Advertisement
E-Paper

কমেছে জঞ্জালের স্তূপ, ভারী প্রাপ্তির পাল্লা

উত্তরে শ্রদ্ধানন্দ পার্কের পাশ দিয়ে এখন আর নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যেতে হয় না। দক্ষিণে গল্ফগ্রিনে বাসস্ট্যান্ডে নিশ্চিন্তে দাঁড়াতে পারেন মানুষ। বিশ্রামের জন্য তৈরি হওয়া শেডে বসেও থাকা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০০:১৯

উত্তরে শ্রদ্ধানন্দ পার্কের পাশ দিয়ে এখন আর নাকে রুমাল চাপা দিয়ে যেতে হয় না।

দক্ষিণে গল্ফগ্রিনে বাসস্ট্যান্ডে নিশ্চিন্তে দাঁড়াতে পারেন মানুষ। বিশ্রামের জন্য তৈরি হওয়া শেডে বসেও থাকা যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের উত্তর দিকের রাস্তার ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকতে আর কোনও সমস্যা হয় না। রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করতে আপত্তি করেন না চালকেরা।

স্তূপীকৃত জঞ্জালের ছবি তুলতে গেলে চিত্র সাংবাদিকেরা চোখ বন্ধ করে পৌঁছে যেতেন শহরের ওই তিন জায়গায়। এখন সে সব জায়গায় গেলে আর আগের ছবি মেলে না।

গত পাঁচ বছরে শহরের চেহারাটা পুরবোর্ড যে বদলে দিতে পেরেছে ওই তিনটি জায়গাই তার প্রমাণ। ভ্যাটে বসানো কম্প্যাক্টর যন্ত্রই আমূল বদলে দিয়েছে মহানগরীর জঞ্জাল-ছবি।

পুরসভার জঞ্জাল দফতর সূত্রে খবর, বর্তমানে শহরে দৈনিক প্রায় ৪ হাজার মেট্রিক টন জঞ্জাল হয়। এখনও পর্যন্ত ৪৯টি কম্প্যাক্টর মেশিন বসানো হয়েছে। মুভেবল কম্প্যাক্টর গাড়ি রয়েছে ৩৩টি। আরও ৩৮টি কম্প্যাক্টর মেশিন বসানো হবে। বর্তমানে শহরের জঞ্জাল ধাপায় বয়ে নিয়ে যেতে প্রায় ৫০০ ট্রিপ দেয় পুরসভার নিজস্ব এবং ভাড়া করা গাড়ি। কম্প্যাক্টর বসার আগে ট্রিপ আরও বেশি ছিল। তা কমায় পুরসভার ব্যয় কমছে।

তবে এ কাজ শুধু যন্ত্র বসিয়েই হয়নি। মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারের দাবি, আগে শুধুমাত্র সকালে জঞ্জাল তোলা হত। এখন দু’-তিন বার করে জঞ্জাল সাফাই হয়। ১০০ দিনের কর্মীদের কাজ প্রশংসনীয়।

তবে অন্য চিত্রও আছে। যেমন ওয়ার্ড নম্বর ৭২। দক্ষিণ কলকাতার পদ্মপুকুর এলাকা। ‘পুর প্রশ্নের পুরো জবাব’ চেয়ে ওই এলাকার বাসিন্দা ধ্রুব বসু জানিয়েছেন, পদ্মপুকুর স্কোয়ারে আবর্জনা ভর্তি। তার দক্ষিণ পশ্চিম কোণে খোলা ভ্যাট। অনেকে সেখানে প্রস্রাব করেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের কৃষ্ণা নন্দীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর বাড়ি থেকে জানানো হয়, তিনি এ বার মনোনয়ন পাননি। তাই এ নিয়ে কিছু বলবেন না। তবে জঞ্জাল অপসারণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, খুব শীঘ্রই ওই সমস্যা মেটানো হবে।

দীর্ঘদিন ধরে গল্ফগার্ডেন পার্কের কাছেও স্তূপীকৃত জঞ্জাল জমে আছে। চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা অঞ্জন সাহা। তাঁর বক্তব্য, সেখান থেকে গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ দূষিত হয়। আর এক বাসিন্দা এস কে চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গল্ফ ক্লাবের পাশে উদয়শঙ্কর সরণিতে লেকের পাশেই ময়লা ফেলা হয়। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৯৪ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সেতাবুদ্দিন খন্দেকার। তাঁর বক্তব্য, “আমার ওয়ার্ডে নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই হয়।”

দক্ষিণ কলকাতার ৮৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পূরণজিত্‌ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, এলাকার ছোট রাস্তা পরিষ্কার হয় না। খাবারের দোকানের সামনে ময়লা পড়ে থাকে। ‘পুর-প্রশ্নের পুরো জবাবে’-এ কাউন্সিলর তথা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “মূল রাস্তা রোজই পরিষ্কার করা হয়। তবে কোথায় ময়লা আছে, তা নির্দিষ্ট করে জানলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

দক্ষিণের মতো উত্তর কলকাতাতেও ছোটখাটো জঞ্জাল সমস্যার কথা চিঠিতে জানিয়েছেন একাধিক বাসিন্দা। তবে ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুধাংশু শীল নিজেই ওয়ার্ডের একটি সমস্যা জানিয়েছেন। তা হল আহিরীটোলা সর্বজনীন পুজোর কাছে এখনও খোলা ভ্যাট আছে। তা স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদারও। তাঁর জবাব, “এই ভ্যাট ঢাকার পরিকল্পনা হয়েছে।”

১৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জানতে চেয়েছেন ধুলিপাড়ায় বাড়ি বাড়ি জঞ্জাল সংগ্রহ করা হয় না কেন। জঞ্জাল ফেলার জায়গাও অপরিসর। এই সমস্যা নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা বরো অফিসের সামনে বিক্ষোভও দেখিয়েছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলর সিপিএমের বিশ্বনাথ দাস জানান, ওই এলাকায় জঞ্জাল সংগ্রহ এবং অপসারণের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা আছে। পুর-কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও কাজ হয়নি। মেয়র পারিষদের দাবি, “নির্দিষ্ট ভাবে এই ব্যাপারে কোনও স্থানীয় বাসিন্দা, আধিকারিক বা কাউন্সিলর কোনও অভিযোগ জানাননি। যত দূর জানি সঠিক ভাবেই জঞ্জাল অপসারণ করা হয়। তবে অভিযোগ পেলে নিশ্চায়ই দেখব।”

বস্তুত, শহরের বেশির ভাগ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জঞ্জাল জমা নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন বাম-ডান উভয় দলের বেশির ভাগ কাউন্সিলরই। মেয়র পারিষদ দেবব্রতবাবু বলেছেন, “এখনও সবটা করে উঠতে পারিনি ঠিকই। শিয়ালদহ এবং ধর্মতলায় মেট্রো স্টেশনের সামনে কম্প্যাক্টর বসানো হয়নি। মিলিটারি এবং মেট্রোর কাজে জন্য আটকে আছে। তবে আগে শহর জুড়ে জঞ্জালের যে স্তূপ দেখা যেত, তা এখন নেই।”

তথ্য: অনুপ চট্টোপাধ্যায়, কৌশিক ঘোষ ও দেবাশিস দাস।

debashis das anup chattopadhyay kaushik ghosh garbage
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy