হংকং থেকে সকালে এসে রাতেই ফিরে যাচ্ছিলেন বছর তিরিশের চিনা যুবক শাও লিয়ং। আর প্রাথমিক ভাবে সেটাতেই সন্দেহ হয়েছিল কলকাতা বিমানবন্দরের শুল্ক দফতরের অফিসারদের। শেষ পর্যন্ত শাও-এর কাছ থেকে ২৯ লক্ষ টাকার ওষুধ উদ্ধার করলেন তাঁরা, যার উপযুক্ত কাগজপত্র ওই যুবকের কাছে নেই। ফলে গ্রেফতারও করা হল তাঁকে।
এই পর্যন্ত ঘটনায় নতুনত্ব নেই। বিমানবন্দরে এ ধরনের ঘটনা হামেশাই ঘটে। কিন্তু এই গ্রেফতারের পরের পর্বটা বেশ নাটকীয় এবং বেশ ব্যতিক্রমীও বটে।
শাও লিয়ং চিনা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলতে অপারগ। আবার শুল্ক অফিসারেরা ওই ভাষার বিন্দুবিসর্গও জানেন না। তাই খবর পাঠানো হল এক জন দোভাষীর কাছে।
এই সব ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের অফিসারেরা এমনই করে থাকেন। সম্প্রতি কলকাতা থেকে রক্তচন্দন কাঠ পাচার করতে গিয়ে এক চিনা নাগরিক ধরা পড়েন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য এক চিনা দোভাষীর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল।
এ বারেও ডা়ক পেয়ে রবিবার বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেই চিনা দোভাষী। কিন্তু এ বার বাধা হয়ে দাঁড়াল নিরাপত্তা। পঠানকোটের বিমানঘাঁটিতে সাম্প্রতিক জঙ্গি হানার পরে সব বিমানবন্দরেই নিরাপত্তা এখন অনেক আঁটোসাটো। সেই প্রেক্ষিতেই চিনা নাগরিক ওই দোভাষীকে বিমানবন্দরে ঢোকার ছাড়পত্র দিতে রাজি হননি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এতে সমস্যায় পড়লেন শুল্ক অফিসারেরা। অনেক ভাবনা-চিন্তার পরে শেষমেশ শাও-কে জেরা করতে ‘গুগল ট্রান্সলেটর’-এর সাহায্য নেন তাঁরা। এক অফিসার শাও-কে একটি প্রশ্ন করছেন, আর সঙ্গে সঙ্গে অন্য এক অফিসার সেই প্রশ্ন কম্পিউটারে লিখছেন। কম্পিউটার ইংরেজি প্রশ্ন চিনা ভাষায় রূপান্তর করতে থকে। এক শুল্ক অফিসার জানান, জ্ঞান না থাকলেও ইংরেজির অক্ষর পরিচয় রয়েছে শাও-এর। ফলে কম্পিউটারে পড়া প্রশ্নের জবাব শাও ইংরেজি কি-বোর্ডে এ-বি-সি-ডি বোতাম টিপে চিনা ভাষায় লিখতে থাকেন। এর পরে কম্পিউটার চিনা থেকে ইংরাজি ভাষান্তর করে দেয়।
এ ভাবে টানা ২৪ ঘণ্টা জেরার পরে সোমবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। শুল্ক দফতর জানিয়েছে, শনিবার সকালে হংকং থেকে ড্রাগন এয়ারের উড়ানে কলকাতায় আসেন শাও। ওই দিন রাতেই ফিরে যাচ্ছিলেন ক্যানসারের ওষুধ নিয়ে। এ ভাবে বিদেশ থেকে সকালে এসে রাতেই সাধারণত ফিরে যান না কেউ। সন্দেহের বশে তল্লাশি চালান অফিসারেরা। পাওয়া যায় প্রায় ২৯ লক্ষ টাকার ওষুধ। এক সঙ্গে এত ওষুধ কেন নিয়ে যাচ্ছেন? কম্পিউটারের মাধ্যমে জেরায় শাও প্রথমে জানান, তাঁর পরিচিত এক ব্যক্তির ক্যানসার হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার জন্য ওষুধ নিয়ে যাচ্ছিলেন। তা বলে এত ওষুধ! শাও-এর কথায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি অফিসারেরা। তাঁরা চেপে ধরায় শাও স্বীকার করেন, চিনের এক ব্যক্তি তাঁকে কলকাতা পাঠিয়েছিলেন ওই ওষুধ নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কিন্তু ওযুধ নিয়ে যাওয়া কি অপরাধ? শুল্ক দফতর জানিয়েছে, এ দেশে তৈরি বেশ কিছু ওষুধ সহজে বিদেশে নিয়ে যাওয়া যায় না। কেউ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিয়ে যেতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে সেই যাত্রীর সঙ্গে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন থাকা বাধ্যতামূলক এবং সেই ওষুধের পরিমাণও কখনই খুব বেশি হবে না। কেউ চাইলে প্রচুর ওষুধও নিয়ে যেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে বিদেশে নিয়ে গিয়ে ব্যবসা করার লাইসেন্স থাকতে হবে।
শাও-এর কাছে না ছিল লাইসেন্স, না ছিল চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন। তাঁকে সোমবার গ্রেফতার করে বারাসত আদালতে তোলা হয়। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy