Advertisement
E-Paper

শুধু রসগোল্লায় নয়, বঙ্গ-কলিঙ্গ যুযুধান মহালয়ার গঙ্গা পাড়েও

রসগোল্লার স্বীকৃতি-যুদ্ধে ওড়িশাকে হারিয়েছে বাংলা। কিন্তু আর একটি ‘যুদ্ধে’ বাংলাকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ উৎকল। সেখানে দুই প্রতিবেশী রাজ্য মুখোমুখি লড়াইয়ে।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০১:২৩
ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

রসগোল্লার স্বীকৃতি-যুদ্ধে ওড়িশাকে হারিয়েছে বাংলা। কিন্তু আর একটি ‘যুদ্ধে’ বাংলাকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ উৎকল। সেখানে দুই প্রতিবেশী রাজ্য মুখোমুখি লড়াইয়ে।

বাঙালি পুরোহিতদের একাংশের বক্তব্য, ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা পুরোহিতদের কারণে তাঁদের পসার মার খাচ্ছে। কারণ, তর্পণে গঙ্গার ঘাটের জনস্রোত টেনে নিচ্ছেন প্রতিবেশী রাজ্যের পুরোহিতেরা। আবার ওড়িয়া পুরোহিতদের পাল্টা দাবি, তাঁরা তো কাউকে জোর করছেন না। লোকজন স্বেচ্ছায় তাঁদের কাছে আসছেন।

বাঙালি পুরোহিতদের একাংশ জানাচ্ছেন, কপালে চন্দনের টিপ পরে একটি করে পাতা, কলা, ডালি ও ঘটি নিয়ে সকাল সাড়ে ৪টে থেকে ৫টার মধ্যেই উত্তর কলকাতা-সহ গঙ্গার অন্য ঘাটগুলিতে বসে পড়েন ও়ড়িশার পুরোহিতেরা। এমনিতে তর্পণের দিন মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া-সহ অন্য জেলা থেকে আসা পুরোহিতদের ভিড়ে ছেয়ে যায় গঙ্গার পাড়। তবে তাঁদের মধ্যেই অবাঙালি পুরোহিতদের সমুজ্জ্বল উপস্থিতি। আর তর্পণের দিন যেন ওই দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায় গঙ্গামুখী জনস্রোত।কবে থেকে তর্পণের উদ্ভব?

পুরাণ-গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির বক্তব্য, ‘‘ঠিক কবে থেকে তর্পণের উদ্ভব, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে ঋগ্বেদে পিতৃকুল বা পিতৃগণের উদ্দেশে অন্তত দু’টি সূত্র পাওয়া যায়। ফলে তর্পণ তার পর থেকেই শুরু হয়েছে বলে ধরা যেতে পারে। ধর্মসূত্র থেকে শুরু করে পরবর্তীকালের ধর্মশাস্ত্র, সেখানে বারংবার তর্পণের কথা এসেছে। মহালয়ার তর্পণের দিন মনে করা হয়, শুধু আমার পিতৃকুলই নয়, অর্থাৎ আমার বাবা-মা-ই নন, সকলের পিতৃকুলই কাছাকাছি চলে আসে। ফলে মহালয়ার তর্পণ আলাদা মাত্রা পায়।’’

এমনিতে ভি়ড় ট্রেন, বাসে ওঠার সময়ে যাত্রীদের মধ্যে যেমন প্রতিযোগিতা চলে, তর্পণের দিনে গঙ্গায় কী ভাবে, কোন জায়গা থেকে নিরাপদে নামা যাবে, তা নিয়ে যেন তেমন প্রতিযোগিতাই চলে বলে জানাচ্ছেন কলকাতা পুরকর্তাদের একাংশ। ফলে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থাও করতে হয়। কিন্তু সে সমস্ত কিছু ছাপিয়ে এ দিন গঙ্গার ঘাটগুলিতে বঙ্গ-কলিঙ্গের ‘লড়াই’-ই প্রধান হয়ে ওঠে বলে মত অনেকের।

‘বাগবাজার গঙ্গাতীর ভাগবত সভা’-র প্রধান পুরোহিত তুলসীদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পূর্ণিমার পর থেকে যাঁরা ঘাটে কাজ করান, তাঁদের মধ্যে বাঙালি খুবই কম। ওড়িয়া পুরোহিতেরা বারো মাসই ঘাটে থাকেন। তর্পণের দিনও লোকজন তাঁদের কাছেই যান।’’ ‘উত্তর কলকাতা ব্রাহ্মণ সমাজ’-এর সম্পাদক প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গঙ্গার ঘাটে ওড়িয়া পুরোহিত যাঁরা বসেন, তাঁরা সকলে পোর্ট ট্রাস্টকে ভাড়া দিয়ে বসেন। ফলে কোথাও গিয়ে বাঙালি পুরোহিতেরা পিছিয়ে পড়ছেন। তর্পণের দিন বা অন্য পুজো-পার্বণের সময়ে সেটা আরও পরিষ্কার বোঝা যায়।’’ বাগবাজারের এক পুজোর সঙ্গে যুক্ত পুরোহিত অনিল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গার ঘাটে বাঙালি পুরোহিতদের স্থায়ী বসার জায়গা না হওয়া পর্যন্ত আমরা পেরে উঠব না।’’

উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওড়িয়া বিভাগের শিক্ষক সন্তোষকুমার ত্রিপাঠী অবশ্য বলেন, ‘‘লড়াইয়ের কোনও ব্যাপার নেই। বাংলার লোকেরা পুরীতে জগন্নাথ-দর্শনে আসেন। আবার ওড়িশার লোকেরা কালীঘাটে যান। তা ছাড়া, দুই রাজ্যেরই সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আদানপ্রদানের ইতিহাস যথেষ্ট প্রাচীন।’’ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি

অব ওড়িশা-র ওড়িয়া বিভাগের শিক্ষক অলোক বন্দলও বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে তথ্য দিয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে দুই রাজ্যের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় আদানপ্রদানের বিষয়টি আগেও ছিল, এখনও আছে।’’ গঙ্গার ঘাটে এক ওড়িয়া পুরোহিত বলেন, ‘‘লোকজন নিজে থেকেই আমাদের কাছে আসেন।’’ আর এক ওড়িয়া পণ্ডিতের কথায়, ‘‘পোর্ট ট্রাস্টকে আমরা ভাড়া দিই বসার জন্য। এই নয় যে এক দিন এলাম, পুজোপাঠ করলাম, চলে গেলাম। আমাদের সকলেই চেনেন।’’

তবে বাঙালি পুরোহিতেরা নিজেদের জন্যই ‘পিছিয়ে’ পড়ছেন বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন অনেকে। ‘বৈদিক পণ্ডিত ও পুরোহিত মহামিলন কেন্দ্র’-এর প্রধান নিতাই চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাঙালি পুরোহিতদের নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব নেই। তাঁদের অনেকেই মন্ত্র ঠিকমতো জানেন না, পরিশ্রমেরও অভাব রয়েছে।’’ ‘বাগবাজার গঙ্গাতীর ভাগবত সভা’র প্রধান পুরোহিতের কথায়, ‘‘আমাদের মধ্যে ছোটখাটো ঝামেলা লেগেই থাকে। ফলে নিজেদের দোষেই পিছিয়ে পড়ছি।’’

Mahalaya Durga Puja Priest Durga Puja 2018
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy