Advertisement
E-Paper

‘ওই মেয়েটির মা হলে গুড্ডুর ফাঁসি চাইতাম’

রাতের শহরে ফুটপাথ থেকে এক বালিকাকে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত গুড্ডু সিংহের মা তাঁর ছেলের জামিনের জন্য কোনও আইনজীবীর কাছে যেতে চান না। এমন এক ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ছেলেকে তিনি কখনওই ক্ষমা করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় ও মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
সীমা সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

সীমা সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

রাতের শহরে ফুটপাথ থেকে এক বালিকাকে গাড়িতে তুলে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত গুড্ডু সিংহের মা তাঁর ছেলের জামিনের জন্য কোনও আইনজীবীর কাছে যেতে চান না। এমন এক ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ছেলেকে তিনি কখনওই ক্ষমা করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন। গুড্ডুর মা সীমা সিংহের কথায়, ‘‘আমি ওই মেয়েটির মা হলে গুড্ডুর ফাঁসি চাইতাম।’’ এই ঘটনায় ধৃত দ্বিতীয় যুবক শঙ্কর সাউয়ের মা মীনাদেবীও এ দিন বলেন, ‘‘আমি কখনওই ওই ছেলের মুখ দেখতে চাই না।’’

খিদিরপুরের রঙ্গলাল স্ট্রিটের ঘিঞ্জি বস্তিতে গুড্ডুর বাড়ি। এক কামরার ঘরে তার বাবা, মা ও ভাই থাকেন। মা সীমা সিংহ লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলের কুকর্ম সামনে আসার পর থেকে আর কাজে যাচ্ছেন না তিনি। পারতপক্ষে বাইরে বেরোচ্ছেন না গুড্ডুর বাবা, ভাইও। প্রতিবেশীদের দাবি, গুড্ডু দীর্ঘ দিন ধরেই নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত। একাধিক বার ধরা পড়লেও তার পরিবার সংশোধনের চেষ্টা করেনি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে এখন।

খিদিরপুরের নিত্য ঘোষ স্ট্রিটে চারতলা একটি বাড়ির দু’কামরার ঘরে বাবা, মা, তিন ভাইয়ের সঙ্গে থাকত শঙ্কর। দু’মাস আগে ঝাড়খণ্ডের কোডার্মায় বিয়ে হয়েছে তার। তবে স্ত্রী এখনও শ্বশুরবাড়িতে আসেননি। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই নিজেদের ঘরবন্দি করেছে সাউ পরিবার। জামাইয়ের কুকীর্তির কথা পৌঁছে গিয়েছে কোডার্মাতেও। এ দিন শঙ্করের বাবা কেষ্ট সাউ বলেন, বুধবার রাতেও পুলিশ এসেছিল। গোটা ঘর তল্লাশি করে ওর জামাকাপড় নিয়ে গিয়েছে। ছেলের সম্পর্কে কেষ্টবাবুর মন্তব্য, ‘‘গুড্ডুর সঙ্গে মেলামেশা করেই বিপথে গিয়েছে ও। কুসঙ্গ ত্যাগ না করার ফল ভুগবে এ বার।’’

গুড্ডু ও তার সঙ্গী শঙ্কর সাউকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, বুধবার ভোরে ওই বালিকাকে জোর করে গাড়িতে তোলার আগে মঙ্গলবার রাতে খিদিরপুরের মুন্সিগঞ্জে একটি যৌনপল্লিতে গিয়েছিল তারা। পুলিশের দাবি, সেখানে রাত ১১টা থেকে এক আত্মীয়ের সঙ্গে বসে মদ্যপান করে গুড্ডু। ছিলেন আরও এক জন। তবে শঙ্কর সে সময়ে সেখানে ছিল না বলেই তদন্তে জেনেছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, প্রায় দু’ঘণ্টা ওই মদ্যপানের আসর চলার পরে গুড্ডুর আত্মীয়েরা চলে যান। এর পরে সেখানে আসে শঙ্কর। সে ও গুড্ডু প্রায় আধ ঘণ্টা মদ্যপান করে। তখন কোনও বিষয় নিয়ে গোলমাল বাধে তাদের মধ্যে।

পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই গাড়ি নিয়ে সোজা ধর্মতলায় আসে দুই যুবক। কিছুক্ষণ সেখানে কাটানোর পরে ওই বালিকাকে তুলে নিয়ে চম্পট দেয় গুড্ডু ও শঙ্কর।

পুলিশ সূত্রে খবর, বুধবার ভোরে বি বা দী বাগের টি বোর্ডের সামনের ফুটপাথ থেকে অপহরণ করার পরে তারা দু’জনেই পালা করে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে। যন্ত্রণায় মেয়েটি চিৎকার জুড়ে দেয়। ভয় পেয়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। পুলিশ জানায়, এই সময়ে তারা রাস্তার কোথাও গাড়িটিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। মেেয়টি চিৎকার করতে শুরু করতেই বিপদের আঁচ করে তারা। আশঙ্কা হয়, চিৎকার শুনে ওই কাকভোরে আশপাশের লোক জড়ো হয়ে যেতে পারে। এমনকী মেয়েটিকে ছেড়ে দিলে আরও বড় শোরগোল পড়ে যেতে পারে।

পুলিশ জানিয়েছে, এটা বুঝতে পারার পরেই তারা খুন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তপসিয়ার রাস্তায় ঢুকে মেয়েটিকে গলা টিপে খুন করে শঙ্কর। তার পরে মেয়েটির নিথর দেহ নিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে বসে ছিল সে। খালের কাছে পৌঁছে দু’জনে মিলেই দেহটি জলে ফেলে দেয়। বুধবার রাতেই গুড্ডুর বাড়িতে হানা দিয়ে রক্তমাখা একটি শার্ট উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ জানিয়েছে, টি বোর্ডের সামনে থেকে ওই মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে ফেয়ারলি প্লেস, স্ট্র্যান্ড রোড, প্রিন্সেপ ঘাট হয়ে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল ও পরমা উড়ালপুল হয়ে তপসিয়া গিয়েছিল দুই দুষ্কৃতী। ওই পথের মাঝে পরমা উড়ালপুল বা তপসিয়ার কাছে গাড়ি থামিয়ে একাধিক বার ধর্ষণ করার পরে খুন করা হয় নাবালিকাকে। পরে তার দেহ তপসিয়া খাল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

শহরের বুকে এমন ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। হেয়ার স্ট্রিট থানার তদন্তকারীদের এই ঘটনায় যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দিতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশের একাংশের মতে, এই ঘটনায় ফরেন্সিক রিপোর্ট মেলার আগেই চার্জশিট দেওয়া সম্ভব। ফরেন্সিক রিপোর্ট এলে তা পরে আদালতে জমা দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে কি চার্জশিট দুর্বল হবে না?

পুলিশের অনেকে বলছেন, এই ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী, সিসিটিভি ফুটেজ এবং ধৃতদের বয়ান রয়েছে। তা দিয়েই চার্জশিট দেওয়া সম্ভব। ফরেন্সিক রিপোর্ট সেই চার্জশিটকে আরও জোরালো করবে। লালবাজারের খবর, তদন্তে প্রমাণ সংগ্রহে ইতিমধ্যেই সিসিটিভি-র ফুটেজ জোগাড়ের কাজ শুরু হয়েছে। ওই গাড়িটি সে দিন ঠিক কোন কোন রাস্তা দিয়ে তপসিয়ায় পৌঁছেছিল, কোথায় কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল, তা নির্দিষ্ট করতে টি বোর্ড থেকে তপসিয়া যাত্রাপথের সব সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

Ola driver Rape Minor Victim Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy