Advertisement
E-Paper

আগুনগ্রাসে গড়িয়াহাটও

দমকলের ২০টি ইঞ্জিন প্রায় ১৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রবিবার দুপুরে আগুন আয়ত্তে আনে। 

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯
শনিবার রাতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল গড়িয়াহাট মোড়ের এই বহুতল।

শনিবার রাতে দাউদাউ করে জ্বলে উঠেছিল গড়িয়াহাট মোড়ের এই বহুতল।

বাগড়ি মার্কেটের রেশ কাটতে না কাটতেই তিন মাসের মাথায় ফের শহরের বুকে আগুন। এ বার গড়িয়াহাট মোড়ের বহুতলে। শনিবার রাতে পুড়ে খাক একাধিক দোকান-সহ ফুটপাতের পসরাও। পুড়ে গিয়েছে বেশ কিছু ফ্ল্যাটও। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন প্রায় ১৩ ঘণ্টার চেষ্টায় রবিবার দুপুরে আগুন আয়ত্তে আনে।

দমকল ও পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ গড়িয়াহাট মার্কেটের গুরুদাস ম্যানসনে আগুন লাগার খবর আসে। বহুতলটি চার ভাগে বিভক্ত। এক-এক অংশের এক-এক ঠিকানা। আগুন লাগে ১৬১এ ও ১৬১বি রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের অংশটিতে। আগুন লাগে দু’টি বড় কাপড়ের দোকানেও। আর সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো পাঁচতলা ভবনেই। পড়িমড়ি করে নেমে আসেন বহুতলের আবাসিকেরা। শনিবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, দমকলের অধিকর্তা ও পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। সারা রাত ওখানেই ছিলেন তাঁরা।

আবাসিকদের নিরাপদে নামিয়ে আনা গেলেও বাঁচানো যায়নি রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দিকের দোকান এবং ফুটপাতের উপরে থাকা ডালাগুলি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ফুটপাথের কোণের একটি অংশে প্রথমে আগুন দেখতে পাওয়া যায়। পরে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাকি অংশে। আগুন দেখেই স্থানীয় লোকজন খবর পাঠান দমকলে। খবর যায় কয়েক মিটার দূরেই গড়িয়াহাট থানায়। দমকল আসার আগেই চিৎকার চেঁচামেচি শুনে অনেক আবাসিক রাস্তায় নেমে আসেন। আটকে পড়েছিলেন এক বৃদ্ধা। অসুস্থ, অক্ষম ওই বৃদ্ধাকে কিছুতেই নামানো সম্ভব হচ্ছিল না। পরে দমকল এসে তাঁকে উদ্ধার করে।

১৬১এ রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের দোতলার বাসিন্দা শুভ্রদল ঘোষ বলেন, ‘‘হঠাৎ ‘আগুন-আগুন’ চিৎকার শুনে বারান্দায় বেরিয়ে দেখি নীচের সব আগুনগ্রাসে দোকান দাউ দাউ করে জ্বলছে। দৌড়ে বাবা, মা, দাদু-ঠাকুমা ও বোনকে ঘুম থেকে তুলি। সকলে মিলে কোনও মতে নীচে নেমে আসি।’’
কিন্তু আটকে পড়েছিলেন মুকুল মুস্তাফি, সাত্যকি সাহারা। সাত্যকিবাবু প্রতিবন্ধী। হুইলচেয়ারে ঘোরাফেরা করেন। সঙ্গে থাকেন বয়স্ক কাকা-কাকিমা। সাত্যকিবাবুর কাকা-কাকিমাকে তাঁদের আয়া নামিয়ে আনেন। সাত্যকিবাবুকে নামাতে স্থানীয় লোকজন সাহায্য করেন। একই ভাবে মুকুল মুস্তাফিকেও নামিয়ে আনা হয়।
কিন্তু ফুটপাত জুড়ে প্লাস্টিক আর হোর্ডিংয়ের গেরোয় দমকলকর্মীরা পাইপ নিয়ে আগুনের উৎসে পৌঁছতে হিমশিম খেয়ে যান। অনেক জায়গাতেই হোর্ডিং কেটে দমকলকর্মীদের জল দিতে দেখা গিয়েছে। ৪টে নাগাদ আনা হয় হাই়়ড্রলিক ল্যাডার। তত ক্ষণে আগুন বহুতলের পিছনের অংশেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরু, অপরিসর গলির ভিতরে পাইপ নিয়ে যেতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় দমকলকে। একটা সময়ে জল শেষ হয়ে যাওয়ায় কখন ফের জলের গাড়ি আসবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের। আগুন যাতে আর না ছড়ায়, তার জন্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলের লোকেরা দোকানের শাটার কেটে দেন। দেওয়ালও ভেঙে দেন। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ দমকল ও পুলিশ জানায়, আগুনকে সামনের অংশেই আটকানো গিয়েছে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে রবিবার বেলা ১১টা বেজে যায়। তত ক্ষণে সামনের অংশের প্রায় ১৬টি দোকান পুড়ে ছাই। পুড়ে গিয়েছে আদি ঢাকেশ্বরী, ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলির মতো দোকানের সব কিছুই।
আগুন লাগল কী ভাবে? স্থানীয়দের দাবি, এখানেও বাগড়ি মার্কেটের মতো ফুটপাতের কোনও ডালাতে আগুন লেগেছিল। পাশেই ছিল বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। তাতে আগুন লাগলে সেটি ফাটতে শুরু করে। সেখান থেকেই আগুনের ফুলকি ছড়াতে থাকে বাকি ডালাগুলিতে। যা পরে দোকানের ভিতরে ঢুকে যায়। মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যেই আগুন উঠে যায় পাঁচতলা পর্যন্ত। যদিও ফরেন্সিক বিভাগ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, দোকানের ভিতরেই শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লাগে। সেই আগুন বিদ্যুতের তার বেয়ে বাইরে এসে হকারদের ডালার উপরে চাপানো প্লাস্টিকের ছাউনিতে ধরে যায়। এ ভাবেই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
পরে এই প্লাস্টিকের জঙ্গল নিয়েই ক্ষোভ উগরে দেন আবাসিকরা। বলেন, বাড়িটিকে ঘিরে ‘হকাররাজ’ চলছে। তাঁদের প্লাস্টিকের ছাউনির জন্য বাড়িটি জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। পুরসভা, কাউন্সিলর থেকে শুরু করে গড়িয়াহাট থানাতেও এ বিষয়ে একাধিক বার অভিযোগ করা হয়। কিন্তু লাভ কিছুই হয়নি। যদিও পুলিশের দাবি, আগে অভিযোগ হয়েছে কি না, জানা নেই। প্লাস্টিকের ছাউনি, তারের জট, দাহ্য বস্তু মজুত থাকলেও ওই বহুতল এবং সেখানকার কোনও দোকানেই পর্যাপ্ত অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না বলেই দাবি করেছেন দমকলের অধিকর্তা জগমোহন। দমকল সূত্রেই খবর, দোতলার বারান্দায় জেনারেটর চালানোর জন্য ড্রাম ভর্তি ডিজেল ছিল। তাতেও আগুন ছড়িয়েছে দ্রুত এবং তা আয়ত্তে আনতে বেগ পেতে হয়েছে দমকলকর্মীদের।

Gariahat Gariahat Fire Kolkata Fire Fire
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy