Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আতান্তরে ক্যানসার রোগীরা

এ দিন লেকটাউনের ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা গেল, দু’জন নিরাপত্তারক্ষী বসে রয়েছেন। সব শয্যা খালি। এক তলার কেবিনের শয্যা সাজানো থাকলেও দোতলার ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্ডে ঢুকে দেখা গেল, এলোমেলো ভাবে গোটা ঘর জুড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন জিনিস।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০১:০৯
Share: Save:

সপ্তাহের শুরুতে রোগীর যাওয়া-আসা চলত অনবরত। সিঁড়ির পাশে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকতেন রোগীর আত্মীয়েরা। কিন্তু সপ্তাহান্তে ছবিটা বদলে গেল। শুধুই চিন্তিত পরিজনদের ভিড় নার্সিংহোমের সামনে।

শনিবার লেকটাউনের এস কে দেব রোডের ক্রিটিক্যাল ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট রিসার্চ সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দমদমের বাসিন্দা সোমনাথ রায়। সঙ্গে তাঁর ছেলে। এক কর্মী তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, নার্সিংহোমের ডাক্তারবাবুর ওষুধ খারাপ নয়। ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু বাবা-ছেলে সে সব কথায় কান দিচ্ছেন না। তাঁদের দাবি, ‘‘নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জরুরি কথা আছে। এক বার কেউ বেরিয়ে আসুন।’’

কেন এভাবে দাঁড়িয়ে ওই প্রৌঢ় ও যুবক? সোমনাথবাবু জানান, মাস খানেক আগে তাঁর স্ত্রীর কোলনে ক্যানসার ধরা পড়েছে। ‘চিকিৎসক’ অরোদীপ চট্টোপাধ্যায়কে দেখানো হলে তিনি নার্সিংহোমে ভর্তির পরামর্শ দেন। বুধবার তাঁর স্ত্রীকে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যম থেকে তাঁরা জানতে পারেন, ভুয়ো চিকিৎসক অভিযোগে পুলিশ অরোদীপকে গ্রেফতার করেছে। নার্সিংহোমে ছুটে এলে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন, রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। টাকা দিতে হবে না। শুক্রবার সকালে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলা হয়। কিন্তু ইতিমধ্যেই তাঁরা চল্লিশ হাজার টাকা জমা করে দিয়েছেন। সেই টাকার কী হবে? তাঁদের দাবি, নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

সোমনাথবাবু জানান, তিনি একা ভুক্তভোগী নন। অরোদীপের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বহু মানুষের কপালে। বুধবার সকালে যখন তিনি নার্সিংহোমে যান, তখন বহু ক্যানসার আক্রান্তের পরিজনেরা সেখানে ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে তাঁদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নার্সিংহোম। একই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছেন বেলেঘাটার প্রদীপ সাহা। তাঁর বাবা নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার ওই চিকিৎসক গ্রেফতার হয়েছেন শুনে তিনিও ছুটে আসেন। শুক্রবার তাঁর বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ফোন করেন। কিন্তু চিকিৎসার জন্য যে টাকা জমা দিয়েছেন, তা কবে ফেরত পাবেন জানাতে পারেনি নার্সিংহোম।

এ দিন লেকটাউনের ওই নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা গেল, দু’জন নিরাপত্তারক্ষী বসে রয়েছেন। সব শয্যা খালি। এক তলার কেবিনের শয্যা সাজানো থাকলেও দোতলার ক্যানসার ম্যানেজমেন্ট ওয়ার্ডে ঢুকে দেখা গেল, এলোমেলো ভাবে গোটা ঘর জুড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন জিনিস। কোনও শয্যাতেই চাদর নেই, পর্দাগুলি মাটিতে পড়ে। নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কোথায়? কোনও উত্তর মেলেনি।

স্থানীয়েরা জানান, নার্সিংহোমে একাধিক অ্যালোপ্যাথির ডাক্তারেরও দেখা মিলত। নানা সরকারি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারেরা নিয়মিত আসতেন। ব়ৃহস্পতিবারের পর অবশ্য কাউকেই দেখা যায়নি।

বুধবার গ্রেফতার করা হয় ওই নার্সিংহোমের কর্তা অরোদীপ চট্টোপাধ্যায়কে। অভিযোগ, চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ক্যানসারের চিকিৎসা করলেও তাঁর কোনও বৈধ শংসাপত্র নেই। এ দিন ফের তাঁকে আদালতে তোলা হলে ৪ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cancer arrest Fake doctor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE