Advertisement
E-Paper

হাসপাতালের রবিবার, ছুটি নয় শুধু জ্বরের

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শনিবার দুপুরের পরে সরকারি ল্যাবের অধিকাংশ কাজ বন্ধ থাকে। সোমবার ফের শুরু হয়। ফলে অসংখ্য রোগীর ডেঙ্গি পরীক্ষা আটকে থাকে।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫৭
জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুর মাথায় ঠান্ডা সেঁক দিচ্ছেন মা। চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে। ছবি: সুমন বল্লভ

জ্বরে আক্রান্ত এক শিশুর মাথায় ঠান্ডা সেঁক দিচ্ছেন মা। চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে। ছবি: সুমন বল্লভ

রবিবার ছুটির দিন। জ্বর হওয়ার যেন অনুমতি নেই। জ্বর যদি হয়েও থাকে, তবে মাথা পেতে সইতেই হবে ভোগান্তি!

কোথাও জরুরি বিভাগে কর্মীর অভাবে একরত্তি মেয়েকে জ্বর এবং বমির উপসর্গ নিয়ে বাবার কোলে চিকিৎসার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে, আবার কোথাও পুর ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকায় ছুটতে হচ্ছে অন্যত্র। কারণ, রবিবার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার কার্যত ছুটিই থাকে। বন্ধ থাকে আউটডোর। জরুরি বিভাগেও কর্মী থাকেন হাতে গোনা। সরকারি ল্যাবেও সব পরীক্ষা হয় না। কলকাতা পুরসভার সব পুর ক্লিনিকে চিকিৎসকও থাকেন না। কিন্তু জ্বরের ছুটি নেই। তার দাপটে কাবু হচ্ছে শহর থেকে শহরতলি। তাই ডেঙ্গির মরসুমে ছুটির দিনে রোগীর ভোগান্তি বাড়ছেই।

এ দিন যেমন চিত্তরঞ্জন শিশু সদনে গিয়ে দেখা গেল, মেয়েকে ভর্তির অপেক্ষায় দাঁড়িয়েই বাটানগর থেকে আসা মহম্মদ আমিদ। শুক্রবার থেকে আমিদের একরত্তি মেয়েটা জ্বর এবং বমি নিয়ে ভুগছে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দক্ষিণ কলকাতার ওই হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। আমিদ জানান, হাসপাতাল থেকে সাফ বলে দেওয়া হয়েছে রবিবার বেশি কর্মী থাকেন না। তার উপরে জ্বরের রোগীর চাপ বেশ। তাই ভর্তি হতে সময় লাগবে।

উল্টোডাঙার সবিতা সাহার ওয়ার্ডের পুর ক্লিনিকে আবার রবিবার বলে চিকিৎসক আসেননি। তাই তাঁকে ছুটতে হয়েছে অন্য ওয়ার্ডের ক্লিনিকে। রক্ত পরীক্ষা করাতে আবার ফিরতে হয় নিজের ওয়ার্ডে। কারণ রোগী যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তাঁর রক্ত পরীক্ষা করতে হবে সে ওয়ার্ডেই। সব পুর ক্লিনিকে আবার ডেঙ্গির পরীক্ষা হয় না। কোথায় গেলে সব পরিষেবা মিলবে, তা নিয়ে নিত্য হয়রানি চলছেই। হাতিবাগানের একটি পুর ক্লিনিকের কর্মী যেমন বলেন, ‘‘ছুটির দিনে সব জায়গায় চিকিৎসক থাকেন না। যেখানে চিকিৎসক আছেন, সেই সব ক্লিনিকে বাড়তি চাপ হচ্ছে। আমাদেরও চাপ বাড়ছে, রোগীদেরও হয়রানি হচ্ছে। কিন্তু আজ ছুটির দিন, তাই কিছু করার নেই।’’

সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শনিবার দুপুরের পরে সরকারি ল্যাবের অধিকাংশ কাজ বন্ধ থাকে। সোমবার ফের শুরু হয়। ফলে অসংখ্য রোগীর ডেঙ্গি পরীক্ষা আটকে থাকে। এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে সরকারি ল্যাবগুলির জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা দরকার। রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত হাতে পেলে চিকিৎসায় সুবিধা হয়। প্লেটলেট কতটা নেমেছে, তার সঠিক হিসাব না থাকলে রোগীর অবস্থা বোঝা মুশকিল।’’ তার উপরে পুর ক্লিনিকগুলিতে ডেঙ্গির র‌্যাপিড টেস্ট না হওয়ায় এ বার ভোগান্তি আরও বাড়ছে বলে জানান তিনি। আর এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘গত বছর পুর ক্লিনিকগুলি র‌্যাপিড টেস্ট চালু করেছিল। এ বছর অধিকাংশ জায়গায় সে সব হচ্ছে না। তাই বিপদ বাড়ছে।’’

যদিও স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘ডেঙ্গি পরীক্ষার জন্য রাজ্যে ৩২টি স্বীকৃত সেন্টার তৈরি হয়েছে। রোজই সেখানে কাজ চলে। ২০১১ সালে মাত্র তিনটি সেন্টার ছিল। রোগী পরিষেবার কথা মাথায় রেখে সেন্টারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।’’ কিন্তু সাধারণ মানুষ কি আলাদা ভাবে ওই ল্যাবের গুরুত্ব বোঝেন? অধিকাংশ রোগী জ্বর হলে হাসপাতালের ল্যাবে পৌঁছন। তাঁদের ঠিক জায়গায় পাঠানোর দায়িত্ব কাদের? এর অবশ্য উত্তর মেলেনি।

জরুরি বিভাগে ফিভার ক্লিনিক থাকা দরকার বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। যে হারে জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তি বাড়ছে, সামাল দিতে ছুটির দিনে বাড়তি কর্মী থাকার নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন বলে তাঁদের মত। তাঁরা জানাচ্ছেন, ফি বছর আউটডোরে ফিভার ক্লিনিক থাকে। এ বার সেটা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সেটা থাকলে অনেক সুবিধে হয়।

এ দিন বেহালার একাধিক রাস্তায় ডেঙ্গি-সচেতনতা কর্মসূচিতে নেমেছিলেন কলকাতা মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে শোভনবাবু বলেন, ‘‘ডেঙ্গি মোকাবিলায় পরিকাঠামোর অভাব নেই। যে কোনও মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু ডেঙ্গি নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে।’’

চিকিৎসকদের একাংশের অবশ্য দাবি, প্রশাসন ডেঙ্গি পরিস্থিতি অস্বীকার করায় বাড়ছে সমস্যা। আশঙ্কা, এমন চললে ভুগতে হবে আগামী বছরেও।

Dengue Malaria Mosquitoes fever Water pollution
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy