Advertisement
E-Paper

বাজির মতোই বেলাগাম চলল মাইকের তাণ্ডব

গত বছর যেমন বিভিন্ন রাস্তায় একাধিক পুজো কমিটির শোভাযাত্রায় ডিজে বক্স বাজতে দেখা গিয়েছিল। এ বছর সেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলেছে। কিন্তু উল্টোডাঙা ও অরবিন্দ সরণির মতো কিছু জায়গায় আগের মতোই তাণ্ডব হয়েছে বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০০
উচ্ছৃঙ্খল: বিডন স্ট্রিটে প্রতিমা-সহ শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ ডিজে বক্স। শুক্রবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

উচ্ছৃঙ্খল: বিডন স্ট্রিটে প্রতিমা-সহ শোভাযাত্রায় নিষিদ্ধ ডিজে বক্স। শুক্রবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বাজির দূষণ পুরোপুরি রুখতে পারেনি পুলিশ। কালীপুজো-দীপাবলিতে শব্দের তাণ্ডবেও রাশ টানতে পারল না প্রশাসন। নিষিদ্ধ হলেও খাস কলকাতাতেই কয়েকটি পুজোর বিসর্জনের মিছিলে বেজেছে ডিজে বক্স। শহরতলিতে সেই সংখ্যাটা আরও বেশি। কোথাও কোথাও ডিজে না বাজলেও দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারস্বরে বেজেছে মাইক। খাস কলকাতা এবং শহরতলির কিছু এলাকায় রাত পর্যন্ত চলেছে জলসাও। অথচ পরিবেশকর্মীরা বলছেন, রাত ১০টার পরে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ।

গত বছর যেমন বিভিন্ন রাস্তায় একাধিক পুজো কমিটির শোভাযাত্রায় ডিজে বক্স বাজতে দেখা গিয়েছিল। এ বছর সেই ছবিটা কিছুটা হলেও বদলেছে। কিন্তু উল্টোডাঙা ও অরবিন্দ সরণির মতো কিছু জায়গায় আগের মতোই তাণ্ডব হয়েছে বলে অভিযোগ। শহরতলিতেও ডিজে-র দাপট রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে নির্দিষ্ট ডেসিবেল এবং সময়ের বাইরে লাউডস্পিকারের মাত্রাছা়ড়া দাপট। পরিবেশকর্মীদের একাংশের আরও অভিযোগ, কলকাতা পুলিশের আওতার বাইরের এলাকায় পরিস্থিতি আরও লাগামহীন। শুক্রবার উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক অঞ্চলে রাতভর জলসা চলেছে।

ডিজে বক্স নিষিদ্ধ করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালত। কিন্তু তার পরেও কেন পুরোপুরি এই উপদ্রবে লাগাম পরানো যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন উঠছেই। নাগরিকদের একাংশের অভিযোগ, ডিজে হয়তো বাজানো হচ্ছে না, কিন্তু তুমুল আওয়াজে লাউডস্পিকার তো বাজছে। কালীপুজোর পরদিন ঈশ্বর গাঙ্গুলি স্ট্রিটে এমনই শব্দের দাপটে নাজেহাল হয়ে পরিবেশকর্মীদের সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছিল একটি পরিবার। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ডিজে না বাজিয়ে তারস্বরে মাইক বাজালেও সেটা শব্দদূষণ। তাই ডিজে বাজছে কি না, সেই প্রশ্ন অবান্তর। শব্দদূষণ ঠেকানোটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’

কসবায় রাস্তার উপরে শব্দবাজি ফাটিয়ে হুল্লোড়। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ অরবিন্দ সরণিতে লরির উপরে পেল্লায় সাউন্ড বক্স লাগিয়ে বিকট শব্দে গান চালিয়ে শোভাযাত্রা দেখা গিয়েছে। ওই শব্দতাণ্ডব থামানোর জন্য সে সময়ে কোনও পুলিশকর্মীকে দেখা যায়নি। লাগাতার সেই শব্দের তাণ্ডবে নাজেহাল হয়ে পড়েন এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই। এক মহিলার কথায়, ‘‘কালীপুজোটা মিটলে বাঁচি।’’ ডিজে বাজিয়ে বিসর্জনে যাওয়া আর এক পুজো কমিটির কর্তার কথায়, ‘‘খন্না এবং শোভাবাজার মোড়ে পুলিশ থাকবে। ওই সময়ে ডিজে বন্ধ রাখতে বলেছি। ডিজে না বাজালে তো ধরতে পারবে না।’’

নাগরিকদের অভিযোগ, হরিদেবপুর, পুঁটিয়ারি, বিজয়গ়়ড়ে রাত পর্যন্ত জলসা হয়েছে। হরিদেবপুরের বাসিন্দা এক যুবতীর বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে অশীতিপর, অসুস্থ বাবা। তার উপরে শব্দের তাণ্ডব! কালীপুজো এলেই আমরা তাই আতঙ্কে থাকি।’’ তাঁর আরও দাবি, রাত পৌনে ১১টার পর থেকে তিনি হরিদেবপুরে গানের জলসা চলছে বলে লালবাজার কন্ট্রোলে বারবার জানান। কন্ট্রোল থেকে থানায় জানানো হচ্ছে বলা হয়। কিন্তু থানা থেকে কোনও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জলসা বন্ধের ব্যবস্থা করেননি। বরং ক্লাব প্রায় ১২টা ১০ পর্যন্ত ডিজে বক্স বাজিয়ে জলসা চালিয়েছে। শুক্রবার রাত ১০টার পরে দমদম, নিউ ব্যারাকপুরের মতো এলাকাতেও রাত পর্যন্ত জলসা চলেছে এবং মণ্ডপে লাউডস্পিকার বেজেছে বলে অভিযোগ।

কলকাতা পুলিশের হিসেবে এ বছর কালীপুজো-দীপাবলিতে শব্দদূষণ নিয়ে অভিযোগ আগের বছরের তুলনায় অনেক কম। গড়িয়াহাট এলাকার একটি জলসায় রাত দশটার পরে মাইক বাজানোর জন্য পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সংগঠকদের সঙ্গে কথা বলে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। ডিজে বন্ধ নিয়ে একাধিক বৈঠক করা হয়েছিল। যেখানে ডিজে নিয়ে অভিযোগ মিলেছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। হরিদেবপুর, বিজয়গ়়ড়ের জলসা নিয়ে কোনও অভিযোগ মেলেনি। একই সুর শহরতলির এলাকাগুলির দায়িত্বে থাকা পুলিশেরও।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অভিযোগের জন্য পুলিশ অপেক্ষা করবে কেন? গড়িয়াহাটেই তো তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। শব্দের মাত্রা মাপার জন্য পুলিশকে সাউন্ড মিটার-ও দিয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বিশ্বজিৎবাবুও বলছেন, ‘‘পুলিশ ইচ্ছে করলে নিজে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারে। নাগরিকদের অভিযোগ করার প্রয়োজন নেই।’’

এই ‘সক্রিয়তা’ আদৌ দেখা যাবে কি এ রাজ্যে? সদু্ত্তর মিলছে না।

Firecracker Kali Puja Sound Pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy