Advertisement
E-Paper

বিক্ষোভই দু’ভাগ, মাঝে রইল পুলিশ

রানিকুঠির জি ডি বিড়লা স্কুলে এক শিশু পড়ুয়ার নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবকদের একাংশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৩
যুযুধান: এ ভাবেই জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন দু’দল অভিভাবক। বুধবার সন্ধ্যায়, রানিকুঠিেত। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

যুযুধান: এ ভাবেই জি ডি বিড়লা স্কুলের সামনে প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়লেন দু’দল অভিভাবক। বুধবার সন্ধ্যায়, রানিকুঠিেত। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

শুরুটা হয়েছিল অভিভাবক বনাম স্কুলের লড়াই দিয়ে। শেষ হল অভিভাবকদের সঙ্গে অভিভাবকদের দ্বন্দ্বে! যাতে সামিল হল পড়ুয়াদের একাংশও।

রানিকুঠির জি ডি বিড়লা স্কুলে এক শিশু পড়ুয়ার নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে নেমেছিলেন অভিভাবকদের একাংশ। তাঁদের দাবি ছিল, অধ্যক্ষার অপসারণ ও গ্রেফতার। সেই আন্দোলনের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুলের পঠনপাঠন। যা নিয়ে অভিভাবকদের একাংশ এবং পড়ুয়াদের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। বিশেষ করে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের।

বুধবার বিকেলে সেই দ্বন্দ্বেরই নগ্ন রূপ দেখল কলকাতা। যেখানে দু’দল অভিভাবক প্রকাশ্যে হাতাহাতি, ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়লেন। স্কুল খোলার দাবিতে আন্দোলনকারীদের পাল্টা বিক্ষোভে নামলেন পড়ুয়ারাও।

মঙ্গলবার পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে প্রিন্সিপালকে সরানো ও তাঁর গ্রেফতারের দাবিতে অভিভাবকেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি বসেছিলেন। ওই দাবি মানা হলে তবেই স্কুল খুলতে দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন অভিভাবকেরা। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তাঁদের সময় দেওয়া হোক।

এ দিন সকাল থেকেই স্কুল চত্বরে বক্তৃতা শুরু করেন আন্দোলনকারী অভিভাবকেরা। স্কুল এবং অধ্যক্ষাকে নিশানা করে শুরু হয় বিষোদ্গার। অধ্যক্ষাকে গ্রেফতার করা না হলে আন্দোলন জোরালো করার হুমকি দেওয়া হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ শুরু হয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই অন্য এক দল অভিভাবক স্কুল চত্বরে জড়ো হন। তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবিতে তাঁরা প্রবল চিৎকার জুড়ে দেন। শুধু অভিভাবক নয়, স্কুলের এক দল পড়ুয়াও হাজির হয়েছিল পাল্টা বিক্ষোভে। তাদের স্লোগান, ‘‘উই লাভ জি ডি বিড়লা’’। শুধু তা-ই নয়, চিৎকার করে আন্দোলনকারীদের পাল্টা জবাবও দিতে থাকে তারা। ওই পড়ুয়াদের বক্তব্য, ছাত্রীর নির্যাতন নিন্দনীয়। কিন্তু স্কুলকে কেন নিশানা করে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে?

ভাস্কর নাথ নামে এক অভিভাবক জানান, তাঁর ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। বোর্ডের পরীক্ষা প্রায় এসে গিয়েছে। পরীক্ষার পাঠ্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকাল স্কুল বন্ধ থাকলে ক্ষতি হবে পড়়ুয়াদেরই। দিব্যেন্দু পাল নামে আর এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আগে স্কুল খোলা প্রয়োজন। ছাত্রী নির্যাতনে কে দায়ী, কে নন, তার বিচার পরে হবে।’’ এ সব কথা বলার সময়েই ভাস্করবাবুদের দিকে তেড়ে আসেন আন্দোলনকারী অভিভাবকদের কয়েক জন। ধাক্কাধাক্কিও করা হয় তাঁদের। পুলিশি হস্তক্ষেপে ছাড়া পান ভাস্করবাবুরা। ঘটনাস্থলে হাজির এক পুলিশ অফিসারের মন্তব্য, ‘‘ওই শিশুটির নির্যাতন নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য ঘটনা। কিন্তু অভিভাবকেরাও যে ভাবে অন্যদের ধাক্কাধাক্কি করছেন, সেটাও অপরাধ।’’

এ দিন অধ্যক্ষার অপসারণের পরে ক্ষোভ ভুলে আনন্দে ফেটে পড়েছেন অভিভাবকদের একাংশ। স্কুলের সামনেই উচ্ছ্বাস শুরু করেন তাঁরা। যদিও অভিভাবকদের আর একটি অংশের বক্তব্য, আন্দোলনকারীদের দাবি ছিল, অধ্যক্ষার গ্রেফতার। কিন্তু সেখান থেকে সরে এসে শেষমেশ অপসারণেই খুশি হয়েছেন তাঁরা। এক অভিভাবকের বক্তব্য, ‘‘দিনের পর দিন স্কুল বন্ধ করে রাখায় পড়ুয়ারা এবং অনেক অভিভাবক যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন তা বুঝতে পেরেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তাই অপসারণের মধ্যে দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের রাস্তা বার করে নিয়েছেন তাঁরা।’’

এর পরে অবশ্য গোলমাল আর বাড়েনি। অধ্যক্ষার অপসারণ এবং স্কুল খোলা— নিজেদের দাবিতে জয়ী হয়েছে দু’পক্ষই। তবে এ দিন রানিকুঠির ওই স্কুলে উপস্থিত পুলিশকর্মী-সহ অনেকেরই পর্যবেক্ষণ, অভিভাবকেরা নিজেরাই যে ভাবে প্রকাশ্যে বচসা, হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছেন, তাতে যে বিষয়ে আন্দোলন চলছিল, তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

G D Birla Sexual harassment জি ডি বিড়লা যৌন নির্যাতন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy