Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Atheist

নাস্তিক অধ্যাপকের পাড়ায় ‘ভূতের উপদ্রব’-এর পোস্টার, জল্পনা

আইএসআই-এর প্রাক্তন এই অধ্যাপক, তাঁর স্ত্রী ও পুত্র— সকলেই ধর্ম ও জাতপাতের ঊর্ধ্বে থাকার মানসিকতায় বিশ্বাসী। তাঁর এ হেন মতাদর্শকে অবশ্য প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বিরূপ নজরেও দেখছেন।

বরাহনগরের বাড়ির সামনে দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

বরাহনগরের বাড়ির সামনে দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫২
Share: Save:

বাড়ির দরজায় সাঁটা একটি কাগজে লেখা, ‘নাস্তিকের আস্তানা’!

না, বাড়ির নাম নয়। এটা বাড়ির সদস্যদের পরিচয়। সেখানে আরও লেখা, ‘পুজোর চাঁদা চেয়ে আমাদের ভাবাবেগে আঘাত করবেন না।’ আসন্ন উৎসবের মরসুমে চাঁদার জুলুম ঠেকাতেই কি এমন ভাবনা? ‘‘সারা বছরই এটা সাঁটা থাকে। কারণ, আমরা ধর্ম বা জাতপাতে বিশ্বাসী নই।’’— বললেন বরাহনগরের জয়নারায়ণ ব্যানার্জি লেনের বাসিন্দা দেবপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। আইএসআই-এর প্রাক্তন এই অধ্যাপক, তাঁর স্ত্রী ও পুত্র— সকলেই ধর্ম ও জাতপাতের ঊর্ধ্বে থাকার মানসিকতায় বিশ্বাসী। এক সময়ে বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্য থাকলেও সম্প্রতি তা ছেড়েছেন ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক দেবপ্রসাদ। কারণ, সেখানে সদস্যদের মধ্যে ধর্মীয় ভাবাবেগের অস্তিত্ব তিনি মানতে পারেননি। তাঁর এ হেন মতাদর্শকে অবশ্য প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বিরূপ নজরেও দেখছেন।

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘হিন্দু ধর্মে নাস্তিকদের ভাল স্থান দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কখনওই অস্বীকার করা হয়নি। আর নাস্তিকের সঙ্গে আস্তিকের সহাবস্থানই কাম্য।’’ কয়েক মাস আগে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় একটি পোস্টার পড়ে। তাতে দেবপ্রসাদের ছবি দিয়ে লেখা হয়, পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ না করায় তাঁর বাড়ির সামনের গলিতে ভূতের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বিষয়টি জেনে অবাক হন দেবপ্রসাদ। বৃহস্পতিবার ‘অনেকান্ত’ বাড়িতে বসে জানালেন, কয়েক মাস আগে পাড়ায় শীতলা পুজো ও গঙ্গার ঘাটে গণ-উপনয়নের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো বা উপনয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলি। আমার বাড়ি লাগোয়া জমিতে প্রোমোটারির পরিকল্পনা চলছে। সেখানে যাতায়াতের রাস্তা মাত্র তিন ফুটের। সেটির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিই। মনে হয়, সেটাও একটা কারণ।’’

বিষয়টিকে ‘পাড়ার উপদ্রব’ বলেই মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই ওঁর উপরে কারও রাগ আছে। কিন্তু সব চেয়ে বিস্ময়কর, এমন বিরক্ত করার লোক এখনও পাড়ায় রয়েছে।’’ মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেলের কথায়, ‘‘প্রত্যেক মানুষের চিন্তার স্বাধীনতা থাকা প্রয়োজন। যে কোনও সুস্থ সমাজে নাস্তিক ও আস্তিকের সহাবস্থান অত্যন্ত জরুরি।’’

তবে দেবপ্রসাদ এটাও বলছেন, ‘‘সকলকে বলি, আপনারা পুজো করছেন করুন। আমায় বিরক্ত করবেন না।’’ যে কোনও সময়ে তাঁর উপরে হামলার আশঙ্কাও প্রকাশ করে প্রৌঢ় বলেন, ‘‘ও সব নিয়ে ভাবি না। আসলে মানুষের মন ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্যই ভূতপ্রেতের আবির্ভাব ঘটানো হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Atheist Professor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE