জ্বলছে বাগরি মার্কেট। নিজস্ব চিত্র।
দিনভর হাইড্রোলিক ল্যাডার ব্যাবহার করতে না পারলেও, আগুন লাগার প্রায় সতেরো ঘণ্টা পরে ছোট একটি হাইড্রোলিক ল্যাডার ব্যাবহার করে আগুন নেভানোর মরিয়া চেষ্টা করছেন দমকল কর্মীরা। তবে বাগরি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের কবলে পড়া বাড়িটির ভিতরে থাকা জিনিসপত্র পুড়ে ছাই না হয়ে গেলে আগুন সম্পূর্ণ আয়ত্তে আনা কঠিন বলে মনে করছে দমকল।
তবে এখনও পর্যন্ত যা খবর, অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে আগুন। তবে দোতলা এবং চারতলার বিভিন্ন অংশ থেকে আগুন বেরতে দেখা যাচ্ছে। আর এই পকেট ফায়ার-ই এখন দমকলের সবচেয়ে বড় চিন্তা। হাইড্রোলিক ল্যাডার কাজে লাগিয়ে তিন দিক দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে দমকল।
রবিবার বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ছড়াতে থাকে বিভিন্ন তলায়। সঙ্গে একাধিক হাইড্রোলিক ল্যাডার থাকার পরও কার্যত অসহায় হয়ে থাকতে হয় দমকলকে। কারণ, উঁচু বাড়িতে যেখানে ভেতরে ঢুকে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না সেখানে এই হাইড্রোলিক ল্যাডারে চেপেই দমকল কর্মীরা আগুন বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন। সেই সুযোগে ভেতরে গিয়ে নেভানোর কাজ শুরু করেন দমকল বাহিনীর বাকি অংশ। কিন্তু সেই মতো আগুনকে দ্বিমুখী আক্রমণ করে কব্জা করার সুযোগ ছিল না বাগরি মার্কেটে। কারণ হাইড্রোলিক ল্যাডার ব্যবহার করার জন্য যে ন্যূনতম জায়গা লাগে, সেই জায়গা পাওয়া যায়নি বাগরি মার্কেটে। তার পাশাপাশি গোটা বাড়ির চারপাশে তারের জাল ভেদ করে সেই ল্যাডার তোলা অসম্ভব বলে দাবি করেন দমকল কর্মীরা।
এর আগেই দমকল কর্মীরা আবিষ্কার করেন মার্কেটের জলাধার শুকনো খটখটে। বাড়ির কিছু অংশে জলের পাইপ, স্প্রিঙ্কলার থাকলেও তার সঙ্গে জলের লাইনের কোনও যোগ নেই। অর্থাৎ গোটাটাই কার্যত ‘লোক দেখানো’।
অগত্যা রাস্তার উল্টোদিকের একটি বহুতল থেকে জল দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। দুপুর ১২ টার পর থেকেই দ্রুত আগুন ছড়াতে থাকে বিভিন্ন অংশে। মার্কেটের বিভিন্ন তলায় মজুত করে রাখা বিভিন্ন রাসায়নিক, ডিওডর্যান্ট এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থে আগুন ছড়াতে থাকে। তিন তলার জানলা দিয়ে আগুনের হল্কা বেরিয়ে আসে। পাল্লা দিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় ব্যাবসায়ী এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। এর মধ্যেই শাটার এবং লোহার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন দমকল কর্মীরা। তাঁরা দোতলায় উঠতে পারলেও প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং তাপের জন্য তাঁরা বেশিদূর এগোতে পারেননি। তার মধ্যে রাসায়নিক এবং এসি মেশিনে আগুন লেগে পর পর বিস্ফোরণ হতে থাকে।
আরও পড়ুন: নন্দরাম থেকে বাগরি, জ্বলেই চলেছে বাজার, শহরে ১০ বছরের খতিয়ান
বিকেল ৫টা নাগাদ বাড়ির ছাদে ওঠার বিকল্প রাস্তার সন্ধান পান কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম দমকল কর্মীদের নিয়ে মার্কেটের ছাদে ওঠেন যাতে সেখান থেকে নীচের দিকে আগুন নেভানো যায়। তার মধ্যে ফের বিপত্তি ঘটে। মার্কেটের অন্য অংশের আগুন ছ’তলা অবধি পৌঁছে যায়। ছাদ পর্যন্ত সেই শিখা দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে দমকল কর্মীরা সেখানে জল দিয়ে সাময়িক নেভাতে পারলেও আগুন এখনও পাঁচ ও ছ’তলাতে জ্বলছে। ক্যানিং স্ট্রিটের দিক থেকে সেই অংশে পৌঁছতে বেগ পেতে হচ্ছে দমকলকে। দিনের আলো শেষ হয়ে গেলে নীচে জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে সেই আলো দিয়ে উপরের দিকে আগুন নেভানোর কাজ সুষ্ঠু ভাবে করা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন: এক এক করে ছ’তলা, নন্দরামের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বাগরি মার্কেট
সন্ধ্যাবেলায় ছোট হাইড্রোলিক ল্যাডার নিয়ে এসে ক্যানিং স্ট্রিটের দিক থেকে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন দমকল কর্মীরা। ঠিক একই সময়ে দমকলের অন্য একটি দল মার্কেটের পেছনের রাস্তা থেকে ক্রমাগত তিনতলা-চার তলা লক্ষ্য করে জলের জেট ব্যবহার করা শুরু করেন। অর্থাৎ বাড়ির দু’দিক থেকে আগুনকে আক্রমণ করেন দমকল কর্মীরা। তাতে কিছুক্ষণ আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ফের সাড়ে সাতটা নাগাদ চার তলা থেকে আগুনের শিখা বেরোতে দেখা যায়। দমকলের এক কর্তা বলেন,“ মজুত বাকি মাল পত্র না পুড়ে যাওয়া পর্যন্ত আগুন পুরো নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন। এখন আমাদের মূল কাজ যে যে অংশে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে সেই জায়গা গুলোতে যাতে ফের আগুন না ছড়ায় এবং বাড়িটা ঠাণ্ডা রাখা।”
(কলকাতার ঘটনা এবং দুর্ঘটনা, কলকাতার ক্রাইম, কলকাতার প্রেম - শহরের সব ধরনের সেরা খবর পেতে চোখ রাখুন আমাদের কলকাতা বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy