Advertisement
E-Paper

টাকা বদলের লড়াই, কালঘাম শহরের

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বাতিল হয়েছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। অসুবিধা মেনে নিতে হবে, এটা আত্মস্থ করে এ বার নোট বদলাতে ব্যস্ত হয়েছেন শহরবাসী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৩
ভিড়ের চাপ সামাল দিতে বাইরেও খোলা হয়েছে কাউন্টার। বৃহস্পতিবার নিউ আলিপুরে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। — সুদীপ্ত ভৌমিক

ভিড়ের চাপ সামাল দিতে বাইরেও খোলা হয়েছে কাউন্টার। বৃহস্পতিবার নিউ আলিপুরে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায়। — সুদীপ্ত ভৌমিক

প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা ধাতস্থ হয়েছেন সাধারণ মানুষ। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বাতিল হয়েছে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। অসুবিধা মেনে নিতে হবে, এটা আত্মস্থ করে এ বার নোট বদলাতে ব্যস্ত হয়েছেন শহরবাসী।

বুধবার বন্ধ ছিল ব্যাঙ্ক পরিষেবা। বৃহস্পতিবার থেকে বাতিল ৫০০, ১০০০ টাকার নোট বদল করা শুরু হল। কোথাও নোট বদলে নিতে পেরে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পরেও মুখে যুদ্ধজয়ের হাসি। কোথাও আবার ‘টাকা ফুরিয়ে যাওয়া’য় দিনভর অপেক্ষা করাই বৃথা হল। ক্ষোভ-অসন্তোষ এবং ছোটখাটো ঝামেলাও বাধল কোথাও কোথাও। তবে শহর জুড়ে এই জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে এক দিকে যেমন ব্যাঙ্কগুলি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটার চেষ্টা করল, তেমনই দিনভর ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিলেন সাধারণ মানুষও।

প্রাতর্ভ্রমণ সেরেই...

নোট বদলাতে সকাল সকাল লাইন দিতে হবে। তাই প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে বাড়ি না ফিরে সোজা ব্যাঙ্কের সামনে। বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়েই চাদরের সঙ্গে আধার কার্ড, সচিত্র প্রমাণপত্রের ফোটোকপি আর ৫০০-র নোটের বান্ডিলে হাজার চারেক টাকা। বাড়ি ফেরেননি দমদমের অজয় চক্রবর্তী। এমনকী বাজারমুখোও না হয়ে পাড়ার দোকান থেকে চা-বিস্কুট খেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। সকাল তখন সবে সাড়ে আটটা। অজয়বাবুর কথায়, ‘‘সকাল সকাল লাইন দিলাম। বেলা বাড়লে যদি টাকা ফুরিয়ে যায়? আজ টাকা না বদলালে খুব সমস্যা হবে।’’ অজয়বাবুর মতো অনেকেই ভোরবেলায় ব্যাঙ্কের সামনে লাইন দিয়েছেন। টাকা ‘ফুরিয়ে’ যাওয়ার আশঙ্কাতেই তা করা, এমনটাই জানিয়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। উত্তর শহরতলির ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের সামনে তখন পনেরো জন সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মিনিট চল্লিশ পরেই সেই লাইনে গ্রাহকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল প্রায় একশো।

‘বয়স হয়েছে,দেরি সইবে না’

বয়স বাড়ার সঙ্গেই বেড়েছে দুশ্চিন্তার অভ্যাস। টাকা বদলের জন্য আগামী ৪৯ দিন কি আর অপেক্ষা করা যায়? সকাল-সকাল তাই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে। বহু প্রবীণ মানুষের পেনশন অ্যাকাউন্ট সেখানেই। ফলে মাসের প্রথমে যাঁরা টাকা তুলেছিলেন, মঙ্গলবার নোট অচল হয়ে যেতেই বিপদে পড়েছেন তাঁরা। লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা ৭০ বছরের দেবাশিস চক্রবর্তী যেমন। বললেন, ‘‘পেনশনের টাকাই ভরসা। সেগুলো সময়ে হাতে না পেলে ভাত জোটানোই মুশকিল হয়ে যাবে। তাই আর দেরি করিনি। আজই চলে এসেছি।’’

‘লাইনে আছি,অফিসে নেই’

টাকা লেনদেনের কাজ সারতে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন অনেকেই। বহু সরকারি দফতরেই এ দিন তাই ছিল ছুটির মেজাজ। নেতাজি নগরের বেসরকারি ব্যাঙ্কে নোট বদল করতে গিয়ে অফিসযাত্রা বাতিল করতে হল অর্পিতা রায়কে। ‘‘টাকা না বদলালে আমার আর একটা দিনও চলত না। তাই বাধ্য হয়েই ছুটি নিয়ে এলাম,’’ বললেন তিনি।

দীর্ঘ অপেক্ষা। বৃহস্পতিবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বাইরে। — স্বাতী চক্রবর্তী

সকাল থেকেহাজির ওঁরাও

ব্যাঙ্কের সামনে যেমন সকাল থেকেই গ্রাহকদের ভিড়, তেমনই নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও অন্য দিনের তুলনায় বেশি। লাইন সামাল দিতে এ দিন সকাল দশটার আগে হাজির তাঁরা। ব্যাঙ্কের সামনে অসুস্থ ও বয়স্কদের যাতে বেশি ক্ষণ দাঁড়াতে না হয়, তার জন্য সল্টলেকের এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় চেয়ারের ব্যবস্থা হয়েছিল। ব্যাঙ্কের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে অলিখিত ‘হেল্প ডেস্ক’ খুলে ফেলেন বিভিন্ন শাখার নিরাপত্তারক্ষীরা। ব্যাঙ্কে ঢোকার আগেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রাহকদের টাকা জমা দেওয়া, টাকা বদলানোর ফর্ম হাতে তুলে দেন তাঁরাই। নিউ আলিপুরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক রক্ষীর কথায়, ‘‘কালই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বৃহস্পতিবার সকাল আটটা থেকে ব্যাঙ্কের সামনে ডিউটি দিতে হবে। তাই সময় মতো চলে এসেছি।’’

উর্দিধারীর নজরে

শহরের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ব্যাঙ্কের নিরাপত্তায় পুলিশের টহলদারি চোখে পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কখনও বাইকে, কখনও গাড়িতে নজরদারি চলেছে দিনভর। হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট এলাকায় গ্রাহকদের সঙ্গে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তারক্ষীদের সামান্য বচসা বেধে গিয়েছিল। পুলিশের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

বেলা বাড়তেই শেষ

বেলা গড়াতেই সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কের বহু শাখায় একশো টাকার নোট শেষ হয়ে যায়। সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হয় পরিষেবা। যোধপুর পার্কের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় যেমন সকাল এগারোটাতেই টাকা শেষ হয়ে লেনদেন বন্ধ করে দিতে হয়। ঘণ্টাখানেক পরে একটি গাড়ি করে ব্যাঙ্কে টাকা আসে। ফের শুরু হয় পরিষেবা। বেলা ১১-৪০ নাগাদ নেতাজিনগরে এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখাতেও একই হাল। ব্যাঙ্কের সামনে তখন দাঁড়িয়ে কয়েকশো গ্রাহক। বাধ্য হয়েই বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। আড়াই ঘণ্টা পরিষেবা বন্ধ থাকার পরে টাকা এলে ফের ব্যাঙ্কে লেনদেন চালু হয়। বেলা সাড়ে ১২টার পরে বহু ব্যাঙ্কের শাখার ম্যানেজারেরাই জানিয়ে দেন, ৫০০ ও ১০০০-এর নোটের বদলে নতুন টাকা পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র বাতিল টাকা জমা নেওয়া চলবে। ফলে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়েও বিফল মনোরথ হয়েই ফিরতে হয়েছে অনেককে। যেমন ব্রড স্ট্রিটের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ফিরে যান সৌগত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকাল-সকাল লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ রক্ষী এসে বলছেন, টাকা শেষ। সারা দিনের খাটুনিটাই বেকার।’’ তারাতলা, দেশপ্রিয় পার্ক ইত্যাদি বহু জায়গায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখায় জানিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে অ্যাকাউন্ট না থাকলে লেনদেন হবে না। সমস্যায় পড়েন বহু গ্রাহক।

আছে, কিন্তু নেই...

না, নোট শেষ হয়নি এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের টালিগঞ্জ শাখায়। সন্ধ্যা ছ’টা অবধি ব্যাঙ্ক খোলা থাকার কথা। দিনভর লেনদেন চললেও পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদই ব্যাঙ্ককর্মীরা জানিয়ে দিলেন, তখনও দরজার বাইরে থাকা গ্রাহকেরা যেন চলে যান। হঠাৎ? তবে কি এখানেও টাকা শেষ হয়ে গেল। জবাব মিলল, নোট আছে যথেষ্টই। তবে তখনও ব্যাঙ্কের ভিতরে যত লোক রয়েছেন, তাঁদের লেনদেন শেষ করতেই রাত কাবার হয়ে যেতে পারে!

ডাকঘরের ‘না’

আর পাঁচটা পোস্ট অফিসের মতো বেলঘরিয়া পোস্ট অফিসেও ভিড় জমেছিল সকাল থেকেই। গ্রাহকদের একাংশের অভিযোগ, এ দিন ওই পোস্ট অফিস স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, নোট বদল হবে না। এমনকী, দুপুর ১টার মধ্যে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, যাঁরা ওই সময়ের আগে লাইন দিয়েছেন, জমা নেওয়া হবে শুধু তাঁদের টাকাই। তার পরে আর নতুন করে কারও টাকা নেওয়া হবে না। শুধু বেলঘরিয়া নয়, কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে আরও বেশ কিছু পোস্ট অফিসে আমজনতাকে ভুগতে হয়েছে এ দিন। উঠেছে কয়েক ঘণ্টাতেই টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার অভিযোগও।

Bank Currency note Extra counter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy