Advertisement
E-Paper

আপাতত ঝড় থেমেছে, জট তবু রয়েই গেল

তাঁর আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেবাল জানান, সিবিআই তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে। কাল, শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। 

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:১১

স্কুল চলছে আগের মতোই। থিতিয়ে গিয়েছে প্রতিবাদের ঝড়ও। অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে ছোট্ট মেয়েটিও। বাবা-মায়ের বক্তব্য, অল্প ব্যথা ছাড়া আর কোনও শারীরিক কষ্ট নেই। বাড়িতে পৌঁছে দেখা গেল, মেঝেতে ছড়ানো একগাদা খেলনা। তুরতুরে পায়ে খেলে বেড়াচ্ছে সে। বাইরে থেকে দেখে টের পাওয়ার উপায় নেই, ক’দিন আগেই তুমুল ঝড় বয়ে গিয়েছে এই মেয়েটির উপর দিয়েই।

ওই শিশুকে ঘিরে চলা উত্তেজনার পরে এখন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরেছে তার স্কুলও। তারই মধ্যে বুধবার ওই শিশুর বাবা স্কুলে নিগ্রহের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা দায়ের করেছেন। তাঁর আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবরেবাল জানান, সিবিআই তদন্তের দাবিও জানানো হয়েছে। কাল, শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছেন অভিযুক্ত দুই শিক্ষক। আগামী ২ জানুয়ারি ফের তাঁদের আদালতে তোলা হবে। তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আসানসোলের চেলিডাঙায় মহম্মদ মফিজুদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দরজায় তালা। স্থানীয় সূত্রের খবর, তাঁর স্ত্রী পুরুলিয়ায় বাপের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। পরিবারের বাকি সদস্যেরা কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে এসে উঠেছেন। বোলপুরের খোদকসমপুর এলাকায় অভিষেক রায়ের বাড়ি। তাঁর পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, তাঁদের আইনজীবী সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে বারণ করেছেন। কিন্তু তাঁদের বিশ্বাস, ছেলে নির্দোষ। ঠিকঠাক তদন্ত হলে সত্যিটা সামনে আসবে।

রানিকুঠির জি ডি বিড়লা স্কুলে এক শিশুর উপরে যৌন নিগ্রহের অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই শহর জুড়ে আছড়ে পড়েছিল প্রতিবাদের ঝড়। রাতারাতি গড়ে উঠেছিল অভিভাবকদের ফোরাম। সাঁটা হয়েছিল পোস্টার। বিবিধ দাবিতে সরব হয়েছিলেন অভিভাবকেরা। এ সবের মধ্যেই কী ভাবে যেন হারিয়ে গিয়েছিল শিশুটির রোজকার জীবন ঠিক কী ভাবে কাটছে, সে কথা। ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পরে নিজের বাড়িতে বসে তার বাবা বললেন, ‘‘এটা সত্যি যে, আমার সন্তানের সঙ্গে যা হয়েছে, তার জন্য স্কুল বন্ধ করে দিয়ে কয়েক হাজার বাচ্চার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়াটা ঠিক নয়।’’ ফলে স্কুল খুলতই। কিন্তু তাঁর অভিযোগ, ‘‘এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে রাজনীতি হল, তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না।’’

ঘটনার পর দিন থেকেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হয়েছিলেন তিনি। অথচ তাঁর দাবি, প্রতিবাদ জানানোর নামে রাতারাতি যে ফোরাম তৈরি হয়েছিল, তা তাঁকে জানিয়ে করা হয়নি। সর্বোপরি, সেই ফোরামেই পরবর্তী সময়ে যে ভাবে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তার সঙ্গে মূল ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনার হাত ধরেই সামনে এসেছে, এত দিন ধরে বিনা অ্যাফিলিয়েশনে চলছে স্কুল। ভর্তির জন্য ডোনেশন হিসেবে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ সব নিয়ে আরও জোরালো প্রতিবাদ হতে পারত। সব চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, প্রিন্সিপালকে অপসারণ পর্যন্ত করা হল না, লম্বা ছুটিতে পাঠানো হল কেবল। তাতেই ‘জয়ী’ হয়ে গেলেন প্রতিবাদীরা!’’

যাঁদের লক্ষ্য করে তাঁর এই কটাক্ষ, সেই অভিভাবক ফোরামের তরফে সঞ্জয় ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযোগকে তাঁরা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি জানান, ফোরাম এখনও সক্রিয় রয়েছে। প্রিন্সিপালকে অপসারণের দাবিও তুলে নেওয়া হয়নি। বহাল রয়েছে নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্যান্য দাবিও। তাঁর কথায়, ‘‘ওই শিশুটির প্রতি আমাদের পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। এই ঘটনাই চোখ খুলে দিয়েছে আমাদের।’’

এই মুহূর্তে কেমন আছে তাঁদের মেয়ে? বাঘাযতীনের বাড়িতে শিশুটির মা বলছিলেন, ‘‘আমরা ওকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ওই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়েছি মেয়েকে। নতুন স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা চলছে। আমরা চাই না সেখানে ওর পরিচয় কোনও ভাবে প্রকাশ পায়।’’

স্কুলে যেতে না পেরে মন খারাপ খুদেরও। বন্ধুদের মিস করছে সে, মিস করছে ম্যামেদেরও। কিন্তু ওই স্কুলে আর যেতে চায় না সে। স্কুলের কথা জিজ্ঞেস করলেই আতঙ্ক ফুটে উঠছে চোখেমুখে। ‘‘ওই স্কুলে আর যাব না,’’ থমথমে গলায় বলেছে মেয়েটি।

শুধু তার নয়, মন খারাপ স্কুলের বহু পড়ুয়ারই। ছোট্ট মেয়েটির এ ভাবে স্কুল ছেড়ে দেওয়া মানতে পারছে না জুনিয়র-সিনিয়র কোনও বিভাগের পড়ুয়ারাই। পাশাপাশি, কবে তদন্ত শেষ হবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই।

GD Birla Sexual Assault Alipore Court জিডি বিড়লা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy