একটিমাত্র রাস্তা। ‘নির্মল জেলা’ হয়ে ওঠার পথে সেটাই কাঁটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে।
আগামী ২৮ অগস্ট উত্তর ২৪ পরগনাকে নির্মল জেলা ঘোষণা করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মধ্যে ওই একটি রাস্তাই কপালে ভাঁজ ফেলেছে কর্তাদের। বর্ষার জলে, খানাখন্দে নরক হয়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফিডার রোডটি সারানোর টাকা কে দেবে, তা নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা চলছে। মাত্র তিন কিমি-র ওই রাস্তা সংস্কারের পথ খোলেনি প্রশাসনিক বৈঠকেও। খোদ ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলছেন, ‘‘আমিও একাধিক বার রাস্তাটি পরিদর্শন করেছি। কিন্তু ফান্ড দেবে কে তা নিয়েই জটিলতা।’’
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ও ঘোষপাড়া রোড সংযোগকারী এই রাস্তাটি শ্যামনগর বাসুদেবপুর মোড় থেকে শ্যামনগর স্টেশন পর্যন্ত গিয়েছে। তার মধ্যে বাসুদেবপুর মোড় থেকে ১.৮ কিমি রাস্তা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে। শ্যামনগর স্টেশন থেকে বাকি ১.২ কিমি রাস্তা গারুলিয়া পুরসভার দেখভাল করার কথা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০০১-এর পর এই রাস্তার সারানো হয়নি। খন্দে ভরা ফিডার রোডের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের দাবি, প্রতি বার পঞ্চায়েত, পুরসভা, এমনকী বিধানসভা ভোটেও এই রাস্তাটিকেই তুরুপের তাস করেন রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীরা। ২০১১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে নারকেল ফাটিয়ে রাস্তা তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শাসক দলের প্রার্থী। তবে অভিযোগ, তাঁর তদ্বিরে পিচ হওয়া দূরে থাক, রাস্তায় রাবিশও পড়েনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০১-এ জেলা পরিষদের একটি তহবিলের টাকা থেকে এই রাস্তার কাজ হলেও তার পরে সকলেই হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। সংযোগকারী রাস্তা হওয়ায় বিভিন্ন কারখানা থেকে বেরোনো লরি ছাড়াও প্রতিদিন অসংখ্য মালবাহী গাড়ি ও অটো, ভ্যান এই পথ ধরে চলাচল করে। রাস্তার ধারে রয়েছে স্কুল ও পঞ্চায়েত অফিস। নির্বাচনের সময়ে বড় জনসভাও হয় এই রাস্তার ধারেই, অন্নপূর্ণা কটন মিলের মাঠে। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার পর্যন্ত নেমেছিল সেখানেই। এই পথ ধরে যেতে হয়েছিল তাঁকেও। এমনকী, গারুলিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান সুনীল সিংহও বলেন, ‘‘এত সামর্থ্য কোথায় যে ওই রাস্তা সারাব?’’ বিশাল গর্তে ভরা ওই রাস্তাটির সংস্কারের দাবিতে সম্প্রতি মিছিল করে সিপিএম এবং কংগ্রেস। এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী নোয়াপাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক মধুসূদন ঘোষ বলেন, ‘‘রাস্তাটির ভয়ঙ্কর অবস্থা। বাসিন্দারা ধৈর্যশীল এবং নিরুপায়ও বটে। ভাঙা রাস্তা দিয়েই তাঁরা অতিকষ্টে চলাচল করেন। আমরা বিষয়টি মহকুমাশাসককে জানিয়েছি।’’
নির্মল জেলা ঘোষণার আগে ফিডার রোড সারানো নিয়ে তাই চুল খাড়া হওয়ার জোগাড় প্রশাসনের কর্তাদের। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি, পুরসভা-সহ রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন মহকুমাশাসক। বিষয়টি জেলাশসকের নজরেও আনা হয়েছে। পীযূষবাবু বলেন, ‘‘রাস্তাটি নিয়ে খুব সমস্যা। সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। টাকার কোনও ব্যবস্থা না হলে অগত্যা পূর্ত দফতরকেই রাস্তাটির দায়িত্ব নিতে হবে। সেই মতো যা ব্যবস্থা নেওয়ার, আলোচনা চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy