Advertisement
১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

‘বিজয়-পথ’ কত মসৃণ, পরীক্ষা তার

এক জন পুরভোটে যত বার লড়েছেন, জিতেছেন। আর এক জন ঠিক উল্টো। যত বার প্রার্থী হয়েছেন। তত বারই হেরে গিয়েছেন। এ বার ওই দুই প্রার্থীর কোনও এক জন রেকর্ড ভাঙবেন, না একই ভাবে চলবে— তা দেখতেই সকলের নজর উত্তর কলকাতার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। ১৯৯০ সালে সেখানে জিতে প্রথম বার কাউন্সিলর হন সিপিএমের সুধাংশু শীল। ২০০৫ সাল ছাড়া ওই এলাকায় টানা প্রার্থী হয়েছেন ও অনায়াসেই জিতেছেন।

সুধাংশু শীল এবং বিজয় উপাধ্যায়

সুধাংশু শীল এবং বিজয় উপাধ্যায়

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
Share: Save:

এক জন পুরভোটে যত বার লড়েছেন, জিতেছেন। আর এক জন ঠিক উল্টো। যত বার প্রার্থী হয়েছেন। তত বারই হেরে গিয়েছেন।

এ বার ওই দুই প্রার্থীর কোনও এক জন রেকর্ড ভাঙবেন, না একই ভাবে চলবে— তা দেখতেই সকলের নজর উত্তর কলকাতার ২০ নম্বর ওয়ার্ডে।

১৯৯০ সালে সেখানে জিতে প্রথম বার কাউন্সিলর হন সিপিএমের সুধাংশু শীল। ২০০৫ সাল ছাড়া ওই এলাকায় টানা প্রার্থী হয়েছেন ও অনায়াসেই জিতেছেন। এ বারও লড়ছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে আগের মতো তত ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ মনোভাব নেই তাঁর। খানিকটা ‘রক্ষণাত্মক’ বলেই মনে হল। বলেও ফেললেন, ‘‘এ বারের লড়াইটা একটু টাফ।’’ বিপক্ষে তৃণমূল প্রার্থী বিজয় উপাধ্যায়। হারের রেকর্ড থাকলেও এ বার চরম আত্মবিশ্বাসী। বললেন, ‘‘২০ নম্বরে জোড়া ফুল ফোটাব।’’

২০১৪-র লোকসভা ভোটে প্রবল বিজেপি ঝড়ে উত্তর কলকাতায় সিপিএম প্রায় নির্মূল হলেও মাথা তুলে এক নম্বরে ছিল নিমতলা বি কে পাল অ্যাভিনিউ লাগোয়া ২০ নম্বর ওয়ার্ড। প্রায় ৫০ শতাংশ অবাঙালি অধ্যুষিত ওই ওয়ার্ডে বিজেপিকে দ্বিতীয় স্থানে ফেলে এগিয়ে যান সিপিএম প্রার্থী। আর তৃণমূল তৃতীয়। ২০১০ পুরভোটেও তৃণমূলের লড়াকু নেতা তাপস রায়কে ১২০০-র বেশি ভোটে হারিয়ে ছিলেন সুধাংশুবাবু। সেই তিনি এতটা রক্ষণাত্মক কেন?

মিছিল শেষে রবিবার রাতে বসেছিলেন বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটে দলের অফিসের সামনে। বললেন, ‘‘সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট হয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। বিরুদ্ধে ভোট দিলে মারধর করা হবে বলে শাসাচ্ছে।’’ এ সব কথার মাঝেই দেখা গেল, জোড়াবাগান থানার পুলিশ এলাকা টহল দিতে ওই পথ দিয়েই যাচ্ছেন। ‘‘ওঁদের ভরসাতেই আছি,’’ জানালেন এলাকার মিন্টুদা (সুধাংশুবাবুর ডাক নাম)।

ওই রাস্তার উপরেই তৃণমূলের নির্বাচনী অফিস। দলবল নিয়ে সেখানে ভোটের ‘স্ট্র্যাটেজি’ ঠিক করতে ব্যস্ত তৃণমূল প্রার্থী বিজয় উপাধ্যায়। বিরোধী প্রার্থীর অভিযোগ শুনে তাঁর জবাব, ‘‘হারবেন বুঝে গিয়েছেন। তাই আগেভাগে সন্ত্রাসের কথা তুলছেন।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘সন্ত্রাস, ছাপ্পাভোট এ সব আমদানি করেছিল সিপিএমই। ১৯৯০ সালে। এটা ওঁদের কালচার। আমাদের নয়।’’

রবীন্দ্র সরণি থেকে বি কে পাল-সহ অলিগলি ফ্লেক্স, পোস্টার, ব্যানারে ছয়লাপ। সিংহভাগই তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে। যা দেখেশুনে সিপিএমের লোকাল কমিটির এক নেতার অভিযোগ, ‘‘ভোট টানতে টাকা ছড়াচ্ছেন তিনি। বৃন্দাবন বসাক স্ট্রিটের গলিতে শীতলা পুজোয় দু’হাজার টাকা দিয়েছেন।’’ বিজয় অবশ্য অস্বীকার করেননি ওই অভিযোগ। বলেন, ‘‘আমি তো ধর্ম মানি। তাই মায়ের চরণে প্রণামী দিয়েছি। কারও হাতে তো দিইনি।’’

উল্টে সুধাংশুবাবুর দিকে আঙুল তুলে তিনি বলেন, ‘‘পুর-প্রতিনিধি হয়েও গত ৫ বছরে এক বারও পুরসভায় যাননি। এতেই বোঝা যায়, কী কাজ হয়েছে।’’ পুর-পরিষেবার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘রাস্তায় জঞ্জাল জমে থাকে, পানীয় জলের অভাব। এ সব নজরেই নেই ওঁর।’’ অভিযোগ কানে না নেওয়ার মতো করে সুধাংশুবাবু বলেন, ‘‘উনি কতটুকুই বা জানেন। থাকেন তো অন্য এলাকায়।’’ তিনি জানান, ওয়ার্ডের পশ্চিম ভাগে গঙ্গার লাগোয়া এলাকায় পানীয় জলের অভাব ছিল। ১৯৯০-এর সময়ে টালা থেকে সরবরাহ করা ৩৬ ইঞ্চির পাইপলাইন থেকে জল নিয়ে ওই এলাকায় দেওয়া হয় বাম আমলেই। তারই কারণে আর জলের সমস্যা নেই। শহরের একটি বড় পুজো আহিরীটোলা সার্বজনীন। সেখানে এখনও স্তূপীকৃত থাকে জঞ্জাল। তিনি বলেন, ‘‘পুর-প্রশাসনকে আবেদন করা হয়েছিল একটা কমপ্যাক্টর স্টেশন করার জন্য। সে কথা সবাই জানেন। কিন্তু বিরোধী কাউন্সিলর বলে কেউ উদ্যোগীই হননি।’’ এ নিয়ে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘ওই সমস্যার কথা আমরা জানি। ভোটের পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Municipal election Kolkata Trinamool Tmc Sudhanshu sil Bijay Upadhyay CPM BJP Congress Anup Chattopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy