে শোয়ার ঘরে, রান্নাঘরে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই ধরনের সমস্যাগুলিকে মেট্রো কর্তৃপক্ষ গুরুত্বই দিচ্ছেন না। বার বার ডাকা সত্ত্বেও কেউ সাড়া দিচ্ছেন না, বাড়ি মেরামতের কোনও ব্যবস্থা করছেন না। বৃহস্পতিবার সকালে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার ডট কম-এ। তার পরেই নড়েচড়ে বসেন কর্তৃপক্ষ। বিকেলের মধ্যে মেট্রো কর্তারা বৌবাজারে যান এবং ফাটল ও কম্পন দেখে আসেন।

মেট্রো কর্তৃপক্ষের সাড়া পেয়ে উচ্ছ্বসিত ব্যবসায়ী পরিতোষ কর। দুর্গাপিতুরি লেন লাগোয়া বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে তাঁর ছোট্ট দোকান। ধর্মতলা-শিয়ালদহ মেট্রো চালু হওয়ার পর থেকে অষ্টপ্রহর সেই দোকানঘর কাঁপছে। রাত বা়ড়লে শব্দ আরও জোরালো হচ্ছে। আতঙ্কে ঘুম উড়েছিল পরিতোষদের, কখন হুড়মুড়িয়ে সব ভেঙে পড়ে! সন্ধ্যায় আনন্দবাজার ডট কম-কে তিনি ফোনে বললেন, ‘‘আপনাদের খবর দেখে মেট্রোর লোকজন আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে এক বার, বিকেলে এক বার এসেছিলেন। নিজেরা আওয়াজ শুনেছেন, কম্পন অনুভব করেছেন। সমস্যা যে রয়েছে, মেনে নিয়েছেন। এ কথা উপরমহলে জানিয়ে দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।’’ কর্তাদের আশ্বাসে খুশি? পরিতোষের গলায় তৃপ্তির সুর, ‘‘আমরা বললে তো কেউ শুনছিল না, আপনাদের কথা ওঁদের কানে পৌঁছোল, এটাই অনেক। আমি অনেক বার ওঁদের অফিসে গিয়ে লিখিত ভাবে জানিয়ে এসেছিলাম। পাত্তা দেয়নি কেউ। আজ আমার ঘরের ফাটল ওঁদের দেখালাম। এখন বর্ষাকাল। ওঁরাও মেনে নিলেন, যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ছাদ, দেওয়াল এবং পাঁচিল ওঁরা সারিয়ে দিয়ে যাবেন বলেছেন।’’

মেট্রো কর্তারা গিয়েছিলেন সোমনাথ ভারতীদের বাড়িতেও। কিছু দিন আগে তাঁদের ঘরে ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়েছিল। একটি টুকরো প়ড়েছিল সোমনাথের অসুস্থ মায়ের কাঁধেও। অভিযোগ, মেট্রো কর্তৃপক্ষকে জানালেও তাঁরা ফিরে তাকাননি। সেই সোমনাথ আনন্দবাজার ডট কম-কে ফোনে বললেন, ‘‘আপনাদের খবর পড়ে মেট্রোর লোকজন আমাদের বাড়িতেও এসেছিলেন বার দুয়েক। আমি যখন সমস্যার কথা জানিয়েছিলাম, ওঁরা গুরুত্ব দেননি। এখন সব দেখে গেলেন। ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা হলে জানাতে বলেছেন। সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।’’ দুর্গাপিতুরি লেনের অনিতা সাউদের বাড়িতেও গিয়েছিলেন মেট্রোর আধিকারিকেরা। তাঁদের রান্নাঘরের ছাদ থেকে জল পড়ে। বর্ষাশেষে তা সারিয়ে দেওয়া হবে বলে আগেই আশ্বাস পেয়েছিলেন অনিতারা। বৃহস্পতিবারও নতুন করে আশ্বাস মিলেছে।

দুর্গাপিতুরি লেনের বাড়িতে প্রথম ফাটল দেখা দেয় ২০১৯ সালে। প্রথমে কিছু দিনের জন্য হোটেলে থেকে সকলে আবার ঘরে ফিরেছিলেন। ২০২২ সালের পর মেট্রোর কাজের জন্য টানা দু’বছর তাঁদের ঘরছাড়া থাকতে হয়। অনেকে এখনও বাড়িতে ফিরতে পারেননি। বেশ কিছু বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। কিছু কিছু বাড়ি মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এখনও ঘরছাড়া, মেট্রো চালু হয়ে গেলেও তাঁরা ভিটে ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা এখনও পাননি। কবে কাজ শেষ হবে, কেউ বলতে পারছেন না। আর যাঁরা দুর্গাপিতুরি লেনেই মাথা গুঁজে আছেন, তাঁদের নিত্যসঙ্গী আতঙ্ক। ধর্মতলার সঙ্গে শিয়ালদহ জুড়ে শহরবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসী চান, দ্রুত হাসি ফিরুক দুর্গাপিতুরি লেনেও।

Kolkata Metro East West Metro Bowbazar durga pithuri lane
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy