Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Law

৭২ বছরে আইন পাশ করে মামলা লড়ে ছেলের মৃত্যুর বিচার পেলেন বাবা

পরিবার সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সপ্তর্ষি ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। নয়ডায় চাকরি করার সময়ে অবসাদ গ্রাস করে তাঁকে।

প্রতীকী ছবি।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৫:৫০
Share: Save:

অসময়ে ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। লড়াই করছিলেন আদালতে। শুনানির দিন শুধুই পিছিয়ে যাচ্ছিল। এ ভাবে বিচারে দেরি হতে দেখে ঠিক করেন, নিজেই ছেলের মামলা লড়বেন। তাই ৬৯ বছর বয়সে আইন পড়তে শুরু করেন সুভাষ সরকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি বেসরকারি আইন কলেজ থেকে ৭২ বছর বয়সে আইন পাশও করেন তিনি।

সেটা ২০১৯ সাল। আইন পাশ করার পরে বিশেষ আবেদন করে নিজেই ছেলের মামলা লড়তে শুরু করেন সুভাষ। করোনার অভিঘাতে দু’বছর বিলম্বিত হয় বিচার প্রক্রিয়া। শেষে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত সুভাষের ছেলে সপ্তর্ষির মৃত্যুতে গাফিলতির অভিযোগ মেনে নিয়ে দুই চিকিৎসককে ২৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

ক্ষতিপূরণের ওই মামলা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাও করেছিলেন সুভাষ। সেই ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই চার্জশিট জমা দিয়েছে। আলিপুর আদালতে মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন সুভাষ। এ বার সেই আদালতেও ছেলের মামলা নিজেই লড়বেন বলে আবেদন করেছেন রেলের প্রাক্তন উচ্চপদস্থ এই কর্তা।

পরিবার সূত্রের খবর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সপ্তর্ষি ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। নয়ডায় চাকরি করার সময়ে অবসাদ গ্রাস করে তাঁকে। কয়েক বার চিকিৎসাও করাতে হয়। ভুবনেশ্বরে বদলি হওয়ার পরে কলকাতায় চলে আসেন সপ্তর্ষি। শেষে ২০১০ সালের অগস্টে তাঁকে কলকাতার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সুভাষের অভিযোগ, গড়িয়াহাট থানা এলাকার ডোভার মেডিক্যাল সেন্টার নামে ওই নার্সিংহোমে ১১ অগস্ট রাতে আত্মঘাতী হন ৩৩ বছরের সপ্তর্ষি। শৌচালয়ের ভিতরে কী ভাবে তিনি গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়লেন, দড়ি কোথায় পেলেন, এই সব গাফিলতির অভিযোগ তুলে মামলা করেন সুভাষ।

সুভাষের অভিযোগ, ‘‘নার্সিংহোমের শৌচালয়ের ছাদের চাঙড় ভাঙা ছিল। সেখান থেকে লোহার রড বেরিয়ে ছিল। সেখান থেকেই আমার ছেলে ঝুলে পড়েছিল। তা ছাড়া, সপ্তর্ষির মৃত্যুর পরে নার্সিংহোম আমাকে জানিয়েছিল, অন্য এক অবসাদগ্রস্ত রোগীকে সামলাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়েছিল। আত্মহত্যার জন্য সপ্তর্ষি সেই দড়িই ব্যবহার করেছিল। এ তো সাংঘাতিক গাফিলতি!’’

ওই নার্সিংহোমের মালিক তথা চিকিৎসক ধ্রুবজ্যোতি শী এবং যে চিকিৎসকের অধীনে সপ্তর্ষিকে ভর্তি করা হয়েছিল, সেই জ্যোতিরিন্দ্র নাগের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা হয়। একটি, ক্রেতা-সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা। দ্বিতীয়টি, গড়িয়াহাট থানায় ফৌজদারি মামলা। সুভাষ জানান, মামলা চলাকালীন ২০১৫ সালের অক্টোবরে ধ্রুবজ্যোতি মারা যান। তবে ক্রেতা-সুরক্ষা আদালত ধ্রুবজ্যোতির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে।

ধ্রুবজ্যোতির পরিবারের আইনজীবী নৃপেন্দ্ররঞ্জন মুখোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তা বেজে যায়। মেসেজ করা হলেও উত্তর মেলেনি। অন্য চিকিৎসক জ্যোতিরিন্দ্র নাগের কথায়, ‘‘রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। অভিযোগ উঠেছে গাফিলতির। তার সঙ্গে নার্সিংহোমের সম্পর্ক। আমি শুধু চিকিৎসা করেছি। সেই সংক্রান্ত অভিযোগ তো হয়নি। তার পরেও আমার বিরুদ্ধে কেন এই রায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Law father
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE