Advertisement
০২ মে ২০২৪

সরকারি হোম থেকেও অবাধেই বেরোন নির্যাতিতা

রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সোনারপুরের মালঞ্চ মোড় থেকে পাকা রাস্তা শেষ হয়ে মাটির পথ চলে গিয়েছে খানিকটা ফাঁকা জায়গার দিকে। সেখানেই ওই হোমের চারতলা নিবেদিতা ভবন।

এই সরকারি হোমেই প্রথমে রাখা হয়েছিল অভিযোগকারিণীকে। পরে এখান থেকেও বেরিয়ে যান তিনি। নিজস্ব চিত্র

এই সরকারি হোমেই প্রথমে রাখা হয়েছিল অভিযোগকারিণীকে। পরে এখান থেকেও বেরিয়ে যান তিনি। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৭
Share: Save:

গণধর্ষণের অভিযোগকারিণীকে নিয়ে গিয়ে রাখা হয়েছিল ভবঘুরেদের সরকারি হোমে। অথচ, সেখানে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ। নিজেদের মতো করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেনি স্থানীয় থানাও। কখন সেখান থেকে অভিযোগকারিণী বেরিয়ে গিয়েছিলেন, হিসেব ছিল না তারও। কোনও নিখোঁজ-ডায়েরি করা হয়নি স্থানীয় থানায়। পঞ্চসায়রে গণধর্ষণের অভিযোগের তদন্তে তাই হঠাৎ করেই চর্চায় উঠে এসেছে জাতীয় নগর জীবিকা মিশন প্রকল্পের অধীনে তৈরি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ওই হোমটি।

গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হওয়ার পাঁচ দিন পরে, শনিবার হঠাৎ করেই কলকাতা পুলিশ এই তথ্য সামনে এনেছে যে, পঞ্চসায়র থানায় গণধর্ষণের মামলা দায়ের হওয়ার আগেই ওই মহিলাকে ঘিরে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল নরেন্দ্রপুর থানায়। তার পরেই পুলিশ তাঁকে ওই ভবঘুরেদের হোমে নিয়ে গিয়ে রাখে। তবে সেখান থেকেও মহিলা বেরিয়ে যান বলে ওই হোম কর্তৃপক্ষের দাবি।

রবিবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল, সোনারপুরের মালঞ্চ মোড় থেকে পাকা রাস্তা শেষ হয়ে মাটির পথ চলে গিয়েছে খানিকটা ফাঁকা জায়গার দিকে। সেখানেই ওই হোমের চারতলা নিবেদিতা ভবন। সদর দরজা সর্বক্ষণ খোলা। কোনও নিরাপত্তাকর্মী বা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা নেই। হোমের কর্মী আরতি রায় জানান, গত মঙ্গলবার ভোরে তাঁদের হোমে ওই মহিলাকে দিয়ে গিয়েছিল নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ। প্রতিদিন সকাল ন’টা নাগাদ হোমে কাজে আসেন তিনি। সে দিন এসে দেখেন, হোমের ভবনে হুলস্থুল চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই মহিলা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন যে, এখানকার বাকি মহিলাদের কারও সঙ্গেই তিনি থাকতে চাইছিলেন না। তাই বারান্দায় গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কোনও মতে বুঝিয়ে তাঁকে নীচে নিয়ে আসা হয়।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মহিলার পরনের হলদে রঙের নাইটিটি পিছনের দিক থেকে সম্পূর্ণ ছেঁড়া ছিল। রক্ত জমাট বেঁধে ছিল নাকের কাছে। মহিলাকে শান্ত করার চেষ্টা করতেই তিনি বলে ওঠেন, ‘ওরা আমার অন্তর্বাস খুলে নিয়েছে। খুব মেরেছে।’ এত খারাপ লাগছিল, আর কথা এগোতে পারিনি।’’

আরতি জানান, এর পরে হোমে রাখা একটি লাল রঙের গাউন মহিলাকে পরতে দেন তিনি। তবে ছেঁড়া নাইটিটি কাছ ছাড়া করতে চাননি মহিলা। হোমের দেওয়ালে লাগানো একটি জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে জানান, সেটা তিনি সঙ্গে রাখতে চান। দুপুরে হোমে খাওয়ার ব্যবস্থা হয় মহিলার। তবে তিনি এর পরে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে দুপুর দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে মহিলা হোম থেকে বেরিয়ে যান বলে আরতির দাবি। এর পরেও অবশ্য স্থানীয় সোনারপুর থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করা হয়নি।

সরকারি হোম থেকে গণধর্ষণের অভিযোগকারিণী বেরিয়ে গেলেন, অথচ কোনও ব্যবস্থা হল না? বারুইপুর জেলা পুলিশের সুপার রশিদ মুনির খান বলেন, ‘‘ওটা সরকারি হোম। সেখানে হোমেরই নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন। থানা কেন আলাদা করে পুলিশ রাখবে? তা ছাড়া, রাতেই তো পঞ্চসায়র থানা জানায়, মহিলাকে পাওয়া গিয়েছে।’’ রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাসের যুক্তি, ‘‘ওটা ভবঘুরেদের হোম। ওখানে গেটে তালা লাগিয়ে রাখা হয় না। মহিলা বেরিয়ে যাওয়ায় খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Gangrape Government Rehab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE