আকস্মিক সফটওয়্যার বিভ্রাটের মুখে এয়ারবাস সংস্থার এ-৩২০ সিরিজের বিমান। তীব্র সৌর বিকিরণের কারণে বিমান নিয়ন্ত্রক কম্পিউটারের সফটওয়্যারের বিভিন্ন তথ্য নষ্ট হওয়ার জেরে উড়ান-বিভ্রাটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংস্থার ৬৫০০টি বিমানের
সফটওয়্যার বদল করার নির্দেশ দিয়েছে সংস্থা। ওই নির্দেশের কথা মাথায় রেখে ভারতেও উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ এয়ারবাস সংস্থার এ-৩২০, ৩২১, ৩১৯ এবং ৩১৮ শ্রেণির বিমানের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার পরিবর্তন সম্পূর্ণ না করে ওড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর ফলে ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের মতো সংস্থার বিভিন্ন উড়ান বিলম্বিত অথবা বাতিল হতে পারে। ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া এখনও পর্যন্ত তাদের কোনও উড়ান বাতিল না করলেও যাত্রীদের উড়ান সংক্রান্ত নির্দেশিকার দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছে।
সৌর বিকিরণ কী? সূর্যের কেন্দ্রে হাইড্রোজেন পরমাণুগুলি অবিরত নিউক্লিয় সংযোজনের মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরি হচ্ছে। ওই প্রক্রিয়ায় প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এবং পরমাণুগুলি থেকে ‘ফোটন’ কণা নির্গত হয়। সূর্যের পরিসর ছাড়িয়ে ফোটনগুলি মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। তার কিছুটা সৌর বিকিরণ হিসাবে পৃথিবীতেও পৌঁছয়। সৌর বিকিরণের বেশির ভাগটাই প্রতিফলিত হয় বা শোষণ হয়ে যায়। প্রায় ৪০ শতাংশের মতো বিকিরণ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূপৃষ্ঠ থেকে কম-বেশি ৩৫ হাজার ফুট উচ্চতায় চলাচল করা বিমানে সৌর বিকিরণের প্রভাব তুলনায় বেশি হয়। বিমানে যোগাযোগ রক্ষা ও উড়ানের অভিমুখ নির্ণয়ে ব্যবহৃত প্রযুক্তি তথা নানা যন্ত্রাংশে বিকিরণের প্রভাব পড়ে। এয়ারবাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সৌর বিকিরণে এ৩২০ মডেলের বিমানগুলির ‘এলিভেটর এলেরন কম্পিউটার’ বা ‘ইল্যাক’ নিয়ে চিন্তা বেড়েছে। আশঙ্কা, সৌর বিকিরণ ইল্যাক-এ গোলমাল ঘটিয়ে বিমানের গতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। তাতে বিমানের সামগ্রিক গঠনে ত্রুটি হতে পারে।
সূত্রের খবর, এটি এয়ারবাস সংস্থার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান ফিরিয়ে নেওয়ার (রিকল) ঘটনা। ওই ঘটনায় ভারতের প্রায় আড়াইশো বিমান প্রভাবিত হতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। কলকাতা বিমানবন্দর পরিষেবাগত দিক থেকে ইন্ডিগোর অন্যতম হাব। ইন্ডিগোর প্রায় ১০০টি উড়ান প্রতিদিন কলকাতা থেকে ৪২টি অন্তর্দেশীয় এবং পাঁচটি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড়ে যায়। ওই সব বিমানের চলাচল ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
গত ৩০ অক্টোবর জেট ব্লু সংস্থার একটি এ-৩২০ বিমান নিউ জার্সি থেকে মেক্সিকো যাওয়ার সময়ে আচমকাই বিমানের নাক বিপজ্জনক ভাবে নিচু হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর ফলে বিমানটি আচমকা উচ্চতা হারানোর মুখে পড়ে। ওই ঘটনায় বিমানের ১৫ জন যাত্রী আহত হন। বিমানটি ফ্লোরিডার টাম্পায় জরুরি অবতরণ করে। এর পরে ঘটনার তদন্তে নামে এয়ারবাস সংস্থা। গত ২৮ অক্টোবর সংস্থার পক্ষ থেকে জরুরি বার্তা দিয়ে জানানো হয়, তীব্র সৌর বিকিরণে বিমানের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণকারী কম্পিউটারে
তথ্য-বিভ্রাট ঘটছে। তার পরেই অপেক্ষাকৃত নতুন বিমানগুলিতে সফটওয়্যার আপগ্রেড এবং পুরনো বিমানে কম্পিউটার বদল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সারা দেশে শনিবার
রাত পর্যন্ত ইন্ডিগো তাদের ১৪৩টি এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস তাদের ৪২টি বিমানে ওই কাজ সম্পূর্ণ করেছে। সফটওয়্যার আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগছে। তবে, হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার বদল করার ক্ষেত্রে বিমান সাময়িক ভাবে বসিয়ে দিতে হতে পারে। এমন ক’টি বিমান রয়েছে, তার সংখ্যা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)