Advertisement
E-Paper

স্ত্রীকে প্রার্থী করতেও মন্ত্রীকে তদ্বির ‘সমাজসেবী’র

শাসকদলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার সংবাদ নতুন নয়। এখন জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে তার মাখামাখি এমনই পর্যায়ে যে, এ বারের পুরভোটে নিজের স্ত্রীকে দাঁড় করাতে দলীয় নেতৃত্বের কাছে দরবার পর্যন্ত করেছিল গোপাল তিওয়ারি! গিরিশ পার্ক-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হিসেবে গোপালের নাম উঠে এসেছে। আপাতত সে বেপাত্তা। পুলিশ সূত্রের খবর, মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার সুপারিশের ভিত্তিতে গোপাল ‘সমাজসেবী’ পরিচয় নিয়ে একাধিক মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল, স্ত্রীর নামে টিকিট বরাদ্দের আর্জি জানাতে। যদিও তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এক জন ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, গোপালকে তিনি পত্রপাঠ বিদায় করে দিয়েছিলেন। এখন গোপালকে নিয়ে তোলপাড় হওয়ায় তিনি দলীয় নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়ে রেখেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২০
গোপাল তিওয়ারি

গোপাল তিওয়ারি

শাসকদলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার সংবাদ নতুন নয়। এখন জানা যাচ্ছে, তৃণমূলের একাংশের সঙ্গে তার মাখামাখি এমনই পর্যায়ে যে, এ বারের পুরভোটে নিজের স্ত্রীকে দাঁড় করাতে দলীয় নেতৃত্বের কাছে দরবার পর্যন্ত করেছিল গোপাল তিওয়ারি!

গিরিশ পার্ক-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত হিসেবে গোপালের নাম উঠে এসেছে। আপাতত সে বেপাত্তা। পুলিশ সূত্রের খবর, মধ্য কলকাতার এক তৃণমূল নেতার সুপারিশের ভিত্তিতে গোপাল ‘সমাজসেবী’ পরিচয় নিয়ে একাধিক মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল, স্ত্রীর নামে টিকিট বরাদ্দের আর্জি জানাতে। যদিও তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের এক জন ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, গোপালকে তিনি পত্রপাঠ বিদায় করে দিয়েছিলেন। এখন গোপালকে নিয়ে তোলপাড় হওয়ায় তিনি দলীয় নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়ে রেখেছেন।

পুলিশের একাংশের ইঙ্গিত, এ ভাবে যে আশাহত হতে হবে, গোপাল তা ভাবেনি। মধ্য কলকাতার এক থানার এক সাব ইন্সপেক্টরের কথায়, ‘‘গোপাল নিজেই থানায় এসে বলে গিয়েছিল, ওর স্ত্রীর টিকিট পাকা। আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিল, ওর হাত কত লম্বা।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, এ সব করে গোপাল পুলিশের কিছু মহলে নিজের ওজনটা বাড়িয়ে নেয়।

বস্তুত পুলিশ ও শাসকদলের একাংশের সঙ্গে গোপালের মাত্রাছাড়া গা ঘেঁষাঘেঁষি-ই তাকে জালে ফেলার পথে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে বুধবার আক্ষেপ করেছেন লালবাজারের একটি সূত্র। তাঁর ধারণা, পুলিশি গতিবিধির সব খবর থানা থেকেই গোপালের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে!

এমন ধারণার কারণ কী?

লালবাজার সূত্রে খবর, গিরিশ পার্ক-কাণ্ডের তদন্তকারীরা মঙ্গলবার দপুরে খবর পান, গোপাল রাতে পাথুরিয়াঘাটার বাড়িতে আসবে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। গোয়েন্দারা সেই মতো টিম গড়ে তক্কে তক্কে ছিলেন। কিন্তু গোপালের নাগাল মেলেনি। লালবাজারের ইঙ্গিত, পুলিশি অভিযানের আগাম খবর পুলিশেরই ভিতর থেকে গোপালের কাছে পৌঁছে যায়। গোপাল-ঘনিষ্ঠ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলেও এই ধারণার সমর্থন মিলেছে বলে তদন্তকারী-সূত্রের দাবি।

লালবাজারের এক অফিসার-সহ কলকাতা পুলিশের একাংশের সঙ্গে গোপালের দহরম-মহরমের ‘নমুনা’ শনিবার রাতেই দেখেছিলেন গোয়েন্দা কর্তারা।

কী রকম? সাব ইন্সপেক্টর জগন্নাথ মণ্ডল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরে তাঁরা তদন্তে নেমে জানতে পারেন, তৃণমূলের হয়ে ওই তল্লাটে ‘ভোট করানোর’ দায়িত্ব ছিল গোপালের উপরে, এবং তারই দলবল পুলিশকে গুলি করেছে। গোপালের চার সঙ্গীকে ধরা হয়। তার পরেই গোল বাঁধে। তদন্তকারীরা বলছেন, গুণ্ডাদমন শাখার এক অফিসার গোয়েন্দাদের তখন বোঝানোর চেষ্টা করেন, গোপাল এখানে জড়িত নয়। এ নিয়ে দু’তরফে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডাও হয়।

পুলিশের একাংশের মধ্যে গোপাল তিওয়ারির প্রতিপত্তির ইঙ্গিত অবশ্য এর আগেও লালবাজার পেয়েছে। সূত্রের খবর, বড়বাজারে এক চায়ের দোকানিকে গুলি করার সেই ঘটনার পরে প্রায় চার বছর গোপাল গা ঢাকা দিয়ে ছিল পুলিশেরই কারও কারও মদতে। প্রসঙ্গত, ওই মামলাতেই গোপাল জামিনে মুক্ত ছিল।

পাশাপাশি গোপালের পিছনে শাসকদলের নেতাদের একাংশের প্রচ্ছন্ন মদত কলকাতা পুলিশের কিছু কর্তাকে চিন্তায় ফেলেছে। কারণ হিসেবে লালবাজারের ওই অংশের ব্যাখ্যা: গিরিশ পার্ক-কাণ্ডে ধৃত দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মধ্য কলকাতার তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর ছবি ইতিমধ্যে হাতে এসেছে। আর একটি ছবিতে গোপালের সঙ্গে এক মঞ্চে দেখা যাচ্ছে সঞ্জয়বাবু ও রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। সংশ্লিষ্ট নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য গোপাল-সংশ্রবের কথা অস্বীকার করেছেন। যদিও এক গোয়েন্দা-অফিসারের মন্তব্য, ‘‘এতেই প্রমাণিত, বছর দুয়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গোপাল ফের শাসকদলের কতটা স্নেহধন্য হয়ে উঠেছিল। না-হলে ওই মঞ্চে তার ঠাঁই পাওয়ারই তো কথা নয়!’’

পুলিশের অন্দরের খবর, জেল থেকে বেরিয়ে শাসকদলের খাতায় নাম লিখিয়ে গোপাল জোড়াবাগান, জোড়াসাঁকো, বড়বাজার, পোস্তা-সহ মধ্য ও উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রোমোটিং ব্যবসায় নামে। মূলত সে বিভিন্ন পুরনো বাড়ি জবরদস্তি কব্জা করে সেখানে প্রোমোটিং করছিল। পাশাপাশি মধ্য কলকাতায় বেটিং চক্রও চালাত। এক পুলিশ-কর্তার কথায়, ‘‘ওই তল্লাটে তোলাবাজিতেও গোপাল এক নম্বর হয়ে উঠেছিল। রুলিং পার্টির আশীর্বাদ থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি।’’

পুরভোটে সে কী ভূমিকা নেয়?

তদন্তকারী-সূত্রের দাবি, ভোটের আগের দিন জোড়াবাগানের এক গোপন ডেরায় গোপাল জনা কুড়ি দুষ্কৃতীকে নিয়ে বৈঠক করে। সেখানে স্থির হয়, ভোটের দিন সন্ত্রাস সৃষ্টিতে বাধা পেলে বোমাবাজি করা হবে। তবে গুলি চালানোর কোনও ‘নির্দেশ’ আগে থেকে দেওয়া হয়নি বলে ধৃতেরা জেরায় কবুল করেছে।

ধৃতদের মুখে পুলিশ এ-ও জানতে পেরেছে, ভোটের দিন অর্থাৎ শনিবার সকালে গোপাল নিজে ‘বাহিনী’র প্রত্যেকের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। গিরিশ পার্কের সিংঘিবাগানে সকাল থেকে গোলমাল চলছিল। গোড়ায় পুলিশ তেমন গা না-ঘামালেও বিকেলের দিকে কিছুটা সক্রিয় হয়। আর তখনই গুলিবিদ্ধ হন এসআই জগন্নাথবাবু।

ফেরার গোপালের হদিস পেতে তার মোবাইলের কল লিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এ দিন জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ।

Gopal Tiwari TMC trinamool police girish park social worker mamata bandopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy