Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Fake Police

Fake Police: মাধ্যমিক পেরোতে পারেনি নকল ডিএসপি

মাধ্যমিকের চৌকাঠও পেরোয়নি সে। অথচ, নিজের পরিচয় দিত ডিএসপি বলে! ভুয়ো ডিএসপি-কাণ্ডে তদন্ত যত এগোচ্ছে, মূল অভিযুক্ত মাসুদ রানা সম্পর্কে এমনই সব তথ্য সামনে আসছে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ০৫:০২
Share: Save:

মাধ্যমিকের চৌকাঠও পেরোয়নি সে। অথচ, নিজের পরিচয় দিত ডিএসপি বলে! বছর কয়েকের মধ্যেই বাড়ি, সঙ্গে মোটা টাকা। ভুয়ো ডিএসপি-কাণ্ডে তদন্ত যত এগোচ্ছে, মূল অভিযুক্ত মাসুদ রানা সম্পর্কে এমনই সব তথ্য সামনে আসছে। যা দেখে তদন্তকারীদের একাংশের প্রশ্ন, ‘‘যে ছেলে মাধ্যমিকই পাশ করেনি, সে রাজ্য পুলিশের এক জন আইপিএসের মতো হাবভাব নকল করল কী করে?’’

কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল ও হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়ার নামে চলা একটি প্রতারণা-চক্রকে সম্প্রতি ধরেছে লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা। ধৃত মাসুদ রানা, রবি মুর্মু, শুভ্র নাগ রায় ও পরিতোষ বর্মণের মধ্যে মাসুদ এবং রবি নিজেদের উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা বলে পরিচয় দিত। শুভ্র নিজেকে সংবাদমাধ্যমের উচ্চপদস্থ কর্তা বলে দাবি করত। আর পরিতোষ ছিল চাকরিপ্রার্থীদের ধরে আনার দালাল। রবি আগে কলকাতা পুলিশে চাকরি করলেও প্রতারণার একটি পুরনো মামলায় বছর কয়েক আগেই তার চাকরি যায়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত চার জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর, মালদহ-সহ বেশ কিছু জেলায় এই চক্রের জাল বিস্তৃত ছিল। বছর দুয়েক ধরে চক্রটি আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মূলত দালালদের মাধ্যমেই জেলায় জেলায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষাকর্মীদের যোগসাজশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছে পৌঁছত চক্রের সদস্যেরা। তাঁদের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিত। দফায় দফায় সেই টাকা নেওয়া হত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণের নাম করে চাকরিপ্রার্থীদের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হত। এবং তার বিনিময়ে নেওয়া হত মোটা টাকা। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেশ কিছু জেলায় তদন্তকারীরা হানা দিতে পারেন বলেও সূত্রের খবর। এই চক্রে জেলার আরও কয়েক জন যুক্ত থাকতে পারেন বলেই তদন্তকারীদের অনুমান।

এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজেকে ডিএসপি হিসেবে পরিচয় দেওয়া, মুর্শিদাবাদের রানিতলার মাসুদ রানা আদতে মাধ্যমিকও পাশ করেনি। তার বাবা মিনাহাজউদ্দিন কৃষিজীবী। মাসুদের ভাই গাড়ি চালান। বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। তবে মাসুদের এমন কাণ্ডে রীতিমতো হতবাক গোটা গ্রাম। শুক্রবার সেই চর্চাতেই ব্যস্ত ছিল গোটা গ্রাম। তবে, নিজের ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করে গ্রামের কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সাহস করেনি মাসুদ।

গ্রাম সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পাঁচেক আগে মাসুদের বিয়ে হয়। তার একটি চার বছরের সন্তানও রয়েছে। কিছু দিন আগেই মাসুদের বাড়ি তৈরির কাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নিজেকে পুলিশের বড় অফিসার বলেই পরিচয় দিত মাসুদ। তবে, পুলিশের কোন পদে সে চাকরি করে, তা বলত না। বাড়ি ফেরার সময়ে পকেট ভর্তি টাকা থাকত মাসুদের। তার ভাই আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘‘দিন দুয়েকের মধ্যেই দাদার বাড়িতে আসার কথা ছিল। তার পরে টিভি খুলে খবরে দেখি, এই কাণ্ড।’’ মাসুদের বাবা বলেন, ‘‘আমরা এ সবের কিছুই জানি না। খবর দেখে এখন জানতে পারছি।’’ খাইরুল হক নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘ওই মাধ্যমিক ফেল ছেলের পেটে পেটে যে এত ছিল, তা কে জানত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Fake Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE